বিকালে
আমাদের পাড়ার ঠেকে বসে আছি, সঙ্গে লেবু চা আর কলেজ বিড়ি। হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো অদ্রীশ। গল গল করে ঘামছে। মুখ চোখ থমথমে। এসেই , “রবিনদা একটু লেবু চা । চিনি
বেশি ।” আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু দম নিয়ে
বলে উঠলো , “পাড়ায় রেপ হয়েছে।” আমরা অবাক। সবার
হাতে চায়ের গ্লাস থেমে গেলো ঠোঁটের কাছে এসে। সন্দীপদার
গ্লাস থামে নি , চুমুক দেওয়ার আগে ঠোঁট নড়লো , “বলে যা।” অদ্রীশ বলে চললো , ‘পুলিশ
স্টেশনের সামনের চায়ের দোকানে সিগারেট কিনছিলাম । হঠাৎ কানে এলো লোকে বলাবলি করছে
পুলিশ স্টেশনে নাকি এই মাত্র একটা রেপ কেস ফাইল হয়েছে । আমাদের পাড়ার কেউ। পুলিশ
এখনই বেরোবে নাকি ধরপাকড় করতে । আমাদের ঠেকটাই তো ফেমাস । মনে হয় প্রথমে আমাদের
ঠেকেই আসবে।’
‘চল চল
বাড়ি যাই, বসে থেকে লাভ নেই। ফালতু
কারণে জেল হাজত। বেকসুরদের আগে জেলে পোরে। ‘ অম্বরীশ উঠে দাঁড়ালো , ‘রবীনদা আমার
খাতায় লিখে নিয়ো , আমি চললাম,’ বলেই হাঁটা লাগালো। সন্দীপদা নির্বিকার। শৈবালের হাতে উঠে এসেছে মোবাইল। টাইপ করছে , “এখুনি খবর পেলাম সারা
দেশের আগুন আমাদের ছোট শহরের ছোট্ট লোকালয়ে লেগেছে।কতদিন আর নারীজাতি এই বিকৃতমনা পুরুষদের নির্যাতন সইবে।
“আমরা কজন ক্লাব” তোমার পাশে , তোমার সাথে আছে রোমিতা।”
“তুই কি
করে জানলি মেয়েটির নাম রোমিতা?” “তুই কি জানতিস নির্ভয়া নাম নয় দিল্লির মেয়েটির।
আন্দোলনের জন্য নাম লাগে। ” “তা বলে রোমিতা? ” “ তাপসী মালিক নামটা কি কাজ করেছিল
? তার থেকে সুচিত্রা বা তসলিমা থেকে টুকলে দেখবি হু হু করে ছড়িয়ে পড়বে। দেখ
বত্রিশটা শেয়ার।“
আমি
দেখলাম শৈবালের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার হয়ে চলেছে। নিচে কমেন্টের ঝড়। অদ্রীশের খবর ভুল নয়। অনেকেই জানে খবরটা। কিন্তু নাম কেউ জানতো না। নাম জানার পর ফ্রেন্ডলিস্টে একের পর
এক প্রোফাইল ফটো পাল্টে কালো হয়ে যাচ্ছে । আমরা
বসে আছি। একবার
অদ্রীশ জিজ্ঞেস করলো , ‘তোরা কি উঠবি না । শৈবালদা , তুমি কি বলো ।’ শৈবালদার চা
প্রায় শেষ , “ভাবছি এই রেপ করে লোকে কি পায় ? যদি যৌনসুখই উদ্যেশ্য থাকে, তাহলে তো
রমণীর আসল রূপ রমনের পরেই বেরোয়। এর
থেকে তো হাতই ভালো।”
চয়নের
গার্লফ্রেন্ড এসে দাঁড়িয়েছে , ‘শুনেছিস খবরটা । মেয়েটির বয়স পাঁচ । শিশুদের নিয়ে এসব
আর কতদিন চলবে বলতো । ’ চয়ন মোবাইলের থেকে চোখ না সরিয়ে বললো , “হ্যাশট্যাগ রোমিতা
। চালু হয়ে গেছে । ” আমি বেশ কয়েকটা লেখালেখির গ্রূপে আছি। খুব ধীরে ধীরে হলেও আসতে আসতে লোকে
হ্যাশট্যাগ চালু করে দিয়েছে। হুটোপাটিতে
সবাই নিজের পুরানো লেখা দিচ্ছে। প্রতিবাদী
লেখা হ্যাশট্যাগ রিপোস্ট। চয়নের
গার্লফ্রেন্ড পাত্তা পাওয়ার জন্য এবার সোজাসুজি কথাচার্জ , “তোমরা কবে থামবে শুনি ।” চয়ন অপ্রস্তুত ভাবে
সবার মুখের দিকে তাকিয়ে এবার বললো , “আমরা রেপ করেছি ?” “না করোনি । তবে প্রতিবাদ
না করাটাও দোষকে ঢাকা দেওয়ার
আরেক পন্থা । সেটাও দোষ ।” শৈবাল বলে
উঠলো , ‘করছি তো । ফেসবুকে ঝড় দেখ ।’
সায়নী ,
চয়নের গার্লফ্রেন্ড শৈবালকে দু চক্ষে দেখতে পায়না ওর গাঁজা টানার অভ্যেস থেকে। ওর উত্তরেও স্বাভাবিক ভাবেই কোনো
প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে ফোন তুলে কল করলো , ‘জয়িতা দি । খবর তো এতক্ষনে শুনেই
ফেলেছো । আমাদের কিছু একটা করা উচিত । নারী জাগরণ আমরা নামেই করি । আজ একটা সুযোগ
এসেছে । চলো পথে নামি।’ জয়িতা
অম্বরীশের দিদি। অম্বরীশ
যেমন ভিজে বেড়াল জয়িতাদি তেমনি ডাকাবুকো। বছর
দুয়েক আগে পাড়ায় নারী জাগরণ কমিটি খুলেছে। নাম
দিয়েছে “ফেসলিফ্ট” । ছোটোখাটো কাজ করে বটে। কিন্তু
এখনোও পর্যন্ত বড় কিছু সাড়া জাগাতে পারেনি। বেশিরভাগটাই
ফেসবুকে।
সন্দীপদা
বলে উঠলো , ‘কি প্ল্যান
সায়নী? ’ ‘কোনো প্ল্যান নেই সন্দীপদা । দোষীকে শাস্তি দেওয়াই উদ্যেশ্য । আর
উদ্যেশ্যে স্থির থাকলে পথ আপনি বেরোবে । তুমিই বলো সন্দীপদা । আমার যখন পাঁচ তোমার তো তখন পনেরো ছিল ।
ইচ্ছা জাগতো আমাকে দেখে ?’ সন্দীপদা অপ্রস্তুত। ‘সায়নী সব প্রশ্ন সবাইকে করা যায়না’,
চয়ন বলে ওঠে। ‘অথচ অত্যাচারিতের বয়স
নেই। যদি সে হয় মেয়ে, তাইতো। ‘ হোয়াটস্যাপ এ টিং টিং করে মেসেজ আসতে
সায়নী উঠে দাঁড়ায় , ‘আমি চলি । সন্দীপদা , প্ল্যান হলো থানা ঘেরাও । ’
সায়নী
চলে যেতে চয়ন বলে উঠলো , ‘সন্দীপদা কিছু মনে করো না ।’ ‘আরে না না । প্লেবয় ইমেজ
ছিল বলে আজও কথা শুনতে হয় । বয়স বেড়েছে ইতিহাস তো পাল্টায় নি । মেয়েটা বড় হওয়ার
আগে এরকম ডাইরেক্ট চার্জ গুলো কমে গেলে ভালো । চল , এখানে বসে লাভ নেই । যাবি থানার ওখানে? ’
শৈবাল তখনও ফোনে লেগে , ‘ টাইপেই থাক না । সামনে গিয়ে পুলিশের মার খাবো কেন? আর
গিয়েই বা করবে কি ? লিঞ্চ মব হলে একটা কথা । কিন্তু দোষী কি ধরা পড়েছে । শুধুই তো
কমপ্লেন্ট লেখা হয়েছে ।’ অদ্রীশ
বললো , ‘সুপ্রিয় থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । এই মাত্র মেসেজ করলো । দোষীদের নাকি
ধরা হয়েছে । গাড়িতে করে পেছন দিক থেকে থানার মধ্যে ঢুকিয়েছে । লোক জমা হচ্ছে থানার
সামনে । ’ আমি অবাক , ‘তুই তো এই কিছুক্ষন আগে খবর নিয়ে এলি । এর মধ্যে এতো কিছু
হয়ে গেলো ? ’ ‘আমিও তো উড়ো খবর শুনে এসেছিলাম । সুপ্রিয় বলছে কাল রাতে নাকি কেসটা
হয়েছে । এই দেখ ।’
সুপ্রিয়র
সাথে অদ্রীশের চ্যাটে এইটুকু বোঝা গেলো পুলিশ খুব গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। মেয়েটি কে ? আর ছেলে গুলো কে? সেটা
জানা যাচ্ছে না। তবে
এটা গ্যাংরেপ। কাল রাতে
পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে কোনো এক হসপিটালে নিয়ে গেছে। এই এখন একটা পুলিশের গাড়ি ঢুকেছে পেছন
দিয়ে। সবাই মনে করছে ছেলেগুলো ধরা পড়েছে।
চয়ন উঠে
দাঁড়ালো , ‘আমি একটু বাড়ি থেকে ঘুরে থানায় যাচ্ছি । সায়নী মেসেজ করেছিল । বারোটায়
ওরা থানা ঘেরাও করবে । তোরা যেতে হয় চল । আমায় তো যেতেই হবে । ’ সকলে মিলে ঠিক
করলাম মেয়েদের সাথে যোগ দেওয়া উচিত। আমরা
কজন চড়ুই পাখি থেকে চুড়ুইভাতি সবেতে আছি। আমাদের
ছোট্ট শহরে কখনো এরকম নোংরামো ধরা পড়েনি। প্রায়
সকলেই ডিটারমাইন্ড, পারলে ছিঁড়ে ফেলবো মালগুলোকে। এই ওয়ান পার্সেন্ট চোনা পুরো পুরুষ
জাতির বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।
সোয়া
বারোটা নাগাদ থানার সামনে হাজির হয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। মিডিয়া থেকে শুরু করে লোকাল
পলিটিশিয়ান সবাই রাস্তায়। দু
চার মিনিট আগেই মেয়র এসেছিলো কিন্তু জয়িতার দল ঢুকতে দেয়নি তার গাড়িটাকে। ওরা
থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা
করছে সায়ন্তনী মৈত্রের। সায়ন্তনী
মৈত্র কলকাতার নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রথম সারির নেত্রী। ওনার উপস্থিতি পরশ পাথরের কাজ করে। জয়িতা তাই প্রথমেই ওনাকে ফোন করেছিল।
উনি আসার আগে থানার আশপাশ ফেস্টুনে ছেয়ে যেতে হবে। পুরুষ জাতির বাপ্ বাপান্ত করে গলা
ফাটিয়ে চিৎকার করতে হবে। খবরের
কাগজের ওপর লাল আলতা দিয়ে লেখা ‘রোমিতা নিষ্পাপ “ “পুরুষজাতি নিপাত যাক” “দোষীদের
শাস্তি চাই” “ ধর্ষণকারীর জন্য জঙ্গল আইন ” “ কারাগার নয় , আমাদের নরম হাত”
চারপাশে ছেয়ে গেছে। কিন্তু
কেউ থানায় ঢুকছে না। থানার
দরজা থেকে পাঁচিলের মধ্যে যে দূরত্ব তাতে দশটা পেটমোটা পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে , যারা
কোনোদিন এতো লোক একসাথে দেখেনি।
আমি সাইড
কাটিয়ে সায়নীর কাছে পৌঁছে ওকে জিজ্ঞেস করলাম , ‘দাবীগুলো নিয়ে চিৎকার করছিস না কেন
? আর ভেতরেই বা ঢুকেছিস না কেন ? ওসি তো দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছে । ’ সায়নী আমাকে
সাইডে নিয়ে গেলো , ‘দেখ, সায়ন্তনী ম্যাম না আসলে এরা ভুলভাল বুঝিয়ে ছেড়ে দেবে।
আমরা নভিস , আর এটা পলিটিক্স। ’ ‘তোরা
যে বললি প্রতিবাদ করছিস। পলিটিক্স
কোথা থেকে এলো। ‘ ‘ এখন বোঝানোর সময় নেই। তবে
এটুকু বুঝে রাখ এই পাবলিসিটি আমাদের খুব দরকার। মেয়েদের উত্থান ফ্রিতে হবে না। আমাদের টাকা চাই। আর টাকা আসবে ফেমাস হলে। এটাই সুযোগ। ‘ ‘মিডিয়া কি বলছে ?’
‘ওদের আটকে রেখেছি । ভেতরে যেতে দিইনি । আপাতত লোক জড়ো করা উদ্যেশ্য।’
এর মধ্যে
এসে পড়েছেন সায়ন্তনী মৈত্র। জয়িতার
দল তাকে রাস্তা করে দিলো থানার ভেতরে যাওয়ার জন্য। আর মিডিয়াকেও ছেড়ে দেওয়া হলো তাকে ফলো
করার জন্য। ক্ষেপা
কুকুরের মতো ক্যামেরা নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করতে করতে হঠাৎ থেমে যাওয়া সায়ন্তনীর
দিকে তাক করে থমকে দাঁড়ালো ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা । সায়ন্তনী ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত তুলে থামতে
বললেন সবাইকে। হাতে
মাইক নিয়ে বজ্রকণ্ঠে বললেন , ‘ নারী খেলার পুতুল নয় । যে নারী শিশু এবোরশন এর ছুড়ি
কাঁচির ধার পেরিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে সে সাধারণ হতে পারে না । এই ভ্রষ্ট ,
অত্যাচারী , বিকৃত মনস্ক পুরুষের দল তাদের নোংরা ক্ষুধার পরিতৃপ্তি করতে চেয়েছিলো
। আমরা তাদের ছেড়ে দেব না । দিতে পারিনা। রোমিতা
একটা নাম । সেটা আপনাদের যে কারো মেয়ে হতে পারতো । আমরা এর বদলা নেবো । আইনও নারী । তাই তার প্রথম সুযোগ ।
আগে আইনি মতে লড়বো । নাহলে রক্তের বদলে রক্ত । ভারত মাতার জয় । ’
জয়ধ্বনি
চলতে থাকলো। মাইক
ছুড়ে দিয়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সায়ন্তনী দেবী ঢুকে গেলেন থানার ভেতরে। পেছন পেছন উগ্রমূর্তি জয়িতা ভীষণ এক
মুখভঙ্গি নিয়ে থানার ভেতরে অদৃশ্য হলো। এর
পরের আধঘন্টায় জয়ধ্বনি , মুণ্ডুপাত
, সমবেত গান , রণহুঙ্কার চলতে লাগলো। কি
ভীষণ রূপ ধারণ করল এক শান্ত শহরের ছিমছাম থানা চত্বর। কখন বন্ধুরা পাশে চলে এসেছে জানিনা। শৈবাল বললো , ‘খুব লজ্জা করছে মাইরি ।
পুরুষ হয়ে । ’ সন্দীপদা
বললো , ‘ এই লজ্জাতেই তো ওদের পাশে আছি । যখন ওরা পেশী চাইবে , এগিয়ে যাবো । এখন
বুদ্ধিতে লড়তে দে । এতে ওরা অনেক আগে।’ অদ্রীশ একটু অসহিষ্ণু , ‘আমরা কেন দাঁড়িয়ে
আছি । ঢুকলেই তো হয় । মব মারলে তো খুনের দোষ হয়না । আর রেপের একটাই শাস্তি মৃত্যু
।’ আমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম নারীশক্তির প্রদর্শন। চন্ডীপাঠ হচ্ছিলো কানের কাছে। এই সম্মিলিত শক্তির প্রদর্শন আমি কখনো
দেখিনি। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম কমনীয় দুর্গার
মহিষমর্দিনী রূপ।
থানার
ভেতর থেকে এক এক করে বেরিয়ে আসছে মিডিয়া, পেছনে সায়ন্তনী সাথে জয়িতা। কিন্তু একী। ক্যামেরা সব নিচে , মাইক নিচে , তার
গোটাতে গোটাতে আসছে। সায়ন্তনীর
মুখ থমথমে। জয়িতার
মুখ পাংশু। যেন
ভয়ঙ্কর ফ্লাডলাইট মুখে মারার পর ধাঁদিয়ে যাওয়া চোখ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সায়ন্তনীকে
ভীড় ঠেলে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে গেলো তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সবাই অবাক। সবাই তার মুখ থেকে “আক্রমণ” শুনতে
চেয়েছিলো। কিন্তু
তিনি মুখে কুলুপ এঁটে গাড়িতে গিয়ে বসলেন ও গাড়ি ছেড়ে দিলো। থতমত জনরাশিতে গুঞ্জনও উঠলো না। ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো নিথর এক
জনসমুদ্রের মাঝে জয়িতা মাইক হাতে তুলে নিলো , “আইন তার কাজ করছে। তাদের আমরা সময়
দিলাম । আপনারা ফিরে যান । ”
এবার
গুঞ্জন থেকে চিৎকার শুরু হলো। সবাই
জানতে চায় কি হলো ভেতরে। কি
এমন তারা দেখেছে বা শুনেছে যার জন্য তাদের নেত্রী পরাজিতের মতো ব্যবহার করছে। ঘুঁষ খেয়ে এলো নাকি , হাই প্রোফাইল
কেস নাকি , পুরোটাই কি স্পুফ , হচ্ছেটা কি ? সবাই জয়িতাকে ছেঁকে ধরলে জয়িতা শুধু
বলে উঠলো , ‘খবরটা ভুল । ফিরে যান । পরে জানতে পারবেন ।’ আমি অবাক। আরো অবাক থানার দরজায় দাঁড়ানো ওসির
ঠোঁটে লেগে থাকা মুচকি অবজ্ঞাপূর্ণ হাসির দিকে তাকিয়ে। ভিড় পাতলা হতে আরম্ভ করলো। সন্দীপদা সেই ভিড় ঠেলে একটা মিডিয়ার
গাড়ির দিকে দৌড়ে গেলো। আরে,
ওই তো অনির্বান। সংবাদ
মাধ্যমে কাজ করে। সন্দীপদা
ধরেছে।
‘ভেতরে
কি হলো বলতো। সব
ধাঁধাঁর মতো লাগছে। ‘ অনির্বান
সিগারেট ধরিয়ে বললো , ‘ওটা মেয়ে নয় । ছেলে । দশ না পনেরো বছর । গ্যাংরেপ বটে তবে
কিটি পার্টিতে । আর কি শুনবি ?’ ‘কি বলছিস রে ? ’ ‘আর কি বলবো । ফালতু টাইম নষ্ট
করলি । ছেলেটা কাজ করতো ম্যাডামের বাড়িতে । কিটি পার্টিতে মদটা বেশি হয়ে গেছিলো ।
ছেলেটাকে বেঁধে পেছনে বিয়ার বোতল ঢুকিয়ে খালি করছিলো । রক্তারক্তি কান্ড ।
সিগারেটের চ্যাঁকা দিয়েছে ঠোঁটে। ঝাঁটে
আগুনও ধরিয়েছে । গায়ে পেচ্ছাপ করেছে । মালটা প্রথমে এনজয় করছিলো । ভাবতে পারেনি
এদিকে গড়াবে। পেছনে যখন বেলন ঢোকায় তখন ল্যাংটো অবস্থাতেই পালানোর চেষ্টা করে ।
ওদের সিকিউরিটি তখন ধরে নার্সিং হোমে ভর্তি করে দিয়ে আসে। ’ ‘কেস কে করেছে ?’ ‘
ছেলেটার দাদা। শালা
প্রচুর পয়সা কামিয়ে নিলো মাইরি। ‘ ‘কেস তুলে নিয়েছে ?’ ‘তুলবে না ? এসব কেস কি
টেকে নাকি । সিমেনের ছাপ দেখলে তবেই আইন রেপ বলে মানে । এতে কি দেখাবে ? ভায়োলেন্স
? প্রুফ করবে কে ? পয়সা চেয়েছে , বুদ্ধিমানের কাজ করেছে । ’ ‘তোরা কভার করবিনা ।’
‘ভাই আমরা লাফটার চ্যালেঞ্জ নই । এই খবর চ্যানেলে দিয়ে ক্যারিয়ার খোয়াবে কে ।
পুরুষে রেপ করে , নিজে হয় না । আর ফালতু ওর লাইফটাও তো দেখতে হবে। লোকে খিল্লি করেই মেরে ফেলবে। ’ আমি বললাম , ‘তাই নারী জাগরণ কমিটি
কিছু বললো না ।’ অনির্বান একটা থুতু ফেলে বললো , ‘ওসব মাগি অনেক দেখা আছে । সবাই
ফুটেজ চায় । মেয়েদের রেপ হলে পুরুষে এসে পাশে দাঁড়ায় আর মনে নেই সেকশান ৩৭৫ এ রেপ
শব্দের বদলে সেক্সুয়াল এসাল্ট ঢোকাতে কি প্রতিবাদ না করেছিল ফেমিনিস্টরা । ভাই ওসব
ছাড় । জিম কর । আর মেয়েদের থেকে দূরে থাক । ওদের ধারণা পুরুষ শুধু সেক্স চায় , সে
যেভাবেই হোক । আর রেপ শুধু মেয়েদেরই হয় । খুব স্বার্থপরের জাত ভাই। ভগবান মাথা
দিয়েছে ওদের আর শক্তি আমাদের। নিজেকে আর ওদের প্রটেক্ট কর , যে জন্যে আসা পৃথিবীতে
, কিন্তু নিজে কেস খাসনা। ‘
ফাঁকা
থানা চত্বরে আমরা চারজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনির্বান চলে গেছিলো অনেক্ষন। শুধু ফেলে গেছিলো এমন কিছু কথা যা
গিলতে পারছিলাম না। দাঁড়িয়ে
ছিলাম চুপচাপ - উইকার সেক্স হয়ে।
No comments:
Post a Comment