Thursday, June 1, 2017

সিঁদুরদানের ঠিক আগে






ব্যাপারটা কি ঠিক করছি ? এতক্ষন সব কিছু ঠিক ছিল। এটা বেশ চাপের। টিপসইয়ের মতো।  এটা কি ? সিনেমাতে তো এক চুটকি সিন্দুর তো আঙুলে করে লাগানো হতো।  এটা তো একটা ধাবড়া বীভৎসদর্শন কৌটো।  তার গায়ে ধ্যাবড়া করে সিঁদুর লাগানো।  আর বউটাও কেমন যেন চুপ করে আছে।  কি সুন্দর লাগছে তাকে।  এই সিঁদুর দিয়ে তো পুরো সাজের বারোটা বেজে যাবে।  এক ধ্যাবড়া সিঁদুর সারা  কপালে লেগে যাবে।  বারণ করেছিলাম এই  সোশ্যাল ম্যারেজ ট্যারেজ একেবারে ভুলভাল।  সবার মাঝখানে মুরগি সাজা।  আবার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এসেছিলো দুই জামাই মিলে।  খিঁচ লেগে আছে।  তার ওপর আবার পারফরমেন্স এর প্রেসার। কি দরকার ছিল।  মেয়েদের নাকি জীবনে সবথেকে সুন্দর দেখায় এই বিয়ের দিনে।  কে বলেছে ? তার থেকে বিকিনি টপ পরে তো দিব্যি সুন্দর লাগতো সুইমিং পুলে।  আর সত্যি বলতে কি র ইস অলওয়েস বেটার।  উফ কি জ্বালাতোন।  কে একজন বলছে পেছন থেকে সিঁদুর যদি নাকের ওপর পরে তাহলে নাকি বৌ সৌভাগ্যবতী হয়।  এ কেমন ধারা কুসংস্কার।  আমার আঙ্গেল এর ওপর ওর সৌভাগ্য নির্ধারণ করবে।  বলে তো বিয়ের পর  দুজনের ভাগ্য জুড়ে যায়।  তাহলে আমার এই এক স্ট্রোকে স্ট্রাইক না করলে তো পুরো গন্ডগোল।  আবার বৌয়ের তো ডাস্ট এলার্জি।  এর থেকে যদি হাঁচি পরে র্যাশ হয় আর ফুলশয্যায় বসে বসে চুলকোতে থাকে তবে ? পুরো গুবলেট হয়ে যাবে।   কি মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।  কোনো চাপ নেই।  জানে , বৌ হবে।  জামাই ষষ্টি বাদ  দিলে জামাই কে কি কেউ পোঁছে। আজকাল তো জামাইষষ্টিতে উইশ পর্যন্ত করে না - শশুর , শাশুড়ি - জানে মালটা পালাতে পারবে না।   দাদার বিয়েতে দেখেছিলাম শুধু মাত্র টাইটান রাগার যমজ ঘড়ি বাদ  দিয়ে দাদার ভাগ্যে হরিমটর। আমার বিশেষ ব্যতিক্রম তো হবে না।  তারপর বিশাল একটা রেস্পন্সিবিলিটি।  যার মাথা মুনডু সব পরিবর্তনশীল।  কুমোর পাড়ার আধন্যাংটো গণেশের  মতো। মা ও আশেপাশে নেই।  দেখ কেমন লাগে বলে সরে পড়েছে।  আর আমি খুঁজতে চাইলেই মাম্মি বয় বলে বিচ্ছিরি রকম দাঁত বার করছে শালী গুলো।  বিয়ে ইটসেলফ খুব চাপের।  বৌদের আর কি।  নো নড়ন , নো চরণ।  বসে থাকবে  প্রথম থেকে শেষ, এমনকি বাঙালি বিয়েতে সপ্তপদীও প্রপার নয় , পিঁড়িতে করে রাউন্ড রবিন ।  আর বরের, প্রথমে বাড়ির লোকদের ঘাড়ে করে বরযাত্রী নাম দিয়ে বাসে তুলে নিয়ে আসা।  তারপর বৌ বগলে করে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আবার রিসেপশন দেওয়া। প্রথমে প্রেসার বাড়ির লোকেদের ব্যাপার। বরযাত্র মানেই যেন যাত্রাপার্টি। বন্ধুরা মাল না খাওয়ালে বসে উঠবে না, আত্মীয়রা ক্যাটাগরিতে বিভক্ত।  কেউ বয়সে কেউ শরীরে সিনিয়র সিটিজেন।  তার ওপর নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ যেন আরও বেড়ে যায় কারো বিয়ে দেখলেই।  পিসি তো কিছুতেই কাকুর পাশে বসবে না, বিড়ি খায় বলে।  ঠিক আছে , তাহলে কাকুকে তুলে কাকিমার কাছে দিলাম।  কিন্তু কাকু কিছুতেই বসবে না , "এক্ষুনি জ্ঞান দেওয়া শুরু করবে।  ভাইপোর বিয়ে বলে কথা , আজ একটু মাল টানবো না।" কাকুকে কি করে যে বোঝাই যে হবু শশুরবাড়ির কাছে প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে যদি বড়কর্তা মাল খেয়ে ঢোকে।  বন্ধুরা তো মদ আর মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত।  এই সময় কেউ উপস্থিত নেই।  যারা মদ খায় তারা ছাদে।  যারা খায়না , তারা আমার শালী পটাতে ব্যস্ত।  একটু ম্যানেজ করতে পারলেই বাকিটা বাসর ঘরে।  আর আমি সারা রাত এই হরহরে ধুতি পরে বসে থাকবো।  সে থাক।  কিন্তু বিয়েটা যে কে এই মেয়েদের মাথায় ঢোকায় জানিনা।  কি সুন্দর মিষ্টি প্রেমের গল্প লিখতাম।  কখন কদমা , কখনো মিহিদানা  কখনো কমলাভোগ।  এখন থেকে সিরিজ লিখতে শুরু করবো - দ্বায়িত্ব , কর্তব্য , সংসার, বংশবৃদ্ধি , আলু - পটল , ন্যাপকিন থেকে ডাইপার ।  কে যেন দু লাইন ছেড়ে গেছে , সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ করো প্রানপনে , ভয়ভীত হয়ো না মানব।  মানে বলেই দিচ্ছে সামনে কুরুক্ষেত্র , দ্রৌপদী পাবি বটে , তবে কুরুক্ষেত্র।  ধর্মযুদ্ধে তো বৌ এরই জিৎ হবে।  না জেতালে সেটাও তো পরাজয়।  মানে টোটাল হার।  আর তার জন্যই সাক্ষ্য প্রমান শুদ্ধ এক ধ্যাবড়া লাল টিপ্ ছাপ, খুব চাপ। মায়ের সিঁদুর মাঝে মাঝে হাতে লেগে যেত।  ওই লাল দাগ তোলা খুব শক্ত।  রক্তের ছাপের মতো।  তার থেকে হ্যান্ডশেক করলেই তো হয়, বা কোলাকুলি করে বিয়ে মুবারক বলবো  ।  এগ্রিমেন্ট এ  তো সাইন হয়েই যায়।  কবুল হ্যায়,  কবুল হ্যায়,  কবুল হ্যায় তো আরও ভালো।  সপ্তপদী পর্যন্ত ঠিক আছে।  কিন্তু এটা একেবারে ঘেঁটে ঘ।  পাশের বাড়ির দর্পণ , যে বাড়ির থেকে বেশি ফেইসবুকে থাকে।  সে লাইভ ভিডিও করতে গিয়ে ফোর্টি ফাইভ ডিগ্রি তে চালিয়ে  দিয়েছিলো।  নেহাত সিঁথি স্টার্টস বাট নেভার এন্ড্স তাই কোনো সমস্যা  হয়নি।  নাহলে জ্ঞান যা শুনতে হতো না।  আমাকেও তাই শুনতে হবে, যদি প্রথম বলে ছক্কা না মারি।  দু বাড়ির চারটে ক্যামেরা বসে আছে ধূর্ত হায়েনার মতো।  যেই মরবো, সেই খাওয়ার আগে  সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরানো খ্যাক খ্যাক করে বিষম হাসি দেবে।  বিয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটা স্টেপ দ্বিতীয় বার  করিয়েছে।  ঠিক এন্গেল পাওয়ার জন্য।  বলতে গেলাম, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে  নিয়ম আছে , একেবারেই তোলো যা তোলার।  ফ্যাক করে হেসে বললো , "দাদা কর্মই ধর্ম।  ছবিটা ঠিক না দিতে পারলে পয়সা দেবেন তো। " আমি চুপ , একটাই ভালো, সিঁদুর দান তিনবার করতে হবে।  প্রথমবারে প্র্যাক্টিস , দ্বিতীয়বারে অ্যাকশন আর তৃতীয়বারে পারফেকশন। কিন্তু বৌ মানলে তো হয়।  কালকেই লিস্ট ম্যাসেজ করে দিয়েছে , -- প্রথমবারে সোজা সিঁদুর পরাবে , কখনো গোমড়া থাকবে না , সবাই কে প্রণাম করবে  আবার ব্রাকেটে লিখেছে ঐসব দোস হু আর ব্রেভ নেভার লুক্স ডাউন ন্যাকামো ছাড়বে, কারণ ব্রেভরা বিয়ে করে না।  পুরুষসিংহ বিবাহে মুশিকম।  তার ওপর আবার দুটো পিঁড়ির ডিসটেন্স একটু আগেই বাড়িয়ে দিয়েছে।  যাতে ওয়াইড এঙ্গেলে ফটো ওঠে।  কোনোদিন পাশাপাশি বসে নিজের মুখ সামনের দিকে করে গার্লফ্রেন্ড কে এক দলা ভাত  খাইয়ে দেখো, ঠিক  যেমন লাগবে আমার এখন ঠিক তেমন লাগছে। প্লাস এই সামনে বসে পুরুতটা যা সব পড়ছে আর পড়াচ্ছে আমার বিটেক এম বিয়ের বিদ্যে শুধু জলে না পাঁকে ।  আজ ওর দিন , আসুক ব্যাটা কাল ,  নাম্বার থিওরির এলগোরিদম সি প্লাস প্লাস দিয়ে লেখাবো।   
একে বিচ্ছিরি রকম ধোয়া , সাথে কামড়ে খেয়ে ফেলি সুন্দরী বৌ , সাথে নোংরা অফিস মেসের  "আয় ফিরে  আয় স্বাধীন দেশের আহ্বান। " , সাথে পারফর্মেন্স প্রেসার , সাথে বাথরুম পেয়েছে , সাথে খিদেতে নাড়িভুঁড়ি জ্বলছে।  আমি মায়ের কাছে যাবো।  বলব,  প্লিস মা  , সরি মা,  আর হবে না।  কিন্ত কে কোথায় , আমার দিকে আদিবাসীর মতো তিলক টিলক কাটা টিকি ছাড়া আইপ্যাড থেকে মন্ত্র বলা পুরুতটা একটা গোটা সিঁদুর কৌটো লেপে দিলো ওই সিঁদুর ডালার  ওপর।  "এই নাও সিঙ্গল মল্ট " মুখ করে এগিয়ে দিলো আমার দিকে।  আমার সামনে ব্যালট বাক্স কিন্তু শুধু চুপ চাপ ফুলে ছাপ।  নাহলেই চাপ।  "এইবার " -- পুরুত বলে উঠতেই  চারপাশে   হু - লা - লা - লা -লা শব্দে প্রেতধ্বনি শুরু  হয়ে গেলো।   আর আমি -- হে হে - স্কোয়ার কাট।  











   

No comments:

Post a Comment