দিলো রে দিলো। সব চুলগুলো কেটে দিলো। ব্যাপারটা আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারিনি। অনেক দিন ধরেই মন কষাকষি, মারামারি , আজ নয় কাল চলছিল। কিন্তু তোমরা এরকম করে আমায় টাকলু করে দেবে সেটা
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
বেশ কয়েকদিন
ধরেই আমার খুব ঠান্ডা লাগছিল । মানে যাকে বলে, রানিং নোস। মানে একেবারে ভরভরে। নাক আমার বেশ কিছুদিন থেকেই বন্ধ। কোথা থেকে যে এই ট্রান্সপারেন্ট সেমি সলিড
আমার নাকের মধ্যে এসে জমা হয় বলতে পারিনা বাবু।
মাঝে মাঝেই দুধ খাওয়ার সময় আউট অফ ব্রিদ হয়ে যাই। তখন দুধের বোতল ঠেলে সরিয়ে, প্রাণ ভরে, মুখ হাঁ
করে নিঃস্বাস নিতে হয়। সেই নিস্বাসে যে কি
শান্তি সে আর বলতে। একটু গ্রামাটিকালি গন্ডগোল হয়ে গেলো বটে। ওটা প্রস্বাস। নিশ্বাস মানে যেটা ছাড়া হয়। সমস্যা যদিও সেটাতেও। তখন আবার দম ছাড়তে গেলে প্রচন্ড এক চাপ দিতে হয়। যদিও ইনভিসিবল নিস্বাসের সাথে ভিসিবল পোঁটা থ্যাক
করে বেরিয়ে আসে। দৃশ্যদূষণ হতে পারে বটে কিন্তু
আমার কিছু করার নেই , আগে হেলথ তারপর এটিকেট।
নাক থেকে এগুলো
বেরিয়ে এসে আমায় মুক্তি দেয়না। মা বা বাবা
যদি কাছে না থাকে তাহলে সেগুলো আবার আটকে যায় গালে। হাত দিয়ে ঘষে দিলে মাঝে মঝে আবার চুলেও আটকে যায়। সেগুলো শুকিয়ে আবার সাদা হয়ে যায়। আমার এই সাদা চামড়ায় আরো সাদা হয়ে নুনের ড্যালার
মতো দেখতে লেগে। আমি চেটেও দেখেছি , বেশ নোনতা
নোনতা। যাইহোক। দ্যাটস নট দা পয়েন্ট। মুদ্দাটা হলো এই সর্দি হওয়া নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে
ঝগড়া।
মায়ের মতে,
আমার চুল বড় হয়ে গেছে তাই স্নানের জল শুকোতে
সময় লাগে। সেই ঠান্ডা জমে নাকি আমার সর্দি
হয়। আমি ভাবলাম ইট মে বি এ কস। যখন এই সর্দি বেরোয় তার কিছুদিন আগে থেকে বেশ ঠান্ডা
লাগতে আরম্ভ করে বটে । কিন্তু বাবা তো ইন্টারনেট
, সব কিছুর একটা পাল্টা উত্তর রেডি। বাবার
মতে এই শুকনো ওয়েদারে সর্দি গর্মি হয় না। বাবার নাকি এখানে কখনো ঠান্ডা লাগেনি। ভারী আমার ভীমসেন। নিজেকে জাহির করার একটা সুযোগও ছাড়ে না। কিন্তু এই ব্যাপারে আমার মন যেন বাবাকে সায় দিলো।
আসলে এই সুন্দর কার্তিকের মতো চুলের বদনাম ঠিক ভালো লাগে না।
চুল কিন্তু
আমার একদম জব্বর। এক কালে প্রশ্ন উঠেছিল চুলটা
ঠিক কার বাড়ির মতো হবে। মায়ের বাড়ির মতো না
বাবার বাড়ির মতো খোঁচা খোঁচা। কিন্তু আমি তো
আমার মতো। তাই শেষমেশ আমার নিজের মতোই লম্বা
লম্বা কোঁকড়ানো সুন্দর চুল হয়েছিল আমার। এই
একটা জিনিসে বাবা মার্ দুজনার ঝগড়া কয়েকদিন রোকা গেছে। কারো দিকে হেললেই সমস্যা। সবাই আমাকে তাদের বাবার সম্পত্তি মনে করবে। কিন্তু টেকনিক্যালি আমি যখন নিজের বাবারিই সম্পত্তি
নই তখন কারোকে স্বত্ব দিতে আমার বিশেষ মন বা মানসিকতা নেই।
যাইহোক কাম
ব্যাক টু চুল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সমস্ত মানুষের
মতে , এই চুল আমার কিউটনেস বা বিউটি কে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছিলো । হবে না কেন।
আমার দেশে তো সবাই টাকলা। ইভেন মা,
যার নাকি পাছা ছাড়ানো চুল ছিল, সেও তো রিঠা, শিকাকাই, দেশি বিদেশী , একটিভ ভিটামিন
প্রো ভি সব কিছু চেষ্টা করেও প্রতি সপ্তাহে বাথটব থেকে মুঠো মুঠো চুল বার করতো। সেই
আকালের দেশে আমার সুরক্ষিত কালে মেরে বাল
, নানা এটা ভ্যাসমলের কেরামতি না, অন্দরুনি তাকত। এই সেই চুল যেটা আমি পেটের ভেতর থেকে
নিয়ে এসেছি । টেকনিক্যালি এটা শুধু আমার আর
মায়ের ক্রেডিট। মা বলে এই দুটো চুল নাকি প্রায়
চার পাঁচ ঘন্টা আগে থেকে দেখা যাচ্ছিলো যখন আমি বেরোয়নি। সে থাক।
চুল আমার মসৃণ এবং এট্রাক্টিভ। যখন
আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেলো। তখন এক এক সময় আমাকে
এক একজন সেলিব্রেটির মতো দেখতে লাগলো। যখন
স্নান করতাম তখন বাবা বলতো মোগলির মতো লাগছে।
যখন মা চুল শুকোতো তখন মায়ের ব্লোয়ারের সামনে বসে থাকলে বলতো টম ক্রুসের মতো চুল। কিন্তু আঁচড়ে দিলে বলতো "একেবারে চুমকু সোনা
লাগছে। " কি বিচ্ছিরি নাম। চুমকু ? চুমকু
মানে কি। তীব্র আপত্তি পাত্তা পায়নি। কিন্তু আমার মোটেও ভালো লাগতো না উপমাটা।
তবে আমাকে
প্রশ্ন করলে আমি বলতাম আমার চুল মেঘের মতো।
দেখো ছোট চুলে স্টাইল হয় না। স্টাইল
করতে গেলে চুল বড় করতেই হয়। ছোট চুলের একটাই
স্টাইল - বাধ্যতা। উকুন , ড্যানড্রাফ আর গরমের জ্বালায় এই স্টাইলের উৎপত্তি। আর আমি মনে করি ওটা চোরেদের স্টাইল।
ধরতে যাতে না পারা যায় তার জন্য এই স্টাইল। আমি চোর নই, তবু মাঝে মাঝেই যখন
আমি কিছু ভেঙে ফেলি তখন মা বলে চোর চোর তাকাচ্ছি।
চোর কি করে তাকায় সেটা তুমি কি করে জানলে বাপু। একবার যদি চোর চোর কোথাও সাউন্ড পাও , তাহলে তো
আমার থেকেও সিলি মুখ করে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলো।
জবরদস্তি আমাকে চোর বানিয়ে চোর স্টাইল চুল কেটে দেওয়া, আনবিলিভেবল ঔদ্ধত্য।
আমাদের বেডরুমে বেশ কয়েকটা ছবি আছে। তার মধ্যে একজনের সঙ্গে আমার চুলের হেবি ম্যাচ। আমি অনেকবার তাকে ছুঁতে গেছি। কিন্তু মা বাবা শকুনেরও
অধম। সব সময় ছোঁ মেরে আমাকে তুলে নিয়ে বলে
"নো এটাক"। ওটা আমাদের ইষ্টদেবতা। হোয়াট ইস ইষ্ট ? ওটা তো কেষ্ট বা কিন্ন। আমার সেই কিন্নর মতো চুল। এই তো সেদিন নিউ ইয়র্ক গেছিলাম। সে গল্প পরে শোনাবো। সেখানে গিয়ে আমার চুলের আসল মহিমা বুঝতে পারলাম। যখন খুব হাওয়া দেয় তখন চুল কি সুন্দর ওড়ে। আর কানের কাছে আর মাথার ওপর কিরকম সুড়সুড়ি লাগে। বাবা আবার সুড়সুড়ি চ্যাম্পিয়ন। ঠিক বোঝে কোন জায়গায় আঙ্গুল বোলালে সুড়সুড়ি ভালো
লাগে। সবাই যখন সুড়সুড়ি দেয় তখন সারা মাথায় হাত ঘষতে থাকে। সেটা রাইট এপ্রোচ নয়। জার্নি শুড স্টার্ট ফ্রম প্লেন ল্যান্ড, এন্ড হোয়েন
ল্যান্ড মিটস দা মাউন্টেন ,দেন অনলি হ্যাপিনেস কামস। আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে কাঁধ থেকে চুল পর্যন্ত তুলে নিয়ে
যেতে হবে। তখনি আসবে ঘুমের আমেজ। এই ব্যাপারে বাবাকে থ্যাঙ্কস। হি অলোয়েস ডাস ইট রাইট।
বাবার তীব্র
লজিকাল আপত্তিও যখন পাত্তা পেলো না। তখন বাবা
আরো লজিক ইমপ্লিমেন্ট করে বললো যে আঠারো মাস না হলে চুল কাটতে নেই। মা সেই একরোখা বাঘিনী। বাবাও নাছোড়বান্দা। তোমারও নয় আমারও নয় , বেজোড় মাসে কাটতে হয়। বাবা ওয়াস ট্রাইং টু বায় সাম টাইম। এটা বাবার চিরাচরিত টেকনিক। বাবার মতে একটু সময় কিনে নিতে পারলে, পরে টপ আপ
করতে বেশি খাটতে হয় না। কিন্তু মা সুগার হিম
বোন টু বোন। মা বললো তাহলে কোনটা ক্যালকুলেট
করতে হবে - কমপ্লিটেড না অনগোয়িং। মানে আমি
চোদ্দ মাস কমপ্লিট করেছি আর পনেরো মাস চলছে।
বাবা এই যুক্তিতে চুপ। আর কোনো ট্যাঁ
ফোঁ নেই।
দিনটা এসে
গেলো। আমার কোনো আইডিয়া ছিল না। গত সপ্তাহ
থেকে কোথাও একটা যাওয়ার প্ল্যান হচ্ছিলো। কোনো
একটা জায়গা, যেখানে নাকি আমি আগে গেছি কিন্তু আবার যাওয়া যাবে। আমার আর কি আমার ঘুরতে যেতেই ভালো লাগে। বেশ লাগে।
তাই সবাই জামাকাপড় পড়লেই আমার হৃদয় নেচে ওঠে। আমি তো ম্যান, আমার মধ্যে অতো জটিলতা নেই। আমি ভাবলাম সবাই যখন বেশ সুন্দর জামা কাপড় পরে নিয়েছে
তাহলে আমরা শেষমেশ ঘুরতে যাচ্ছি। বিশাল উত্তেজনা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলতে লাগলো আর নিমেষের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
বেশিক্ষন হয়নি
হঠাৎ কোমরের কাছে টানাটানি হতে বুঝলাম ডেস্টিনেশন রিচড। আমি নরমালি ঘুম থেকে উঠে একটু
আড়মুড়ি ভাঙি কিন্তু যেহেতু এন্টারটেইনমেন্ট ইস দা প্রায়োরিটি তাই আমিও সজাগ এবং উত্তেজিত
হয়ে গাড়ি থেকে নেমে দেখি ভোঁ ভাঁ। একটা ফাঁকা
পার্কিংলটে দাঁড়িয়ে আছি। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
বাবা মা কে ফলো করতে লাগলাম। মা একটা দোকানে
গিয়ে ঢুকলো। আমার ব্যাপারটা ঠিক ভালো ঠেকলো
না। সিক্সথ সেন্স বলে তো একটা জিনিস আছে। সেটা আবার আমার একটু বেশি স্ট্রং। কিন্তু পিছু তো ফেরা যাবে না। তাই বাবার হাত ধরে ঢুকে পড়লাম দোকানটাতে।
বেশ মজাদার
দোকানটা। নানা রঙ দিয়ে সাজানো একটা জঙ্গল টাইপের।
মজাদার সব গান বাজচ্ছে। কোথাও বাঁদরের
ছবি, কোথাও জিরাফের। উঁচু নিচু সব খেলার জায়গা। তার মাঝে এক দুজন আবার বসে আছে। আর চুল কাটছে।
ও হরি। তারমানে এবার আমারও ঘ্যাচাং
ফু। ডুকরে কেঁদে উঠতে আমার থেকে এক হাত লম্বা একটা ছেলে এসে কিরকম লম্ফো
ঝম্প করতে লাগলো। আর আমার সাথে টুকি টুকি খেলতে
লাগলো। আমার বেশ মজা লেগে গেলো। এই টুকি টুকি খেলাটা হেব্বি মজাদার। এখানে আবার বলে পিক এ বু। নতুন শিখেছি তাই সবার সাথে খেলতে বেশ মজা লাগে। কিন্তু মাঝখানে আমায় থামিয়ে বাবা কোলে তুলে নিয়ে
গিয়ে বসিয়ে দিলো চেয়ারে।
বসানোর সাথে
সাথে একটা মহিলা এসে হাজির হলো। আমার সাথে
বেশ কিছুক্ষন হাসি হাসি মুখ করে অনেক কিছু খেলার চেষ্টা করলো, হুইচ ইস সিম্পলি বোরিং।
তারপর একটা মেশিন বার করতেই আমি ব্যাপারটা বুঝে গেলাম। তারপর শুরু হলো স্ট্রাগল আর ডিফেন্স। কিন্তু বিভীষণের জন্যে রাবণকেও হার মানতে হয়েছিল। মা ধরলো দুটো হাত , বাবা ধরলো থুতনি। আমি নট নড়ন ,নট চরণ। আর কি বলি।
আমার সুন্দর চুল , নিমেষে ভূমিতে মিশে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই মাথা হালকা। এর মধ্যে আবার ঢং করে ছবি তুলে সেটা আবার প্রিন্ট
করা হলো। ফার্স্ট হেয়ারকাট। তারপর সেটাকে আবার একটা কার্ডের মধ্যে রেখে বাবাকে
দিয়ে দিলো।
বাবা , সেই
বাবা ,যে আমার চুলের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছিলো , সেইই বিস্বাসঘাতকতা করলো। মানছি পুরুষ মানুষদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। কিন্তু তারপর ন্যাকামো করতে তো কেউ বলেনি। চুল কাটার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো , "কি সুন্দর
লাগছে। আমার নেরুদা। আমার ছোট্ট টিবেটান মংক, আমার ওল্ড মংক। "
আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না, ওই ন্যাকামোগুলো। নেরু , টাকলা , গাঞ্জা এসব এবার আমায়
শুনতে হবে। আদো আদো গলায় বললেই সবকিছু কিউট
আর একসেপ্টেড হয় না। দোস সাউন্ডস এস ইরিটেটিং এস ইট ফিলস। কিন্তু কিছু করার নেই। দুর্ঘটনা ঘটার পর যদি সেটা মেনে না নেওয়া যায় তাহলে
বুকের রক্ত গলায় উঠে যায়। সেটা আর নামতে চায়
না। আমার তখন রাগে, ক্ষোভে মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। কিন্তু
গাড়ির ওপর আমার রিফ্লেকশন দেখে আমার বেশ মজা লাগলো।
নাহ , খুব
একটা কুৎসিত লাগছে না। বরং বেশ সুন্দরই লাগছে। বাবা ঠিকই বলেছে। ছোট্ট মঙ্কের মতো লাগছে। কিন্তু বাবা , স্পেশালি মা শোনো ভালো করে , নাম
রেখেছো আধ্যান, চুল কেটে মংক এর মতো বানিয়ে
দিলে। এবার যদি সেই মঙ্কের মতো যে নিজের ফেরারি
বেচে চলে গেছিলো তিব্বতে তার মতো গৃহত্যাগ করি তখন কি করবে? দিস টাইম ফার্স্ট মিস্টেক
পার্ডনড , কিন্ত কনসিডার ইট এস এ সিরিয়াস থ্রেট। পরের বার যদি হয়েছে এরকম, তাহলে কিন্তু
টাটা বাই বাই। হাজার কাঁদলেও উপায় নাই। এই বলে রাখলাম।
No comments:
Post a Comment