Wednesday, December 5, 2018

৫৩) আধ্যানের ডায়েরি - বড় এবং বুঝমান



বাবার মতে আমি সেই হনুমান যে সূর্যকে গিলে ফেলেছিলো।  গায়ে শক্তি এসেছে কিন্তু সেই শক্তিকে কি ভাবে ইউটিলাইজ করতে হয় সেটাই জানিনা।  কথায় কথায় ডায়লগ খাই  - বড়ই হয়েছো বুঝমান হওনি।  এবার আমি বলি ,এর জন্য কি আমি দায়ী ? আমার শরীর তোমাদের বানানো , আমার ব্যাটারিতে চার্জ তোমরা দাও, শেখানোর কাজ তোমাদের।  কোথাও না কোথাও তোমাদেরই ভুল হচ্ছে তাই আমি পারছি না।  আর এটাও সবথেকে বড় প্রশ্ন , কি পারছি না।  ভারী ভারী জিনিস তুলে ফেলতেই দেখছো , কিন্তু ভারী জিনিসগুলো তোলার জন্য যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেল লাগে সেটা কি তোমরা লক্ষ্য করছো না।  এই নাকউঁচু লোকেদের আমার ভালো লাগে না বাপু।  তোমরা বাবা মা হতে পারো , কিন্তু মনে রেখো , আইডেন্টিটি কিন্তু ক্যারি করতে হয়।  এরকম ফালতু বকলে একদিন ব্যাজটা কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেবো , কোরো তখন ঘ্যান ঘ্যান।

এক এক করে ভেঙে বলি আমার বাবা মার্ সমস্যা।  অর্ধেক জিনিস যদিও আমি বুঝতেই পারিনা যে "হোয়াটস রং ইন ইট। " যেমন যা দাঁড়িয়ে আছে , তা তো "ফলিং ডাউন" হওয়ার জন্যেই।  তাই আমি ফেলে দিই।  আর তাতেই লাফিয়ে ওঠে মা বাবা।  আমাদের সিক্স চেয়ার আছে।  তাদের মধ্যে চারটে - মানে ওয়ান টু থ্রি ফোর  ডাউন হওয়ার জন্যেই বসে থাকে।  আমি শুধু হেল্প করি মাত্র।  তাতে বাবা মার কি ? বাবা আবার আমার ঘাড় ধরে তোলানোর চেষ্টা করে।  আর হেল্প করে না।  আমি কি আর তুলতে পারি।  সেটা তো পরের স্কিল ডেভেলপমেন্ট।  এখন শুধু ডিসেকশন এন্ড লার্নিং।  তাই ব্রেকিং ইস এন ইম্পরট্যান্ট স্কিল।  আর আমি তাতে বেস্ট।

এরপর ধরো "ইয়া-য়া- য়া- য়া- য়া- য়া- য়া " স্কিল।  আমি হাতের কাছে যা পাই , সেটা ধরে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিই।  এটা শুধু আর কিছু না , আমার লং টার্ম এক্সপেরিমেন্ট , যে যদি কোনো জিনিসকে ওপরে ছুঁড়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটা নেমে আসবে কি না।  মাই গড , কিছু সত্যি নেমে আসে না।  কেউ না কেউ সত্যি সেটাকে ক্যাচ করে নেয়।  কিন্তু যেহেতু আমার ক্যাচিং স্কিল এখনো ভালো হয়নি , তাই আমার মাথায় এসে পরে।  ঠক করে লাগে।  কিন্তু তাতে কি আমি কাঁদি।  মোটেও না।  কারণ ওটা তো আমার এক্সপেরিমেন্ট এর সাকসেস।  আমি জানি পেন ইস গেন।

কিন্তু পেন যখন গেন হয় না তখন আমি কাঁদি।  আমার সামনে সবাই পেন নিয়ে খসখস করে লিখে যাবে আর আমি হাঁদার মতো তাকিয়ে থাকবো তা তো হয়না।  আমার ডে কেয়ারে প্রচুর ক্রেয়ন আছে।  বাড়িতে একটাও নেই।  তাই যে কোনো পেন পাই , ধরে লিখতে আরম্ভ করে দি।  আর আমি এখন এটা ভালো বুঝি হোয়াইটের ওপর লিখলে তবেই সেটা দেখা যায়।  তাই তো আমি দেওয়ালে লিখি।  বাবা একটা বিশাল হোয়াইট বোর্ড নিয়ে এসেছে আমার লেখার জন্য।  কিন্তু সেটা তো কিছুক্ষনের মধ্যেই ভরে যায়।  তাই তো আমি শুরু করি দেয়াল লিখন।  মা আমাকে ক্লিন ক্লিন করে আবার লিখতে বলে।  কিন্তু ওই বোর্ডে আমার লেখাগুলো থাকে না, কারণ ক্লিন করা যায়।  কিন্তু দেয়ালে থাকে।  তাই আমার সেটার দিকেই বেশি ইন্টারেস্ট।  হবে না কেন।  আমার এফিসিয়েন্সি গ্রোথ রেট মেজার করতে হবে না? নিজের সাথে কম্পিটিশান করাই সবথেকে হেলদি কম্পিটিশন।  কে আর বোঝাবে।  দিন রাত শুধু পেন লুকানোর খেলা চলছে।  লুকানোর আগে যদি ধরে ফেলি , তাহলে আমি টানাটানি করতে থাকি।  আর যেহেতু বাবার জোর আমার থেকে অনেক অনেক বেশি , তাই বাবা যখন কেড়ে নেয় তখন মনের দুঃখে  কেঁদে ফাটিয়ে দি।  আর তাতেই আমি খারাপ হয়ে যাই।


এরপর সেই জাম্প জাম্প।  বাড়িতে জাম্প করা চলবে না।  রাস্তায় জাম্প করা চলবে না।  জমে থাকা জলের ওপর জাম্প এন্ড স্প্ল্যাশ করলে তো হয়ে গেলো সারাদিনের মতো।  তাই বাবা বা মায়ের ওপরই জাম্প করি।  ওতে তো আওয়াজ হয় না।  ওতে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।  কিন্তু মাঝে মাঝেই বাবা চেঁচিয়ে ওঠে , "ওরে তোর ভাই বোন হওয়া এখনো বাকি আছে।" কেন যে এইসব আনরিলেটেড কথা বলে ব্যাপারটা ঘুলিয়ে দেয় বুঝতে পারিনা বাপু।  মা চিৎকার করে বলে , " পেটের ভিতর ছিলিস যখন তখনও লাথি মারতিস এখনো মারছিস।"  আরে সেটা তো আমার জন্মগত অধিকার।  তোমরাই তো গ্রান্ডমা গ্রান্ডপা কে বলো।  তাহলে আমি কেন মারবো না।  যদি নিজেরা বাঁচতে চাও তাহলে আমার এনার্জি ঠিক দিকে চালনা করো।  আমার সাথে ফুটবল খেলো।  বাবা যদিও আমাকে রোজ বাইরে নিয়ে যায়।  কিন্তু রোজই আমাকে বলে যে আর কয়েকদিন তারপর বাড়িতেই থাকবে হবে।  তাই তো আমি খেলার ব্যবস্থা করছি।

আমার ধাক্কা মারা কিন্তু এখন অনেক ঠিক হয়ে গেছে।  আমি কিন্তু এখন আর কাউকে ধাক্কা মারিনা।  আমি বুঝে গেছি , দে আর ইউসলেস।  আগে আমি সবাইকে খেলতে ডাকতাম আমার মতো করে।  কিন্তু ওরা আমাকে ক্রিমিনালাইজ করলো।  আমি কি করবো।  এখন তাই কাউকে পাত্তা দিই না।  কিন্তু আমার যেটা ইচ্ছা , সেটাই আমি করি।  যদি কেউ আমার রাস্তায় আসে তাদের থেকে কেড়ে নিয়ে আমি আমার কাজ করি। কেউ তো বলতে পারবে না যে আমি তাদের সুযোগ দিই নি।  আমি  দিয়েছিলাম, তারা আমাকে ভুল ভেবেছে।  কিন্তু এখানে আমার অন্য প্রব্লেম এসে দাঁড়াচ্ছে।  সেটা আমার হাইট।

আমার মা আমাকে খিচুড়ি খাইয়ে খাইয়ে যা হাইট বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে হয়ে যাচ্ছে সমস্যা।  আমার ক্লাসে সবাই আমার বেবি।  কেউ আমার কাঁধে পরে , তো কেউ বুকে।  আর তাদের গায়ে জোর নেই।  তারা তো আর খিচুড়ি খায় না , ব্রক্কলি  আর ক্যারোট খায়।  সে দিয়ে কি আর আমার মতো শক্তি হয়।  বাবাকে ধাক্কা মারলে যেরকম আমিই "ফলিং ডাউন " হয়ে যাই ওরাও আমার হাতের হালকা পুশ এ ধুপপা হয়ে যায়।  আর আমার নামে কমপ্লেন আসে। এই হাইটের জন্যে আমার রিচ অনেক বেশি।  আমি এখন মায়ের কিচেন ক্যাবিনেটের ড্রয়ারে হাত ঢুকিয়ে কুড়কুড়ে বার করে নিয়ে আসতে পারি।  জলের কন্টেনার এর কলটা চালিয়ে দিতে পারি।  ফ্রিজ খুলে ওপরের তাকের জিনিস নিচে নামিয়ে আনতে পারি।  বাথরুমের আয়নার সামনে বসে থাকা সোপ কন্টেনারের ওপর হাত দিয়ে সোপ বার করে নিতে পারি।  এতো কিছু পারি , তাতেও এদের উঁচু নাকে মাছি বসা চাই।  কি আর বলবো।  যত এক্সপেরিমেন্ট করবো ততই তো জানবো।


আর বাকি থাকলো আমার শুয়ে পড়া।  এই অভ্যেস নিয়ে বাবা মা নাজেহাল।  আমি জানি , কিন্তু আমার অন্য কোনো উপায় নেই।  আমি দেখেছি যে শুয়ে পড়লে , আমাকে টেনে তুলতে বাবা মায়ের বেশ কষ্ট হয়।  কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারেনা যে আমি কখন শুয়ে পড়ি।  তার আগে বলি আমি কোথায় কোথায় শুয়ে পড়ি।  আমি সব জায়গায় শুয়ে পড়ি।  শপিং মলে , পার্কিং লটে , মন্দিরে , রাস্তা ঘাটে , জলের ওপর , বালির ওপর , বারান্দায় , পার্কে যেখান থেকে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চায় সেখানেই আমি শুয়ে পড়ি।  এটা যেন ভেবোনা যে আমি শুয়ে পড়ি মানে ঘুমিয়ে পড়ি।  প্রথমে আমি ঝুলে পড়ি।  মানে যে হাত ধরে আমায় টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে , সেটাই ওপরে করে বডিটা ছেড়ে দিই।  তাতে কি হয় আমি বাবা বা মায়ের হাতে ঝুলতে থাকি।  আমি জানি যে ঝুলে থাকলে বাবার হাতের থেকে বেশি আমার হাত খুলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।  আর সেটার জন্যেই বাবা মা বাধ্য হয় আমাকে ছেড়ে দিতে।  আর যেই ছেড়ে দেয় , আমি মেঝেতে শুয়ে থাকি , যতক্ষণ না বাবা মা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে পরে। যেই ব্যস্ত হয়ে পরে সেই আমি সেই সো কল্ড - "বদমাইশি " করতে আরম্ভ করি।  কিন্তু ভেবে দেখো আমার এই এস্কেপ মেকানিজম কি খারাপ ?

তো এই গেলো আমার আপাতত বড় হয়েছে কিন্তু বুঝমান হয়নি ইতিবৃত্ত।  তাহলে বুঝেই নিন , যেহেতু আমি সমস্ত কিছু জাস্টিফাই করতে পারি তাহলে আমি বুঝমান , এবং যেহেতু হেলথ হাইটে বড় হয়েছি তাই আমি " বড় " আর দ্যাট কনক্লুড যে বাবা মার মাথায় গোবর পোড়া।  সঙ্গে থাকলে আরো রঙ্গ দেখাবো , আপাতত টাটা।   

আধ্যানের ডায়েরি




Tuesday, November 27, 2018

৫২) আধ্যানের ডায়েরি - জাম্প জাম্প




সেদিন খুব রাগ হয়ে গেছিলো।  যদি গ্রোথ মাইলস্টোনই হয় তাহলে এতো বারণ করা , এতো রাগ ঝাল , এতো তেল দেখানো কেন বাপু।  নিচের তলার উইচদের থেকে কমপ্লেন আসার পর থেকে বাবা মা যেন ক্ষেপে উঠেছে।  আমি একটু জাম্প করলেই বাবা লায়ন এর মতো রোর করছে, আর মা মাঙ্কির মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে তেড়ে আসছে।  অথচ টিভিতে বেজে চলেছে টেন লিটিল মাঙ্কি জাম্পিং অন দা বেড।  যতবার দেখবো , ততবার করবো তবেই না ভীত মজবুত হবে।  তবেই না আমি বড় হবো।  তবে কেন এতো সমস্যা।

সেদিন সারাদিন জাম্প করিনি রাগ করে।  খুব রেগে গেছিলাম, কারণ আমি একবার জাম্প করার পরেই বাবা ধরে নিয়ে বসিয়ে চোখ দেখিয়ে চিৎকার করেছিল।  যদিও আমি এখনো ঠিক ঠাক এক্সপ্রেশন গুলো আলাদা করতে পারিনা।  কিন্ত সেদিন কেন জানিনা বুঝতে পেরেছিলাম সেটা মজার এক্সপ্রেশান নয়।  তার ওপর আমার আবার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়েছিলো। সে ঝাঁকুনিতে বুঝতে পেরেছিলাম হাওয়া ভালো নয়।  অগত্যা , গোঁজ মেরে বসে থাকা।

আমি যখন খেলি তখন বাবা মা এর হাজার ঝামেলা।  আমাকে সরিয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়।  আর আমি যদি কিছু না করি, তাহলে অন্য সমস্যা , তখন সবকিছু ছেড়ে আমাকে টানতে থাকে।  সেদিন কেসটাও তাই হয়েছিল।  চুপচাপ নিজের মতো খেলছিলাম।  হঠাৎ করে দেখি, তুলে টুলে নিয়ে গিয়ে জামা টামা পরিয়ে টরিয়ে আমাকে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলল।  আমি নীরব।  সারা রাস্তা বাবার গিলটি ফিলিংস বেরিয়ে আসছিলো এ - বি - সি -ডি গান হয়ে।  আমি পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে ছিলাম।

আমিও তো জানি , এর পর কি হতে চলেছে।  সেই নিয়ে যাবে কোনো একটা গ্রসারি স্টোরে। একটা কিছু খেলনা হাতে ধরিয়ে দেবে।  কার্টে বসে বসে আমি খেলতে থাকবো সেটা নিয়ে।  তারপর বেরোনোর সময় সেটা কাউন্টারের লোকটাকে দিয়ে বলবে , "আই ডোন্ট নিড দিস।" ওরে বাবা, তোমার চাইনা বলে কি আমারও দরকার নেই ওগুলো।  মানছি আমি ডে কেয়ারে যাই, মানছি আমার জন্য মিলিয়ন্স অফ ডলার খরচ হয় কিন্তু এটা মানতে পারছি না যে , আই হ্যাভ এনাফ।  যত খেলবো তত তো শিখবো।  আর শিখতে গেলে কি করতে হবে , প্রথমে খেলনা গুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে, তারপর একটু চেটে টেটে দেখতে হবে , তারপর একটু ছুঁড়ে দিয়ে দেখতে হবে।  তবেই না গিয়ে শিখবো।  কিন্ত না , কার্টে বসে যা নিয়ে খেলতে শুরু করি তাই উধাও হয়ে যায়।  আর কয়েকদিন পর যখন ঘুরে আসি , তখন দেখি দোকান থেকেও সেটা গায়েব হয়ে গেছে। তার থেকে নাই বা নিয়ে যেতে পারো আমাকে।  কিন্তু না , ট্যাঁকে গুঁজে সবসময় এখান থেকে ওখান আর ওখান থেকে সেখান।

গাড়িটা থেমে গেলো একদম অন্য ধরণের এক ফাঁকা জায়গায়।  কি জ্বালাতন, এই নতুন নতুন জায়গায় বাজার করা মায়ের এক বিচ্ছিরি হ্যাবিট। দোকানগুলোরও সমস্যা আছে , সবার কার্ট এর সাইজ আলাদা।  আর আমার বসার কমফোর্ট লেভেল আলাদা।  কোনটা স্মুদ চলে কোনটা খটখটে।  আমি অনেক কষ্ট করে কিছু কার্ট মনের কমফোর্ট জোনে ঢুকিয়ে রেখেছি।  আবার মনে হয় এটাকেও ঢোকাতে হবে।

কিন্তু না।  না - না - না।  আমাকে বিশাল অবাক করে দিয়ে একটা বিশাল জায়গায় নিয়ে গেলো যেখানে আমার মতোই কচিকাঁচারা খেলছে।  আমি ওই বিশাল জায়গায় ঢুকেই দেখতে পারলাম বিশাল প্লে এরিয়াটাকে।  বল পিট্ , স্লাইড , ক্লাইম্বার , স্প্রিং রাইডার্স , মেরি গো রাউন্ড , স্পঞ্জ পিট্ কত কি আছে।  মায়ের হাত ছেড়ে দৌড়োতে যাবো, বাবা কোলে তুলে নিয়ে একটা কাউন্টারে গিয়ে একটা লোকের সাথে কত কথা বলতে লাগলো।  আমি হাত পা ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশেষ লাভ হলো না।

মা আমার শ্যু খুলিয়ে , একটা সবুজ সক্স পরিয়ে দিলো।  মা ও পড়লো।  আমি দৌড়ে প্লে এরিয়া যাওয়ার আগে মা ধরে নিয়ে গেলো ওপরে আরেকটা জায়গায়।  অনেকটা বড় জায়গা।  আর সবাই লাফাচ্ছে।  আমার ভেতর থেকে কি আনন্দই না হলো।  আবার চোখে খুশির কান্না বেরিয়ে এলো।  এই মা বাবাই আমাকে সবসময় জাম্প করতে বারণ করে।  আর এখানে নিয়ে এসেছে শুধু জাম্প জাম্প করতে।  থ্যাংক কিউ মামি , থ্যাংক ইউ ড্যাডি।

জায়গাটা হেব্বি মজাদার।  গোল গোল খাপ করা আছে।  যাও গিয়ে লাফাও।  ওই একটা জায়গাতেই দেখলাম বড়রাও লাফায়।  আর বড় শুধু না , মায়ের মতো বড়রাও।  আমার মতো ছোটরাও ছিল কিন্তু তাদের সংখ্যা কম।  আমি প্রথমে তাদের সাথে জাম্প করতে গেলাম কিন্তু এস ইউসুয়াল আমাকে কেউ পাত্তা দিলো না।  আমিও তখন নিজেই জাম্প করতে লাগলাম মায়ের সাথে।  মায়ের সাথে জাম্প কি আর করতে পারি। মা এসে পড়তেই আমি ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম  তখন মা আবার তুলে দিচ্ছিলো।  বাবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁদার মতো দেখছিলো।

এই জায়গাটাকে পরে জানলাম জাম্প পার্ক বলে।  আর এই এক একটাকে বলে ট্রাম্পোলিন।  এই ট্রাম্পোলিনে জাম্প করতে কিন্তু অন্য জায়গার মতো কষ্ট করতে হয় না।  একটু জাম্প করলেই আপনা থেকে জাম্প হতে থাকবে।  থামানোই কঠিন। বেশ জাম্প জাম্প করতে করতে হঠাৎ দেখি একটা ঘেরা জায়গায় সবাই বল খেলতে খেলতে জাম্প করছে।  আমিও বল - বল করতে করতে ছুটে গেলাম।  কিন্তু দরজাতেই আমাকে আটকে দিলো।  আমি নাকি খেলার জন্য অতো বড় হয়নি। ওখানে সব বড়রা খেলছিল।  আমি অনেক চেষ্টা করলাম ঢোকার কিন্তু কেও সুযোগ ছাড়লো না।

আমিও তখন পাশের স্পঞ্জ পিট্ এ গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।  স্পঞ্জ পিট টা হেব্বি।  মাও আমার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো।  পড়লে হবে কি।  আমার মতো কি লাইটওয়েট।  কিছুতেই উঠতে পারেনা।  আর যত উঠতে পারছে না আমিও ঝাঁপিয়ে পরে আরো মা কে নিচে চেপে ধরছি।  হেব্বি লাগছিলো।  কিন্তু মা কে উঠতেই হলো আর উঠতে উঠতে হঠাৎ করে সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো।  সব লাইট , যেখানে যা ছিল সব লাইট। তারপর চিক চিক করে কিছু আলো জ্বলে উঠলো কিন্তু সব নয়।  দেখা যাচ্ছিলো সবকিছু কিন্তু বেশি আলোও ছিল না।  যারা সাদা জামা পরেছিল তাদের জামা দেখা যাচ্ছিলো আর সক্সগুলো।  বাকি আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।  কিন্তু মা মুখের মধ্যে কি পুড়েছিল জানিনা , মায়ের টিথ দেখা যাচ্ছিলো।  কি অদ্ভুত দেখতে লাগছিলো জায়গাটা।  কিন্তু হেব্বি মজা করেছি।

 কিছুক্ষন পর আর দম পাচ্ছিলাম না কিন্তু ঘোর লেগে গেছিলো।  থামতে ইচ্ছা করছিলো না।  লাফিয়েই চলছিলাম।  আর বার বার চেষ্টা করছিলাম ওই জায়গাটায় ঢোকার যেখানে বড়রা বল নিয়ে লাফাচ্ছিলো।  কিন্তু বাবা ছ্যাঁচরাতে ছ্যাঁচরাতে নিয়ে আসছিলো।  কি মানুষ রে বাবা।  কি আর বলবো।  যদিও কয়েকদিনের মধ্যেই আমি শোধ তুলে নিয়েছি, যখন বাবার সাথে এলাম।
--------
আগের দিন মায়ের সাথে জাম্প করছিলাম বাবা দেখছিলো।  কিন্ত এবার বাবার সাথে জাম্প করার পালা।  এবার বাবা আর আমি দুজনেই সাদা গেঞ্জি পরে এসেছিলাম যাতে আমাদের দুজনকেই অন্ধকারে দেখা যায়।  আমার যত এরকম লাফালাফির খেলা আছে সবই বাবার সাথে।  কিন্তু এই খেলাটাতে দেখলাম বাবা একটা ঢ্যাঁড়স।  লাফাতেই পারে না।  আর লাফালে সারা পৃথিবী কাঁপতে থাকে।  কিছুক্ষন আমার পেছন পেছন লাফিয়ে লাফিয়ে এলো।  কিন্তু তারপর থেকে লং মার্চ।  লাফালোই না।  শুধু বুলি দিয়ে গেলো মায়ের সামনে।  মাঝে মাঝে আমার সাথে এসে লাফাতে গেলো তাতে কি হলো আমি গিয়ে ছিটকে ছিটকে পড়তে লাগলাম আর ইন্টারেস্টটা চলে যেতে লাগলো ওই বলপিটের দিকে। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই বাবা ছ্যাঁচরা - ছেঁচড়ি করছে।  হেব্বি রাগ হয়ে গেলো,  শোধ নিতে নিয়ে গেলাম স্পঞ্জ পিটের কাছে।

এই স্পঞ্জ পিট্ টা একটু অন্য ধরণের।  এক দিক থেকে গড়িয়ে পড়তে হয় স্পঞ্জ এর মধ্যে তার পর বেশ কিছুটা স্পঞ্জ পেরিয়ে  আর এক দিক থেকে বেরিয়ে আসতে  হয়।  আমি দেখলাম বাবা আসছে না।  এদিকে আমি একবার গড়িয়ে পরে গেছি।  ওই দিক থেকে ওঠার নিয়ম নেই।  আর যদি আমি অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে আসি তাহলে বাবা আর ব্যাপারটা সামাল দিতে উঠবে না।  তাই আমি উল্টো চাল চেলে আবার উল্টো দিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম।  তাতে কি হলো , যারা ঝাঁপ দিতে এসেছিলো তারা পর পর আটকে গেলো।  কেউ ঝাঁপাতে পারছে না, কারণ আমি তখন স্লাইড বেয়ে উপরে উঠছি। এই সময় বাকি সমস্ত বাচ্চার সময় বাঁচাতে আমার পিতৃদেব আমাকে নিয়ে দিলেন এক বিশাল ঝাঁপ স্পন্জপিটের মধ্যে। যেমন ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো।  মা উঠতে পারছিলো না বলে হেব্বি খিল্লি করছিলো এবার দ্যাখ কেমন লাগে।  উঠতেই পারছিলো না।  অনেককখন চেস্ট চরিত্র করে যখন অন্য দিকে গিয়ে হাজির হলো তখন একটা পায়ের সক্স হাতে।  পুরো নাকানি চোবানি খেয়ে বাবার অবস্থা দেখার মতো ছিল।

যাইহোক , এই ট্র্যাম্পলিনে ঘুরে এসে বাবা মা কে মাফ করে দিয়েছি।  এখন বুঝতে পারছি উইচদের থেকে আমাকে বাঁচাতে আর আমার ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন বজায় রাখতে বাবা মা ঐরকম বকে , এবং তারপর জাম্প জাম্প করতে নিয়ে যায়। হাজার হোক তারাও তো জানে হাউ ফান ইট ইস টু জাম্প ইন জয়।  সামনে ঠান্ডা আসছে।  বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় নেই তাই জাম্প জাম্প -আবার জাম্প জাম্প - আবার জাম্প জাম্প। 



আধ্যানের ডায়েরি