Saturday, May 20, 2017

গিন্নী ও প্রবাস --অন্তমিল


'কি হলো? কি হলো? আরে ওটা ছুঁড়ে ফেলছো  কেনো?'
গিন্নি আমার গল্প লেখার খাতাটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমি রে রে করে তেড়ে আসতে চেঁচিয়ে উঠলো, "চোখে কি ন্যাবা হয়েছে? খাতাটা  তো খাটের ওপরই ছুঁড়ছি। ফেলে কোথায় দিয়েছি। রাজ্যের কাগজ জমিয়ে জমিয়ে ঘরটাকে তো কাবার খানা করে তুলেছ।"
পরশু থেকে খাতাটা খুঁজে পাচ্ছি না। রাশি রাশি কাগজ সত্যিই টেবিল টাকে পুরো ঢেকে ফেলেছে। আমার এই কাগজ জমানোর অভ্যেসটা আমার নিজের কাছেই মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর হয়ে দাড়ায়। কিন্তু কিছু করার নেই। অভ্যেস যাবে কোথায়।
দরকারী কাগজ গুলো বেছে বেছে আলাদা করে রাখার আগেই রোজকার কাগজের পাহাড় এসে পড়তে থাকে। ঠিক যেন গভর্নমেন্ট অফিসের ফাইল। উদ্যেশ্য থাকে বাছাই করে দরকারী কাগজগুলিকে স্ক্যান করে কম্পিউটার এ ঢুকিয়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া। কিন্তু তার জন্য দরকারী কাগজ গুলো তো বাছতে হবে। তারপর কাটাই ছাঁটাই , তার পর স্ক্যানারের কাছে পিঠ সোজা করে বসে একে একে স্ক্যান করতে হয়। অত সময় কি আমার আছে। তাই স্তুপ বাড়তে থাকে।
এইখানে একটা কথা বলে রাখি। কাগজ কাগজ যা শুনছেন, এসব কিন্তু একটাও খবরের কাগজ নয়। দেশে খবর কাগজ জমানোর বা নেহাত পেপার কাটিং জমানোর নেশা অল্পবিস্তর সবার আছে। কিন্তু এ কাগজ সে কাগজ নয়। এসব হলো রং বেরঙের কুপন।
বিদেশের মাটিতে প্রথম পা ফেলার আগে প্লেনে বসে বসে ভেবেছিলাম, যাক বাবা কাগজ থেকে নিস্তার পেলাম। এখানে সব জায়গায় ক্রেডিট কার্ড চলে, আর সবকিছু অনলাইন। ও বাবা!! এখানে এসে দেখি উল্টো। এখানে সব কিছুতেই কাগজ। এমনকি খোদ শহরের ভেতরও এমন দোকান আছে যেখানে ক্রেডিট কার্ডে বাজার করা চলে না। অনেক পার্কে ছোটো ছোটো খাওয়ার দোকান গুলোতেও কার্ড চলে না। আর সবথেকে বড় বোঝা এই ছোটো ছোটো কুপনের।
দেশে একটার সাথে আরেকটা ফ্রি বলে হাজার কুপন চলত, কিন্তু ব্যাপারটা হাস্যকর ছিল কারণ যেসব জিনিসে কুপন দেওয়া হত সেগুলো যথেষ্ট দামী। একটা লারজ পিজ্জার সাথে একটা মিডিয়াম পিজা ফ্রি। আপনারাই বলুন, দুই প্রেমিক প্রেমিকা বসে বসে একটা লারজ পিজা শেষ করতে পারবে? আমার দ্বারা তো হত না। কিছুটা ফেলা যেতো তার ওপর ছিল আরেকটা মিডিয়াম পিজ্জার জোর জবরদস্তি। নিয়ে তো নিতাম, এবার কলকাতা থেকে মফস্সলে আনতে গিয়ে তার যা হল হত সে আর কহতব্য নয়।
দোষটা কিন্তু ভিড়ের নয়। পিজ্জার আকার, আর বাক্সের। যদিও বাক্সটা চ্যাপ্টা এবং চৌকো। যেখানে সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। এমনকি লোকাল ট্রেন এর ঠাসাঠাসি ভিড়ে , ট্রেন এর বাঙ্কে অজস্র ব্যাগের ফাঁকে, আড়া আড়ি ভাবে দিব্যি ঢুকে যাবে। কিন্তু এই  আড়া আড়ি টাই সমস্যা। কাত করলেই রস পরে যাওয়ার মত চিস গড়িয়ে গড়িয়ে বেরোতে থাকে। সেবার তো একজনার চকচকে টাক দিব্যি ফ্লেভার্ড চিস এর স্বাদ নিয়ে নিল।
এছাড়াও আরো অজস্র তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে , যেমন একটা টুথপেষ্ট এর সাথে আরেকটা টুথপেষ্ট ফ্রি। জিবে দিয়েই দেখি চকের গুঁড়োর স্বাদ বেশি। তারপর ধরুন একটা তেল এর সাথে আর একটা তেল ফ্রি। পরে বুঝলাম দাম বাড়িয়ে হাফ সাইজ করে সেটাকেই দুভাগে ভাগ করে চালাচ্ছে। তাই সেল সম্বন্ধে ছোটো বেলা থেকেই এলার্জি জন্মে গেছে।
কিন্তু এখানে এই কুপন আর অফার, এটাই মার্কেট রান করাচ্ছে। বরলোকেরাই শুধু নতুন বার করা জিনিস পরে,  বাকি সারা আমেরিকা সেল এর জন্য অপেক্ষা করে। আপনি যদি কুপন ব্যবহার না করেন , তাহলে দেখবেন মাথায় ঝুঁটি বেরিয়েছে , আর হাতের জায়গায় দুটো ডানা গজিয়েছে।
সেই কুপন এর জন্য আপনাকে প্রত্যেক দিন খবরের কাগজ ঘাঁটতে হবে না এখানে চিঠির বাক্সেই যত বিজ্ঞাপন এসে জমা হয়। ঠান্ডার মধ্যে মেল বক্স খুলে এক একটা কুপন দেখে অদরকারী কাগজ ফেলে দেওয়ার মত ইচ্ছাও সুস্থ মানুষের হয় না। আর ফেলবেন বা কোথায়? ডাস্টবিন  তো  থাকে ঘরের ভিতরে। আর বাইরের রাস্তায় ফেললে যে কেউ আপনাকে ডার্টি ইন্ডিয়ান বলে আওয়াজও দিতে পারে।
অগত্যা তুলে আনতে হয়। আর টেবিল বোঝাই করে স্তুপ এর মধ্যে থেকে খুঁজে বার করতে হয় নিজের দরকারী জিনিসগুলো। ছোটোবেলায় পরেছিলাম, মেথরকেও সম্মান দিতে হয়। আমার মনে হয় গিন্নি সেই চ্যাপ্টারটা ছিঁড়ে এরোপ্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল।
কি আর করব। খাতাটা তুলে নিলাম হাতে। ভয়টা আমার অন্য। এই খাতাটা আমার একমাত্র জায়গা যেখানে আমার কাল্পনিক ঝগরুটে গিন্নির ঘাড় দিয়ে আমার গিন্নির দুষ্টু মিষ্টি ঘটনা গুলোকে রং চং মেরে চালিয়ে দেওয়া যায়। বয়সকালে কোনদিন যখন পুরনো দিনের কথাগুলো মনে করতে ইচ্ছা করবে  , তখন এই খাতাটা খুলে রোমন্থন করব।
আগে ডায়েরি লিখতাম। ভাবতাম পরবর্তী কালে পড়তে ভালো লাগবে। কিন্তু রোজ রোজ লিখতে হলে সরসতা থাকে না। জীবন প্রতিদিন সরস হয়না। কিছু ঘটনার মিষ্টতা বা তিক্ততা লেগে থাকে জিভের আগায়। তাতেই বর্সপুরণ আর দিনযাপন হতে থাকে। আমার সেই ডায়েরির পাতা গুলোতে এত প্রাত্যহিকি ঘটনার প্রলেপ ছিল যে এখন কলেজ ডায়েরি খুলে দেখি উনত্রিশ অক্টোবর এ লেখা শুরু হয়েছে, "আজকে সকালে  ব্রাশ করতে করতে হাগু করেছি।" চৌঠা নভেম্বর লিখেছি, "আজকে ব্রাশ করতে করতে হাগু করেছি।" এবং একে একে পচিশে নভেম্বর , তেসরা ডিসেম্বর , তিরিশে ডিসেম্বরেও একই কথা দিয়ে লেখা শুরু করেছি।
এখন এত বছর পরে কেন আমি ব্রাশ করতে করতে পায়খানা করেছিলাম সেটা কি জানার আমার কোনো ইচ্ছা আছে? তাই আমাদের দাম্পত্য জীবনটাকে একটু রঙিন করে ইতিহাসের মলিন পাতা থেকে হার্ড বাইন্ডিং করার জন্যই এই লেখাগুলি লেখা।
হাস্যরস এমন এক চাবুক যা কারো পিঠে পড়লে আশেপাশের অন্যেরা হাসবই। তাই এক এক করুণ ঘটনা হাস্যরসে মেরিনেট করে এই খাতার ভেতর ঢুকিয়ে রাখছি। যদি আজ থেকে চল্লিশ বছর পর এই লেখাগুলো পড়ি তাহলে সেই জরাজীর্ণ চোখে ইতিহাসের ঝিলিক আরো অনেক কিছু সুন্দর স্মৃতি কে বয়ে নিয়ে আসবে।
কিন্তু সমস্যা হলো চক্ষুদানের আগেই যদি বোধন হয়ে যায়। গিন্নি যদি এই কাহিনী গুলো পরে ফেলে তাহলেই রক্ষে। জগধাত্রী নেবে চণ্ডীর রূপ। মেয়েরা সব কিছু সহ্য করতে পারে। কিন্তু সমালোচনা পারেনা। আর সেই সমালোচনা যদি তাদের নিরবিচ্ছিন্ন সংসার প্রীতির দিকে অঙ্গুলি উত্তোলন করে ( সাথে সাথে নাচায় ) তাহলে তো হয়েই গেল। সাথে আবার কল্পনার মিথ্যাচারিতা।
সেই ভয়েই আমি খাতাটা টেবিলের ওপর এমনি রেখে দি। মানুষের স্বভাবই হলো, পরের গোপন জিনিসের প্রতি নজর দেওয়া। যদি গোপন না রাখেন তাহলে কেউ আর খুলেও দেখবেনা। এই অনুভূতিটা আমি কালিফোর্নিয়ার বিচ এ পেয়েছিলাম। তাই আমার সমস্ত জিনিস সাবধানে এক মোড়কে ঢেকে খোলা জায়গায় ফেলে রেখে দি, আর গিন্নিও তার দিকে দৃষ্টিপাতও করে না।
খাতাটা খুলে আমি সযত্নে আবার টেবিলের ওপর তুলে রাখতে গিন্নি পেছনে এসে দাড়ালো, "তুমি আজকাল কেমন যেন হয়ে যাচ্ছ।"
"কেন কি হয়েছে?"
"সেই আহ্লাদ নেই। নিজেকে কেমন যেন ছিবড়ের মত লাগছে।"
"যাহ বাবা। আমি কি করলাম।"
"সেই ব্যাপারটা নেই আর তোমার মধ্যে। কেমন যেন দুরে দুরে থাক। লোকেদের কাছে আমার নামে নিন্দা করে বেড়াও।"
"আমি?? তোমার নামে? নিন্দা করি? আমি কি রাবণ?"
"ফাজলাম ছাড়ো। তোমার কি হয়েছে বল।"
"কেন কি আবার হবে?"
"তুমি কি মনে কর যে আমি তোমার ওপর অত্যাচার করি?"
"পুরুষ নির্যাতনের কথা বলছ। হ্যা তা একটু আধটু তো করই।" সুরটা কিন্তু ব্যাঙ্গাত্মক ছিল।
"কি করি তোমার। সারাদিন খেটে খেটে মরে যাচ্ছি, তোমার মন রাখার জন্যে দৌড়ে চলেছি। নিজের কেরিয়ার, সাধ -আহ্লাদ সব তো শিকেয় তুলে রেখে দিয়েছি। তবুও তুমি আমাকে মনে কর আর দশটা বউ এর মতন।"
"আহাঃ  আমি কি সে কথা কখনো ভাবতে পারি? "
"তোমার বন্ধুদের বউদের দেখো গিয়ে। নখ খারাপ হয়ে যাবে বলে রান্না করে না, স্কিন খারাব হয়ে যাবে বলে বাসন ধোয় না , আর আমার হাতে হাজা হয়ে গেছে বাসন ধুয়ে ধুয়ে।"
"আরে জানি তো তুমি সেরা।"
"একটা চাকর বাকর নেই যে আমার কাজটা একটু কম হত। তুমি তো বাচ্চারও অধম। তুমি একাই যা ঘর নোংরা কর , যে বাচ্চা কাচ্চা হলে কি হবে তা ভগবানই জানে। তবুও তুমি শোনাতে ছাড়ো না।"
"আমি কোথায় শুনিয়েছি। তুমি হঠাত কোথা থেকে কি সব এনে জুড়ে দিচ্ছ।"
"তুমি কি আমাকে সন্দেহবাতিক, ছুঁচিবাই, খরচে, ঝগরুটে গিন্নি মনে কর?"

গিন্নি শব্দে আমার খটকা লাগলো। সে তো কখনো গিন্নি শব্দ ব্যবহার করেনা। যদি নিজের ম্যারিটাল স্টেটাস কে টেনে আনতেই হয় তখন বলে, "আমি তো তোমার বউ নাকি?" বা "বৌএর একটু আধটু কথা তো শুনতে হয়।" কিন্তু কখনো গিন্নি শব্দটা ওর মুখ থেকে শুনিনি। এটা আমার ডাক। তার ওপর যেসব বিশেষণ ব্যবহার করলো তাতে আমি প্রায় নিশ্চিত যে কলেজের টুকলি করার অভ্যেসটা এখনো যায়নি। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, "তুমি কি আমার এই খাতাটা পরেছ?"
গিন্নির  ছলছল মুখভঙ্গি হঠাত থতমত খেয়ে অদ্ভূত বিকৃতি নিয়ে বলে উঠলো, "কই  না তো। আমি কেন তোমার লেখা পড়ব।"
ন বছর প্রেম করেছে, দু বছর বিয়ে, তবু মিথ্যে বলাটা সে আজ শিখল না। আরেকটু চাপ দিলেই ভাঙবে, "সত্যি করে বল। তুমি এটা পড়েছ  না পড়নি?" এবার আওয়াজ চড়ে গেল সপ্তমে, "পড়েছি তো কি হয়েছে? বেশ করেছি পড়েছি। তুমি ছাইপাঁশ লিখতে পারো আর  আমি পড়তে পারিনা। বেশ করেছি পড়েছি। আমার নাম উল্টোপাল্টা লিখবে আর আমি কিছু বলব না। কি পেয়েছ টা  কি? "
আমি বুঝলাম খুব লেগেছে। একদম এফোঁড় ওফোঁড়। আমি শান্ত স্বরে বললাম, "ওগুলো তো নিছক গল্প।"
"আগে তো কবিতা লিখতে। আমাকে নিয়ে। কত তাতে রং বিহার ছিল। আগে তো শুনিনি গল্প লেখ। ডায়েরি লিখতে জানি। "
"এটাই প্রথম চেষ্টা।"
"ও তাই বুঝি !!! তা বিয়ের আগে কবিতা লিখতে তখন আমার রূপ ছিল বিষয় বস্তু। আর বিয়ের পর ছন্দ হারিয়ে এখন আমার ঝগড়া তোমার গল্পের স্ক্রিপ্ট?"
"তুমি এমনি করে ধরছ কেন? লেখা গুলো পরে তোমার মজা লেগেছে কি না সেটা বল।"
"মজা লাগত যদি ঘটনা গুলোতে আমাকে এত টা খারাপ ভাবে না প্রদর্শন করা হত। এই লেখা গুলো কে কে পড়েছে? "
"চার জন।"
"চার জন?"
"তোমার দুটো চোখ আর আমার দুটো চোখ।"
"আহা, ন্যাকাষষ্ঠী আমার। আর কারোকে পড়াবে না বলে দিলাম।"
"কেন শুনি।"
"এইটা পড়লেই যে কেউ আমাকে ঠিক এরকমই মনে করবে। তোমার বাড়ির লোকেদের তো আমি জানি। এই লেখা গুলো তুলে তুলে আমাকে ঠুসবে। পড়লেই বলবে , "তুই বাবুকে এরকম করে কষ্ট দিস?" আর সাথে তোমার দিদি তো আছেই। খবরদার কেউ যেন না পড়ে ।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। কেউ পড়বে না। কিন্তু তুমি একটা কথা বল। কেউ নিছক গল্প পরে যদি আমাদের রিলেশন নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলে তাহলে দোষটা কার? লেখকের না পাঠকের?"
"আমি তোমার মত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস নই। অত আমি বুঝি না।"
"শোনো , একটা কথা মনে রাখো। লেখক লেখকের জন্য লেখে। তার মনের কথা আর শব্দের খেলা দুটো মিলে মিশে সাহিত্য তৈরী হয়। কখনো ভাষা প্রাধান্য পায়, কখনো কল্পনা, আর কখনো তার বাস্তব। তিনটে মিলেমিশে যখন এক হয়ে যায় তখন সৃষ্টি হয় গল্প, কবিতা, উপন্যাস। লেখক যদি তাই লেখে যা পাঠক পছন্দ করে, তাহলে সাহিত্য থাকে না। সেটা হয় journalism. বুঝলে।"
"উফফফ আবার ডায়ালগ। এই এত জ্ঞান যদি থাকে তবে বই লিখে ছাপাতে পারো  তো?"
"পারি তো?"
"তাহলে লেখো আর ছাপাও।"
"তাই তো করছি।"
"এটা তুমি ছাপাবে?"
 "তুমি কি বল, ছাপানোর যোগ্য? "
"নিশ্চই। দারুন হবে। তোমার বই বেরোবে। দোকানে পাওয়া যাবে। আমার বন্ধুরা দেখবে। কিনবে। ফেইসবুক এ কমিউনিটি তৈরী হবে তোমার নামে। তোমার ফান ফলয়ার হবে। তুমি বিখ্যাত হয়ে যাবে। আমি বেশ ঘ্যাম নেব সবার কাছে।"
"তুমি আমায় সাপোর্ট করবে?"
"কেন করব না। আলবাত করব। শুধু একটা শর্ত।"
"কি সেই শর্ত বেগম।"
"বইটির প্রথম সমালোচক হিসেবে , বইটিকে আমার নামেই উত্সর্গ করতে হবে।"
"তুমিই তো নায়িকা।"
"ওসব জানিনা। উত্সর্গের জায়গায় আমার নাম চাই। তাও ভালো ভাবে।"
"সে নাহয় করলাম। কিন্তু এই যে বললে, বইটা কেউ যেন না পড়ে। আর এই বলছ বইটা চাপাতে। দুটো কিরকম অন্ত্যমিল হচ্ছে না।"

গিন্নি খানিক্ষণ চুপ মেরে গেল। কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "ওটা বলেছিলাম , ম্যানুস্ক্রিপ্ট নিয়ে। এটা তো ছাপানো বই। সবাই তোমাকে লেখক হিসেবে পড়বে। আমায় জানবে লেখকের বউ হিসেবে। কেউ তখন আর ওই বইটাকে সত্যি মনে করবে না। আর তুমি ফেমাস হয়ে গেলে তো আর কোনো কথায় নেই। কিন্তু হ্যা ম্যানুস্ক্রিপ্টটা  কিন্তু বাড়ির লোকজন কেউ না পড়ে। সবার জন্য চমকটা তুলে রাখা চাই। "
নারীর মন আর তার বিচিত্র আকস্মিক পরিবর্তন বিশ্ব সাহিত্যকে চিরকাল সমৃদ্ধ করেছে। তার এই বিচিত্র যুক্তি আর ইছাপ্রবাহ, জীবনের প্রলাপকে সাহিত্যের সংলাপ করে তুলেছে।  তাই তার কথামতো  বই এর প্রকাশনার পেছনে বিস্তর তেল ঢালবার উদ্যোগে আপাতত এখানেই রাখছি।
অন্ত্যমিলে এখনো আমরা সুখে সাচ্ছন্দ্যে  ঘর কন্যা করছি।



No comments:

Post a Comment