Saturday, June 24, 2017

প্লেন ছাড়ার ঠিক আগে




না না সব ঠিক হয়ে যাবে।  উচ্চতা তো ভালো।  খারাপ কিসের। আজ ম্যায় উপর , আসমা নীচে।  কানের কাছে ফুরফুরে হাওয়া হয়তো দেবে না কিন্তু তাতে কি?  ওপর থেকে তো নীল পৃথিবী দেখা যাবে।  কি ভালো লাগতো যখন তিরিশ তলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে নীচে দেখতাম। মানুষগুলো , জন্তু জানোয়ার গুলো সব ছোটো ছোটো গেঁড়ি গুগলির মতো দেখতে লাগতো।  আজ তবে কেন এতো ভয় করছে?  ভয় করার তো কোনো কারণ নেই।  আমি তো যাচ্ছি প্লেনে।   বহু বছর ধরে পরীক্ষিত এক যন্ত্র।  আমার আগে অনেকে তো মরেছে টেস্টিং এ।  আর একটু আগেই তো বলে গেছে যে এমার্জেন্সিতে যদি প্লেন ল্যান্ড করতে হয় তাহলে জলে ল্যান্ড করবে।  আর তারজন্যেই তো লাইফ জ্যাকেট দিয়েছে।  মালয়েশিয়ার প্লেনটা তো সমুদ্রেই আছড়ে পড়েছিল।  না না ওটা তো মাঝ সমুদ্রে।  আমার ক্ষেত্রে হয়তো অন্যথা হবে।  হাডসন রিভারেও তো প্লেন নেমেছিল। আর আমি তো সাঁতার জানি, গঙ্গাও পারাপার করেছি ।  জ্যাক ও তো জানতো।  কিন্তু মরলো তো রোসের জন্য।  না , না পাশে বসা মেয়েটার সাথে কিছুতেই ভাব জমানো যাবে না।  নিজে বাঁচুন তারপর অপরকে বাঁচার সুযোগ করে দিন। এই তো বলে গেলো, আগে নিজে অক্সিজেন মাস্ক পড়ুন তারপর অপরকে সাহায্য করুন। হসপিটালে যারাই মরে , তাদের আগে অক্সিজেন মাস্ক পড়তেই হয়।  তাহলে কি এরা যেটা বলে যে বায়ুর চাপের এদিক ওদিক হলেই অক্সিজেন মাস্ক আপনা থেকে বেরিয়ে আসবে , সেটা আসন্ন মৃত্যুর পূর্বাভাস।  না না এতো তাড়াতাড়ি মরলে তো  চলবে না।  পিথাগোরাসের ত্রিভুজের দুই কোনে আমি ভূত ও ভবিষ্যৎ দুই ছেড়ে উপরে উঠেছি।  কর্তব্য ও স্বার্থ দুটোরই ব্যবস্থা করতে হয় জীবনে।  ইন্সুরেন্স টাকা নেওয়ার জন্য বসে আছে টাকা দেওয়ার বেলায় হাজার নাটক করে।  মা কে নোমিনি করা আছে সব জায়গায়।  ছেলে গেলে  মা নোমিনির টাকা নিয়ে কি করবে।  বৌ বাচ্চার কি হবে। যদিও বৌ এর চাকরি আছে।  কিন্তু তাহলেও , যদি আমিই না থাকি তাহলে জীবন কি।  যদিও দ্বিতীয়বার বিয়ে সে করতে পারে।  কিন্তু বাচ্চাটার  সব কিছু গুবলেট পাকিয়ে যাবে।  সব ডকুমেন্টেশন ঠিক ঠাক করা আছে যদিও।  সব ইউসারনেম আর পাসওয়ার্ড একটা ফাইলে স্টোর আছে।  ফাইলটা যদিও পাঠিয়ে দিয়েছি বৌয়ের কাছে ইমেলে।  ও ঠিক বার করে নেবে টাকা পয়সা কোথায় কি আছে। পারবে কি? আমার মরে যাওয়ার পর যদি আমার একাউন্ট ও এক্সেস করে তাহলে সেটা তো ক্রাইম হয়ে যাবে।  না না , স্পাউস তো মরে যাওয়ার পর বেটার হাফ, আর তার আগে বিটার হাফ।  কি সব চিন্তা করছি।  পঁচাশি শতাংশ তো করেই রেখেছি।  নতুন মিউচুয়াল ফান্ড শুধু ওই ফাইলে আপডেট করা নেই। বাকি ও বার করে নেবে।  আর বার বার মরে যাওয়ার কথাই বা চিন্তা করছি কেন, হাত পা ভেঙে পঙ্গু হয়েও তো পরে থাকতে পারি। কত সৈনিকের ঘটনা আছে।  আর এরা তো আবার প্যারাসুটও দেয় না।  শুধু নানা মিষ্টি আস্বস্তি ছড়ায়।  এই তো সেদিন পড়লাম, প্লেনে দুটো ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও তেইশ হাজার ফুট থেকে শুধু হাওয়ায় ভাসিয়ে প্লেনকে  গ্রাউন্ডে ল্যান্ড করানো যায়।  কিন্তু তার জন্য দক্ষ পাইলট লাগে।  বেসরকারি সিস্টেমে কি ভরসা করা যায়?  কি ভাবে যে তাদের ট্রেন করা হয়েছে কে জানে।  আমরাও তো ফ্রেশার দের দাঁড় করিয়ে দি ক্রিটিকাল এপ্লিকেশন হ্যান্ডেল করতে।  ফেল করলে ইয়ে , মানে , হচ্ছে , আমতা আমতা করে কাটিয়ে দি।  ফেল করলে ব্যাক আপ তো আছে।  আমার জীবনের ব্যাকআপ কি ? এই আছি , হঠাৎ করে পেছন থেকে যম এসে ধপ্পা করলেই ফুড়ুৎ।  নো ব্যাকআপ।  পাইলটের গলা তো শুনলাম। 
একবার দেখে আসলে হতো না।  আমার থেকে বয়স কি বেশি হবে? কিন্তু বয়স বাড়লেই তো অভিজ্ঞতা বাড়ে না।  অনেক বুড়োও গবেট হয়।  লার্নিং দু প্রকারে হয় - অবসারভেশন আর আবসর্প্শন।  মানে দেখে শেখা আর থেকে ঠেকে শেখা।  যদি কো  পাইলট কে অন জব ট্রেনিং দিতে গিয়ে পাইলট এর ইচ্ছা করে কোনো একটা এরর জেনারেট করে সেটা অন স্পট সল্ভ করে দেখানোর। আর যদি ঠিক করার সময় ফেল করে তবে? কি চাপ।  না একবার দেখে আসলে ভালো হয় কে চালাচ্ছে। যাবোই বা কি করে।  এখুনি সুন্দরী এয়ারহোস্টেসগুলো ক্যানাইন বার করে ঝাঁপিয়ে  পরে বসিয়ে দেবে।  এতক্ষন ধরে গলা ফাটাচ্ছিলো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস বন্ধ করুন করে করে।  কিন্তু পাশের মেয়েটি তো দিব্যি ফেসবুক করে চলেছে।  ওই তো, আজ ম্যায় উপর লিখে ডাকফেসে ছবি দিচ্ছে।  রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সত্যি যদি কোনো কনফ্লিক্ট হয়।  এতো বড় যন্ত্রের রেডিও সিগনালে কি এই মোবাইল সিগন্যাল কিছু করতে পারবে।  কি জানি।  বিজ্ঞানে তো আটকে যাচ্ছে।  কিন্তু সাবধানের মার নেই।  আবার সুন্দরীদের বলেও কোনো লাভ নেই।  এর এই ছোট্ট ডিভাইস যদি কিছু গন্ডগোল করে তাহলে পাইলটের স্কিলের ওপর পুরো ভরসা করতে হবে।  কিন্তু যদি পাইলটের হঠাৎ হার্ট এটাক হয়।  তাহলে তো কো  পাইলট আছে।  কিন্তু যদি তারও এক সাথে হয়।  এটাও তো হতে পারে যে ,যেহেতু পাইলট দারুন আর তাই কো পাইলট কেয়ারলেস হয়ে ফ্রি মিনিয়েচার ভদকা দশ পেগ মেরে উল্টে পরে আছে আর ঠিক সেই সময় পাইলটের হার্ট এটাক হলো। উফ কেন যে উঠতে গেলাম।  সারা পৃথিবী কেন ট্রেনে করে ঘোরা যায়না।  আমেরিকা শালা সবার থেকে আলাদা হয়ে বসে আছে।  একদিকে প্যাসিফিক আরেকদিকে আটলান্টিক।  না না কোনো ভয় নেই।  ডর কে আগে জিৎ হ্যায়। ভয় কে আটকানোর জন্য সবাই বলে ভয়ের কারণ অন্বেষণ করে কি করে তা সমাধান করা যায় সেটা জানতে হয়। এই এঙ্গেল এ চিন্তা করলে প্রথমে আমাকে প্লেন চালাতে শিখতে হবে।  চার পাঁচ পেগের পর যদিও যে কেউ প্লেন চালাতে পারে, কিন্তু সেরকম নয়।  আরেক পদ্ধতি হলো ভয় যেসব জায়গা থেকে ঢোকে সেগুলো আটকে দেওয়া, মানে ভয় যেহেতু একটা সেন্স , তাই ইন্দ্রিয় গুলোকে ঢেকে দিলেই সব শান্তি।  সেটাও করেছি, পুরোটা পারিনি কিন্তু অনেকটা করেছি।  কানে ইয়ারফোন না, ইয়ারবাড্স গুঁজে মেটালিকা চালিয়েছি , নাকের ঠিক নিচে আতর লাগিয়েছি , মুখে চুইংগাম চেবাতে চেবাতে গেম খেলছি এমনকি উইন্ডো সিট পর্যন্ত নিই নি।  আইল সিট্।  তবু পেটে একবার খেজুরের একবার আঁখের গুড়।  সবাই বলে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে কম ঝাঁকুনি হয় কারণ অনেক উঁচু দিয়ে চলে , তার ওপর আবার বোয়িং হলে কথাই নেই।  যত ভারী প্লেন তত নাকি ঝাঁকুনি কম। ঝাঁকুনি হোক কিন্ত এয়ার পকেটে যেন না পরে।  পড়লেই অনেক উঁচু থেকে ধপাস করে পড়বে শুনেছি।  যদি তখন আমি দাঁড়িয়ে থাকি।  সিট বেল্ট বাঁধা না থাকে।  আগে থেকে তো এয়ারপকেট ধরা যায় না।  বা যদি আমি তখন বাথরুমে থাকি। ধড়াম করে শূন্যে উঠে মাথা ঠুকে গেলো, মাথা চেপে বেরোতে যাবো হঠাৎ করে বাথরুম আটকে গেলো।  আমি তো ক্লস্ট্রোফোবিক।  সাথে আক্রফোবিয়া তো আছেই।  কি হবে আমার।  আর সাথে যদি দু একটা টেরোরিস্ট ওঠে তাহলে সিক্সটিন বানানা কমপ্লিট।  আমার একেতেই ঘন ঘন মুত পায় জল বেশি খাওয়ার জন্য।  টেরোরিস্টদের  এই একটা খুব বাজে জিনিস।  বাথরুম করতে যেতে দেয় না।  আর এক দেশ থেকে আরেক দেশে ল্যান্ড করায়।  লেটেস্ট জেনারেল নলেজ ফলো করা বন্ধ করে দিয়েছি।  কোনো হোমরা চোমরা টেরোরিস্ট কি তিহার জেলে আছে ? যাকে ছাড়ানোর জন্য প্লেন হাইজ্যাক করতে হবে।  কিচ্ছু জানিনা।  কিন্তু এমনি এমনিও তো করতে পারে।  আর তাহলেই কমান্ডো একশান হবে।  আর প্রথম ছিটকে আসা গুলি আমার মাথাতেই লাগবে।  আমি আমার ভাগ্য সম্বন্ধে এইটুকু কনফিডেন্স তো রাখি।  আর কত আমেরিকা বিদ্বেষী দেশের ওপর দিয়ে প্লেনটা যাবে।  যদি কেউ নিচ থেকে গুলি করে।  ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেলে নাহয় পাইলট ঠিকঠাক  প্লেন নামাতে পারে, কিন্তু যদি ঠিক মাঝ বরাবর বাজুকা ছুঁড়ে দেয় আর এত বড় প্লেন বিস্কুটের মতো দু টুকরো হয়ে যায়।  এই রে , আমি আবার ফোর্টি ফোর বি।  ইমার্জেন্সি লাইনে।  মানে ঠিক মাঝ বরাবর।  ঠিক আমার লাইন দিয়েই দু টুকরো হয়ে যাবে আর আমি টুক করে পরে যাবো।  ধুর ধুর এসব কি ভাবছি।  তার থেকে ফ্রি হুইস্কির কথা ভাবি।  সাথে সুন্দর সুন্দর খাবার।  আহা আলমন্ড দিয়ে ক্র্যানবেরি আপেল জুসের সাথে ভদকার তো জুড়ি মেলা ভার।  কিন্ত যদি খাবারে বিষ থাকে।  অন্তর্ঘাত তো হতেই পারে। অন্তর্ঘাত না হলেও ফুড পয়সন তো হতেই পারে।  হাজার হোক ফ্লাইট মুম্বাই থেকে ছাড়ছে আর মুম্বাইয়ে ইঁদুর মারা পাপ।  আমি বাবা কুড়কুড়ের যে প্যাকেট নিয়ে এসেছি তাই দিয়েই চালাবো।  এমনিতেও ফ্লাইটের বাথরুম খুব ছোট পায়খানা পেয়ে গেলে কি হবে।  তারওপর কাগজ শুরু জল নেই।  ওরে বাবা , সে আর এক চাপ।  সব না হয় মেনে নিলাম কিন্তু যদি ওঠার সময় বা নামার সময় রানওয়েতে গরু ঢুকে পরে , বা একটা গোটা ঈগল আত্মহত্যা করে তাহলে তো সবাইকে নিয়ে মরবে এক সাথে।  ধুর ধুর ধুর ধুর এই একরাশ বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনার কোনো মানে হয় না।  যা হয় হবে।  দেখা যাক না কি হয়।  মরলে মরবো।  দুঃখ থাকবে একটাই, যে ফালতু মরবো। কিচ্ছু না করে , বসে বসে।  কিন্তু ফেমাস হয়ে যাবো।  অন্তত ছেলেপুলে বলতে পারবে যে ওই যে প্লেন এক্সিডেন্ট হয়েছিল না লন্ডন থেকে ডেট্রয়েট যাওয়ার মধ্যে , ওই প্লেনে বাবা ছিল। আর পৌঁছাতে পারলে তো সব ঠান্ডা। ওই শুরু হয়ে গেছে।  প্লেন হঠাৎ করে স্পিড নেওয়া আরম্ভ করেছে।  ফেল করা ছেলে হঠাৎ করে বাবাকে পেছনে দেখলে যে গতিতে দৌড়োয় ঠিক সেই ভাবে দৌড় শুরু করলো প্লেনটা। ঘটঘট করে আওয়াজ হচ্ছে।  রানওয়েটাও স্মুথ না।  ভীষণ কাঁপছে।  এবার মনে হয় উড়ে যাবে।  আমার পিঠ হেলে গেছে।  শরীর ভরশূন্য।  পায়ের তলায় সুড়সুড়ি।  পিঠে চাপ, চোখে সর্ষের ফুল , গলা মরুভুমি , রোস হাত খামচে ধরেচে।  যাঃ উড়েই  গেলাম শেষমেশ । ...          

Tuesday, June 13, 2017

আধ্যানের ডায়েরী (২৫) - আমার জন্মদিন


ভেবেছিলাম লিখবো না । বাবার ওপর হেব্বি রাগ হয়ে গিয়েছিল । অত করে বলা সত্বেও যখন সেই আমার জন্মদিনে এলোনা তখন আমিও লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু যখন শুনলাম তিনি আসছেন ফাইনালি তখন মাফ টাফ করে দিয়েছি। হাজার হোক বাবা তো । কাহাতক রাগ করে থাকা যায় । তার ওপর একটা লাল টুকটুক ট্রাইসাইকেল পাঠিয়েছে । আর একটা অদ্ভুত খেলনা । তার গল্পই তো আজকে বলব। আমার জন্মদিনের গল্প ।

তখনও আমার জন্মদিন আসতে এক রাত বাকি । সকালে উঠলেই আমার হ্যাপ্পি বাড্ডে । রেগুলার মতই আমি অনেক রাতে খেয়ে খেলা করছি । হঠাৎ দেখি মা দৌড়ে বেড়াচ্ছে । কোনও কিছু ঘটার আগে মা একটাই কাজ করে , দৌড়ায় । আমি তখন বসে বসে টিভিতে শাকিরার গান  দেখছিলাম । কোথা থেকে মা এসে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেল , “আরে চল চল,  কেক কাটতে হবে তো। বারোটা বাজতে চলল তো ।” আমি বেশ থতমত খেয়ে গেলাম। প্রথমে মা আমার বারোটা বাজাতে চলেছে । আর তারপরে কেক কাটবে । অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম আমার জন্মদিনে কেক কাটা হবে । কিন্তু কেক যে কি বস্ত সেটা জানিনা। এটলিস্ট এটা একটা হাপি ইভেন্টে কাটা হয় সেটা জানি । কিন্তু এই এত রাতে কেন? জন্মদিন তো কালকে। আর মাই বা আমার বারোটা বাজাতে চলেছে কেন । তাহলে কি মা আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে । মা বাবাকে বলেছিল । এই এক বছর একা একা সামলেছি আর একদিন বেশী হলেই আমি ওকে দিয়ে আসব । কোথায় দিয়ে আসবে সেটা বলেনি । মা কে না কিরকম জুজুবুড়ির মত দেখতে লাগছিল । সত্যি আমাকে কোথাও দিয়ে আসবে না তো । কেক টা কি ?

  সন্দেহ আরও ঘনীভূত হল যখন একটা নতুন জামা পরিয়ে দিল  মা । আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। তবু দেখি মায়ের কোনও উচ্চ বাচ্চা নেই । দিব্যি হাসি হাসি মুখে আমায় আদর করে চলেছে । এর পর দেখি দুটো ফোনে দুটো মুখ ফুটে উঠলো একটা মাসির , আর একটা বাবার । তাহলে কি সবাই আমায় বিদায় জানাবে । হাউ হার্টলেস । এরপর একটা বিশাল বড় বাক্স খুলে গেল । দেখলাম একটা বড় সাদা কিছুর ওপর অনেক কিছু লেখা । আর দুটো হলুদ আপ্পু দুদিক থেকে একটা বড় লাঠির ওপর ঝাপিয়ে পড়ছে । এ তো হাডুপের আপ্পু । আমার যেমন আপ্পু , ডাগ কাটিং কাকুর ছেলের আপ্পুর নাম হাডুপ । বুঝলাম ওটাই কেক আর ওর ওপরেই একটা বড় সর মোমবাতি লাগিয়ে মা বলল , “হ্যাপি বাড্ডে টু ইউ ...।। ”  অনেক বড় গান । ইয়া বড় । সাথে সবাই গাইল  , বাবা , দাদু , দিদা , মাসি সব্বাই । ব্যাপারটায় যেরকম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম সেরকম ব্যাপারটা নয় । কিন্তু ঐ কেক জিনিসটা কি বিচ্ছিরি খেতে। কি মিষ্টি রে বাবা । আর আবার মা কেক তুলে তুলে মুখে মাখাচ্ছে । এ আবার কেমন ধারা ঢং । আমি কি ক্যানভাস না দেওয়াল । আর ঐ চ্যাটচ্যাটে জিনিসটা না মাখালেই নয় । তায় এত মিষ্টি । তোমরাই তো বল , “সুগার ইস ব্যাড” আর তুমিই তুলে তুলে গায়ে মাখাচ্ছ । আমার স্কিন খারাপ হয়ে গেলে কি হবে? ইউ গাইস ক্রিয়েট ইওর ওন প্রবলেম অ্যান্ড ইনভল্ভ এভরিওয়ান । আর বাবাই নাকি ঐটা ডিসাইন করে পাঠিয়েছে। বাবার মুখচোখ কিরকম রহস্যময় দেখলাম ।  

রাতে শুয়েছিলাম এই ভেবে যে বাবা সকাল বেলা আমায় ঘুম থেকে তুলে হ্যাপ্পি বাড্ডে বলবে । একজন বলেছিল বাবারা সুপারম্যান হয় । দেখবি ঠিক উড়ে উড়ে চলে আসবে। আমি ওসব ফালতু সুপেরস্টিশনে বিশ্বাস করিনা । আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা সারপ্রাইস । বাবা সারপ্রাইস দিতে উস্তাদ। এই সমস্ত ন্যাকামো করে শেষমেষ ঠিক সময়ে হাজির হয়ে সারপ্রাইস দেবে । কিন্তু কই । সকালে নিজেই দিব্যি আড়মুড়ি কাটতে কাটতে উঠে পরে দেখি বাবা নেই । আর মা দৌড়ে বেড়াচ্ছে ।
       
জন্মদিন বলে কথা । এই ধরাধামকে ধন্য করে আমি বিছানা থেকে আস্তে আস্তে এক পা নামালাম। ভেবেছিলাম ওপর থেকে ফুলবৃষ্টি হবে । কিন্তু কই কিছুই হল না । আমি দিব্যি গ্যাট গ্যাঁট করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে হাজির হলাম রান্নাঘরে । আমায় দেখেই মায়ের তড়াক লাফ । মা ভাবতেই পারেনি আমি উঠে গিয়ে মায়ের কাছে চলে আসব । চমক ভাংলে কোলে নিয়ে জন্মদিনের চটকানি ।
       

আজ নাকি আমার ড্রেস এসেছে নতুন , আমার খেলনা এসেছে নতুন , আজ নাকি অনেক কিছু খাবো । টোটাল মস্তি । আমরা জদিও অনেক কিছু প্ল্যান করেছিলাম । বাবা সব ভেস্তে দিল ।  বাবার আমার জন্য শেরওয়ানি আনার কথা ছিল । আমি আর বাবা ম্যাচিং ম্যাচিং ড্রেস পরে ফটো তুলব । কিন্ত সে কোথায় । যদিও ড্রেস আমি তখনও চোখে দেখিনি । মা বলল বিকালে মন্দিরে নিয়ে যাবে । কি মজা । সেখানে অনেক হালুম আপ্পু । সবাইকে বকে দেব । বেশ মজা লাগে।

       কিন্তু সে তো অনেক পরের ব্যাপার । তার আগে হঠাৎ করে মা পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দিল । ব্যাপারটা বুঝলাম না । রান্না ঘর থেকে কিছুতেই বেরচ্ছে না , আর দাদু আমাকেও কিছুতে রান্নাঘরে জেতে দিচ্ছে না। আজকে না আমার জন্মদিন । আজ কি আমায় বাধা দেওয়া উচিত । কিন্তু কিছু একটা হতে চলেছে যার কারনে এত কড়া কারফিউ।

       ব্যাপারটা বেশ বড় ব্যাপার । আমার জন্মদিনের লাঞ্চ প্রিপারেশান চলছিল । লাঞ্চের কথা পরে বলব । তার আগে বলি দুটো ইয়া বড় বড় বাক্সের কথা। কাল মা যখন অফিস থেকে ফিরল তখন একটা ইয়া বড় বাক্স ঠেলতে নিয়ে এলো। আমার ডাইপারের বাক্সের থেকেও বড় । আমি ঝাঁপিয়ে পরে খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু ব্যাপারটা বড়ই কঠিন । আমার “হেল্প মি” টাইপ কাঁচুমাচু মুখ দেখে মা খুলে দিতেই আমি আরও ফাঁপরে পরলাম। এসব কি । এক বাক্স ভাঙ্গাচোরা জিনিস। একটা চাকা বুঝতে পারলাম , বাকি সব গারবেজ। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে টিভির দিকে কন্সান্ট্রেট করতে চোখ সরাতে জেতেই হঠাৎ একটা কাগজ দেখলাম উঁকি মারছে । হিড় হিড় করে টেনে দেখি আমার একটা বন্ধু ওর মধ্যে একটা তিন চাকা ওয়ালা জিনিসের ওপর বসে আছে। কি সুন্দর জিনিসটা । আমার চেয়ার আর আমার প্রাম দুটোকে এক সাথে জুড়ে দিয়েছে। তায় আবার লাল টুকটুকে , মায়ের চটিটার মত।

       ওদিকে মায়ের সাথে বাবার কথা চলছে। মা বাবার কথা ফলো করলে অনেক কিছু এই পৃথিবী সম্বন্ধে শেখা যায়। সেদিন বুঝলাম ব্যাপারটা একটা গাড়ি । যার তিনটে চাকা আছে । সেটাই নাকি ভেঙ্গে ভুঙ্গে বাবা পাঠিয়ে দিয়েছে । জুড়ে নাও। আর মাও খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠলো , “আমার ওসব করার সময় নেই।” হে হে , আমি জানি , কথাটা সেটা নয় । মায়ের ক্ষমতা নেই । এসব বাবার কাজ আর বাবা হাওয়া । আবার ঢং করে জিনিস পাঠিয়েছে। বেশ কিছুক্ষন ঝগড়া টগরা করে আমার ইন্টারেস্ট দিল বাড়িয়ে কিন্তু কাজের কাজ কিছু করল না।

হেব্বি রেগে গোঁ মেরে বসেছিলাম তখন দেখি মা ওই বাক্সের পেছন থেকে আরেকটা ছোট বাক্স বার করে দিল। সেটার মধ্যে আবার একটা বাক্স। তার ওপর ফুটো ফুটো । আমায় ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। কি করব আমি এটা নিয়ে । ভোঁদার মত বসে থাকলাম। এই লারন ইওরসেলফ টেকনিক খুব বাজে । আমি বলছি ফার্স্ট টাইম স্পুন ফিডিং ইস ইম্পরট্যান্ট । এই সব বিজ্ঞের ডোবাগুলো বুঝলে হয় । আমি বেশ কিছুক্ষন ওটা নিয়ে বসে থাকলাম তারপর মা এসে ওটার ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে এক গাদা ছোট বড় গোল চৌকো কিসব বার করে আবার ঢাকনা বন্ধ করে চলে গেল । হাউ নন্‌সেন্স। ইট সাপোসড টু বি মাই খেলনা। কিন্তু বিকেম গারবেজ। চারপাশে ছড়িয়ে দিয়ে মা চলে গেল। আমি কি করি। আমি অনেক টানাটানি করার চেষ্টা করলাম ঢাকনাটা । কিন্তু নো নরন , নো চরণ । ইউরেকা, ওপরের ফুটো গুলো তো আছে । আমি একটা একটা করে জিনিস গলিয়ে দিতে লাগলাম। যতটা সোজা ভাবে বলছি ব্যাপারটা কিন্তু অতটা সোজা নয়। চৌকোটা ঠিক চৌকো ফুটো দিয়েই ঢুকবে , আর তারার মত যেটা সেটা কিন্তু গোল ফুটো দিয়ে ঢুকবে না। আমাকে অনেক প্লান করে কেরামতি করে তবে ব্যাপারটা আয়ত্তে আনতে হয়েছিল। কিন্তু মা তো অগা , ব্রেন কম । তাই কিছুক্ষন পর এসে ঢাকনাটা খুলে সব কিছু ধরাধর ঢেলে দিল। মায়ের এই সুক্ষ বুদ্ধির অভাব । আমার ব্রেন ফ্রেশ, ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড ইনোভেটিভ। বাবা মনে হয় মায়ের কাছে আমাকে জেতানোর জন্যই এটা পাঠিয়েছিলো।

ওদিকে তখন দাদু আমার ড্রেস বার করেছে। বাবা যেহেতু দেশি ড্রেস বগলে পুরে বসে আছে । তখন একেবারে খাঁটি এদেশি একটা ড্রেস নিয়ে মা চলে এসেছে । বেশ মজাদার ড্রেসটা । নামটাও বেশ , “থ্রি পিস সুট” । সুট নামটা শুনেই আমার হাসি পেয়ে গেল। এ আবার কি নাম। তায় আবার থ্রি পিস। এক দুই তিন। জামা , প্যান্ট আর কোট। এই এত জোব্বা আমার বিশেষ ভালো লাগে না । আমি বেশী হট তো , তাই শুধু ডাইপারেই খুশি । কিন্তু আজকের জন্মদিন ইস স্পেশাল। আজকে আর রোজকারের মত ড্রেসে থাকলে চলে না। কিন্তু ভয়ঙ্কর চুলকাচ্ছিল। আর ওদিকে মা তখন ক্যামেরা তাক করে বসে আছে। আমার হেব্বি বিরক্ত লাগছিল। একটাও ভালো পোস দিয়নি। কিন্তু ঐ যে মা যেই বাবাকে বলল আমি “থ্রি পিস সুট” পরেছি কোথা থেকে একটা হাসি খ্যাক খ্যাক করে বেড়িয়ে এলো। ব্যাস আমি ক্যামেরা বন্দী ।

এদিকে সারা গা চুলকাচ্ছে , ওদিকে দেখি মা খাবার সাজাচ্ছে। একের পর এক বাটি । বাটির পর আবার বাটি । তারপর আবার বাটি । একিরে বাবা । আমি তো সিম্পিল লিভিং হাই থিঙ্কিং। একটা বাটি একটা চামচ , আর চোখ টিভিতে। এরা যে কি করে না। টোটাল আনপ্রেডিকটেবল।  যখন ব্যাপারটা পুরো তিরী হয়ে টেবিলে সাজানো হল তখন তো আমি হাঁ । কেউ এত খেতে পারে ? এক দুই তিন চার পাঁচ পাঁচটা ভাজা, ডাল, তরকারী, চিংড়ি মাছ, রুই মাছ, পাঁঠার মাংশ, চাটনি, পায়েশ আর মিষ্টি । সব গন্ধ মিশে আমার গা ঘুলিয়ে উঠলো । এক সাথে টক, মিষ্টি, নোনতা সব গন্ধ মিলিয়ে আমার চোঁয়া ঢেকুর উঠে যাওয়ার জোগাড় । আমি বুঝতে পারলাম ওগুলো আমায় খাওয়ানোর চেষ্টা হবে এবার। দিলাম ককিয়ে কান্না। কি অত্যাচার আমিও খাবো না আর এরাও কিছুতেই ছাড়বে না । একদিকে দাদু একদিকে মা আর আমি অসহায় হয়ে কেঁদে কেটে হাত পা ছুঁড়ছি। আমি মিষ্টি খেতে একেবারেই পছন্দ করিনা আর সেই পায়েস আমার মুখে গুঁজবে। আমি শেষমেশ হেরে গেলাম । মুখে একটু পায়েস আমায় ঢোকাতেই হল ।

এত কেঁদেছিলাম যে গলা চোক হয়ে গেছিল। মনুষ্যত্বহীন দানবের দল । হোক সে মা , হোক সে দাদু , হোক আমার জন্মদিন। আমি বুঝে গেছিলাম যে তাদের কথামত কাজ না করলে তারা জোর করবে । এদিকে পেট জলে জাচ্ছে খিদেতে । আরও কাঁদতে ইচ্ছা করেও কাঁদতে পারলাম না । নো ওয়াটার লেফট ইন মাই স্টোরেজ । ঠিক তখনি আমার সাধের এক বাটি খিচুড়ি নিয়ে মা হাসি মুখে এলো আমায় খাওয়াতে। এর রঙ, স্বাদ, গন্ধ সব আলাদা। মনে হয় সব কিছু মিশিয়ে আমার জন্য খিচুড়ি বানিয়ে নিয়ে এসেছে। বুদ্ধি বটে মায়ের। চকাম চকাম করে সব খেয়ে নিলাম । কি শান্তি তখন।


যাইহোক সব মিলিয়ে আমার জন্মদিন অন্যদিনের থেকে অদ্ভুত গেল। আজকের ডায়েরীতে ব্যাস এইটুকুই। কারন আমার এক বছরের সিসন ওয়ান এখানেই সমাপ্ত। আবার বাবা এলে আমি আর বাবা মিলে সিসন টু লিখব। ততদিনের জন্য টা টা বাই বাই ।     


আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 

Saturday, June 10, 2017

গিন্নী ও প্রবাস - সন্দেহবাতিক গিন্নি



বিয়ে অতি বিষম বস্তু সর্বদা স্পাউসের চরিত্রহীনতার কথা চিন্তা করে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমিক্স এর মত লেখাও রিমিক্স করা উচিত। বাংলায় স্পাউস এর কোনো সমার্থক খুঁজে না পাওয়ায় আচমকা ইংলিশের প্রত্যাবর্তন। বাংলায় শুধুই বর আর বউ। হাঁড়ি আর কলসি ভাত ফুটবে হাঁড়িতে। জল ঢালবে কলসি। তবু দুজনাই মনে করে শালা অন্য হাঁড়িতে জল ঢাললে কিরকম হয়, বা অন্য কলসির জল বেশি মিষ্টি। শুধু খটামটি  আর পেটাপেটি।

কাল রাতে আলোড়ন,"যখন ছেড়ে চলে যাব তখন বুঝবে।" বাপের বাড়ির কথা মেয়েদের যত তাড়াতাড়ি মনে পরে তার থেকে অনেক দেরীতে ছেলেদের আসুরিক কন্ঠে ঘোষণা ফোটে, "মনে রেখো-ও-ও  মেয়েরা কিন্তু আগে বুড়ি হয়। আমার সুযোগ তোমার থেকে বেশি।" কপাৎ করে ইনফিডিলেটি গিলে ফেললেন গিন্নি, "সেই জন্যই তো আজকাল শুধু ফেসবুকে ঢু ঢু। আমি যেন বুঝিনা। "

মহা জ্বালাতন এই ফেসবুক কে নিয়ে। কেন যে এমন ধারা একটা আইডিয়া ফেড়ে ফেলল অর্বাচীন লোকেদের দল অবশ্য ফেইসবুক এর আগেই মহান অর্কুট প্রচুর গিলিয়েছিল পৃথিবীকে। উদ্যেশ্য ছিল মেলানো। এখন পালানো। ফেইসবুক এ প্রেম করে যে কত লোক পালিয়ে গেল বউ ছেড়ে সে আর বলা বাহুল্য।এরকম উৎপটাং প্রেম করার সুযোগ কে ছাড়ে। তবে সেও যেন সংসার এর মত। সবটাই ধাঁধা। যাকে দেখছি সে হয়ত সে নয়। সে যদি সে না হয় তবে কে? যখন বার করা গেল সে কে? ততদিনে বিয়ের প্রমিস করা হয়ে গেছে। মন ছুটছে উরু উরু হয়ে। এখন আর এক নতুন ফ্যাকরা হয়েছে, লোকে না দেখে প্রেম করে। পুরনো দিনে পত্রমিতালির কেস এর মত।
"কার সাথে প্রেম করেছিস খুকু?"
"জন বল্ভলিয়া।"
"সে আবার কে?"
"আমার পত্রবন্ধু। জার্মানি তে থাকে। আমাকে বিয়ে করবে বলেছে। "
"তা কেমন দেখতে।"
"জানিনা তো।"
"তাহলে প্রেম করলি কি করে?"
"প্রেম কি আর দেখে হয় খুড়ি?"
প্রেম যে কিসে হয় ভগবান জানে আর বিয়ে করার পর যে কি করে দপ করে প্রেমটা নিভে যায় সেটাও জানা যায়না। তখন শুধু এটাই দেখা হয় যে স্পাউস নামক মাউস টা যেন কখনো পিছলে না যায়।তাই নানা ধরনের ইঁদুর কল। আমার গিন্নি বেনামে নতুন ফেইসবুক একাউন্ট খুলে আমাকে ট্র্যাক করছিল। চোদ্দ নাম স্ত্রী বুদ্ধি। নাম নিয়েছিল, "মেঘে ঢাকা তারা " , কোনো একটা সিনেমা থেকে ঝাড়া। ফার্স্ট নেম, মিডিল নেম, সারনেম।আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে চুপ চাপ চেপে ছিল বেশ কদিন। 

আমিও সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করি না। কে জানে কোথা থেকে কি হয়ে যাবে। আবার শ্বশুর বাড়ির লোকজন পিল পিল করে ঢুকে পরছে প্রোফাইল এ। সর্বদা কড়া নজর। সেদিন কম্মেন্ট এ লিখলাম, "আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে , আছ তোমরা  হৃদয় জুড়ে। " একটু মডিফিকেশান অফ শহীদুল্লা ।তুমির জায়গায় তোমরা করতেই শালা কমেন্ট মারলো "কি জামাই বাবু নতুন দলে পা দিচ্ছ নাকি? " শশুর ভিয়া শালীর প্রোফাইল , "কি ব্যাপার ? ঝগড়া টগরা  হয়েছে নাকি?" এক বন্ধু,"সবে তো কয়েকদিন বিয়ে করলি, এখুনি তুমি থেকে তোমরা করে দিলি। " ভাই লিখেছে,"ওটা তোমরা নয় তুমি। ওটা পাল্টা নাহলে আর বাড়িতে মুখ দেখাস না।" শেষে দিদি বলল, "তার মানে গুড নিউস?" কি জ্বালাতন। যাই হোক সুরসুর করে ডিলিট করে দিলাম কমেন্টসটা। কিন্তু গিন্নি ছাড়বে কেন। সাত দিন আমার কাছ থেকে এক্স্প্লানেসন চেয়েছিল যে ব্যাপার টা  কি

তা সেই প্রোফাইল আমি যখন সাত দিনেও এক্সেপ্ট করলাম না। আর রিমুভও করলাম না তখন একদিন বউ গায়ের কাছে এসে সোহাগ করে বলল, "ওগো, তুমি দাদার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আড্ড করলে না কেন?"  আমি অবাক, "কোন দাদা" "মেজদা " "কি নাম?" একটা ভয়ংকর খাঁটি বাংলা নাম নিয়ে ফেলল বউ। আমিও মিউ করে সাউন্ড করে রাত্রে শোয়ার আগে এক্সেপ্ট করে নিলাম সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। ঘুমের তরসে খেয়াল ছিল না, মেজ শালা আর  বড় বৌদি কে ঘরে ঢুকতে দিয়ে সাথে ভুল করে ইয়েস বলে দিয়েছি মেঘে ঢাকা তারাকে। ব্যাস আর যায় কোথায়। পরের দিন সকালেই দেখি বাক্স প্যাটরা  নিয়ে বউ হাওয়া  

খোঁজ খোঁজ খোঁজ। বিকেল বেলা মাস শশুরের ফোন, "এসব কি শুনছি বাবাতুমি নাকি অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছ।" আকাশ থেকে পড়া পুরনো হয়ে গেছে। এখন পুরো ঘষে গেলাম কি করেছি কি করেছি ভাবতে ভাবতেই মাসতুতো শালী ফাসেবুকে পিইং করল, "জামাই বাবু , সারাদিন ফেইসবুক এ বসে আছ আর দিদি এখানে আমার কাছে চলে এসেছে। কি করছ কি।" 

কথাটা সত্যি। বউ রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে পুরুষের কোনো অধিকার নেই ফেইসবুক করার। কিন্তু কিছু করার নেই। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার হোম পেজ করে রেখেছি ফেইসবুক কে। অফিসের ল্যাপটপে এ এক ঘোরতর অপরাধ। অফিসওয়ালা দের কাছে নয়। যাদের জন্য অফিস করি তাদের কাছে। তাদের কাছে পুরুষ মানেই হলো ন্যাজ নারা  গরু। সরি পুরানো উপমা। এখন ওয়ান ওয়ে  রাস্তার মত। জুল জুল করে তাকিয়ে থাকবে বাঁদিকের রাস্তার দিকে কিন্তু কিছুতেই বেকতে পারবে না তিন কিলোমিটারের আগে। ঘোড়ার মত চক্ষে ঠুলি পরে সোজা যাবে, সোজা আসবে। 

ধরাম করে সামনের দরজা খুলে গেল। ওপাশে কি আছে। নিশ্চই সমাধান। কারণ, বউ কিছুতেই বলবে না কার সাথে প্রেম করছি। প্রথমে খুঁজে বার করার চেষ্টা করলাম কোথায় এবং কার সাথে প্রেম করছি। তার আগে সিওর হয়ে গেলাম প্রেম করছি। বিশ্ব প্রেম , মানব প্রেম এসব নিয়ে অনেক আর্টিকেল লিখেছি অনেক ওয়েব ব্লগে । আদ্যপান্ত পরে ফেললাম , যদি কোথা থেকে কিছু আলো পাই। লোকে বলে, যে আলো  দেখায় তার মুখ আলোর পেছনে অন্ধকারে দেখা যায় না। কিন্তু কোনো আলোই দেখতে পেলাম না, শুধু এক জায়গায় একটা বিবেকানন্দ ঝেরেছি পশু প্রেম নিয়ে, "জীবে প্রেম করে যেই জন। সেই জন সেবিছে ইশ্বর।" কেলো করেছে। শেষে পশুর সাথে প্রেম করছি। ভাবতেই ঘুলিয়ে উঠলো। আমার গিন্নি এই কথাটা ভাবলই বা কি করে? 

যাই হোক যখন ভেবেছে তখন তার ভুল ভাঙ্গতে হবে। ডিলিট করে দিলাম লাইন টা।সেন্ড করলাম বৌএর ইমেলে। উত্তর এলো, "আদিখ্যেতা।" তার মানে মেল সে চেক করছে।  বউ পালিয়ে ইমেল চেক করতে পারে। চ্যাট রুমে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বউ পালিয়ে গেলে ফেসবুকে বরের যাতায়াত কিছুতেই মানা যায়না। চুপ চাপ ফুলে ছাপ। গোলাপ রজনীগন্ধা, জুই ইত্যাদির একটা অন্তাবারী গন্ধওয়ালা বোকে বানিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। মেল এলো, "কচি কচি মেয়েদের এটা দিয়ে পটানো যায় আমাকে নয়।"

উল্টো পাঞ্চ।  সত্যি ইনি যখন কচি ছিলেন তখন একটা গোলাপেই পটে গেছিলেন এখন অনেক গোলাপেও চলে না। পটাতে গেলে গামছা পরে বাথরুম পরিষ্কার করতে হবে, রান্না করতে হবে না কিন্তু রান্নার পরে বাসন মাজতে হবে ইত্যাদি। মানে আগে সুন্দর গন্ধে ভরিয়ে দিতাম জীবন। এখন আমার জীবন দুর্গন্ধে ভরলেই তার শান্তি। 

একটা বিভত্স ফ্রাস্ট্রেটেড সুকান্ত মার্কা গম্ভীর ছবি তুললাম সেল্ফ টাইমার দিয়ে।  আপডেট করে দিলাম প্রোফাইল পিকচার। প্রথম কমেন্টস, মেঘে ঢাকা তারা,  "কি ব্যাপার? বউ পালিয়েছে নাকি?"  এটা কে? আমি তো মনে করতে পারলাম না আমি কবে একে এক্সেপ্ট করেছি। এ কি করে ঢুকলো? প্রশ্ন করলম, "তুমি কে?"  উত্তরে ওপেন প্রোফাইল নয়। ফেসবুক চ্যাটে লিখল "জানতে চাইলে কাল বিকেলে সিটি পার্ক এ সন্ধ্যে ছটায় পাঁচ নম্বর দোলনার কাছে আসতে হবে। " লিখলাম, "যদি দোলনা না ফাঁকা থাকে?" "আমি নীল কুর্তি পরে একটা ললিপপ খাব।" কিরকম খটকা লাগলো। ছেলেরা দোলনায় দুলে ললিপপ খাবে তবু লিখলাম, "আচ্ছা যাব।"
অফিসে একটা সাংঘাতিক টিম মিটিং এ ম্যানেজার, গ্রুপ লিডার আর জোনাল ম্যানেজার এর কাছে কুকুরের মত লাথি খেয়ে সব গেলাম ভুলে। মোবাইলে টিং করে মেসেজ এলো, "কি ব্যাপার এলে না তো।" নাম্বার টা খুব চেনা লাগলো।  পেটে আসছে মুখে আসছে না। বেশ কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে মেসেজ করলাম, "তুমি কে আর কোথা থেকে আমার নাম্বার পেলে?" উত্তর মেসেজ, "তোমার ফেইসবুক এ নাম্বারটা হাইড  করা নেই।" "তাই নাকি? তা তুমি কে? " , "মেঘে ঢাকা তারা।" আমার কেমন যেন সন্দেহ হলো।

গুবলেট পাকিয়ে গেল সবকিছু। শুধু মেসেজ করলাম, "তুমি ছেলে না মেয়ে?" "ছেলে হলে কি দেখা করবে না?" তার মানে নিশ্চই মেয়ে। আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না। ফোন করা উচিত ছিল। কিন্ত সেটাও করলাম না। এরকম একটা কন্ডিসনে যখন বউ পালায় তখন অনেকের বউ এসে খুব জ্বালায়যদিও ব্যাপারটা বিশেষ জানাজানি হয়নি বলেই মনে হয় , নাহলে অর্কুট বা ফেইসবুক এ সাংঘাতিক জালাতন চলত যেটা চলছে না। যাইহোক, মোবাইল থেকে ফেইসবুক খুললাম বাসের জানালার ধরে বসে। 

মোবাইল এ একটু অন্য ধরনের সেটআপ থাকে ফেইসবুক এর। একটু অদ্ভূত তবু একটাই ভালো অন্য ভাবে দেখলে নাকি অনেক কিছু নতুন খুঁজে পাওয়া যায়। আনমনে ঘুরতে ঘুরতে পাতার পর পাতা ছবির পর ছবি দেখতে দেখতে হঠাত খুলে গেল, "মেঘে ঢাকা তারা" র প্রোফাইল টা। কেমন একটা অন্য নেশা জেগে উঠলো মেঘে ঢাকা তারার মেঘটা সরিয়ে তারাটাকে দেখার। নাম প্রোফাইল দারুন বানিয়েছে বেশ ভালো সব কিছু। দারুন রবীন্দ্রনাথের কমেন্টস নানা জায়গায় আর এবাউট মি তেউ। 

ইন্তেরেস্ট গুলো কেনো জানিনা আমার গিন্নির সাথে মিলে যাচ্ছিল। তাহলে কি ভগবান বলছে বউ পাল্টানোর সময় হয়েছে আর একটা সেম টাইপের মাল তোমার জন্য রেডি করে ফেলেছি।না না না। বাংলা সিনেমার হিরোর অনুপ্রাস এসে ধপাধপ মুখের ওপর লাগতে থাকলো। আর অদ্ভুত ভাবে বৌয়ের জন্য মন কেমন করে উঠলো। বাড়িতে গিয়ে ল্যাপটপ টা খুলে শুকনো মুড়ি চিবোতে চিবোতে আর "আর কত কাল একা থাকব " গান শুনতে শুনতে বউ এর প্রোফাইল এর ছবি গুলো দেখতে লাগলাম উল্টে উল্টে। হু হু করে উঠলো বুকটা।মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলি। একটা কবিতা পেল লিখে ফেললাম। দুখের প্রকাশ, র-ফলায় ।

হঠাত মনে হলো কাকে পাঠাই। কে পড়বে? সবাই যদি জেনে ফ্যালে। অথচ মুরগির ডিম পারার মত কবিতা পেরে ফেলেছি। সেটা কাউকে না খাওয়ালে  কবির কবিত্ব থাকে না। এখানে স্বামী , দাদা, কাজের লোক এর থেকে কবি উপমাটা পাওয়ারফুল হয়ে গেল। ভাবতে ভাবতে "মেঘে ঢাকা তারার " কথা মাথায় এলো। সে তো আর জানে না যে আমার কি কেসআর জানলেই বা কি। পাঠিয়ে তো দি। কিন্তু মেসেযে পাঠাতে ইচ্ছা করছিল না। কবিতার মান কমে যায়। এটা বউই বলেছিল যখন আমি মোবাইল এ কবিতা লিখে মেসেজ এর মত ভেঙ্গে ভেঙ্গে পাঠাতাম। 

       তাই ওর ইমেল আইডি খুজতে লাগলাম ফেসবুকে। ইনফরমেশনে ক্লিক করে নিচের দিকে যেতেই চমকে উঠলাম। ঘটি উল্টে আলো হয়ে গেল চারদিক। শেষ মেষ সেই ফেসবুকই আলো দেখালো কার ফেস জানিনা তবে এই প্রথম দেখলাম ভক্ষক ই রক্ষক। ইমেইল আইডি তে দেখি দুটো ইমেইল আইডি। দ্বিতীয়টা  আমার গিন্নির। ব্যাস সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। স্ত্রীবুদ্ধি তে ওটা হাইড করা ধরেনি। 

       দুটো দুটো ব্রাউসার এ দুটো প্রোফাইল খুলতে আমি আরও হতবাক। কি বুদ্ধি আমার বউ এর। অসাধারণ প্রোফাইল বানিয়েছে। ফেবারিট বুক বউ এর "চার অধ্যায় " তো তারার "নৌকাডুবি " এর পর "কপাল কুন্ডলা "  তো তারার ,"দুর্গেশ নন্দিনী ". এরকম ভেবে ভেবে প্রোফাইল বার করার মত কত কষ্টই না করেছে ও আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করার জন্য। 

       মেয়েদের মাথায় ভগবান যে কিসের জাল বুনে দিয়েছিল ভগবানই জানে। কিন্তু কিছু করার নেই। গভর্নমেন্ট ল-ইয়ার কে সখ্য রেখে সারাজীবনের সাধন সঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিয়েছি যাকে তার এই ভুল কে ক্ষমা করার নামই তো সংসার। আসলে রাগ যতই হোক না কেন। এই তুচ্ছ কারণে ডিভোর্স দেওয়া যাবে না। আর একা থাকার কথা কিছু বডি পার্ট মেনে নিতে পারেনা। আমি কিন্তু আমার নধর ভুরির কথা বলছি। তারপর দ্বিতীয় বিয়ে করার খরচ আবার প্রচুর। এখনো আমার ম্যারেজ লোন চলছে। আর ক্ষমা করে দিয়ে বাড়িতে ডেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেন্টু দিয়ে কাঁচুমাচু মুখ উপভোগ করার মত সময় আর সাহস আমার নেই। 
       অগত্যা পুরুষের সেরা অস্ত্র। মাছ ধরা। খেলিয়ে খেলিয়ে। ওর ফাঁদেই ওকে ফেলা। কুরকুর করে কুরকুরে খেতে খেতে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে মেঘে ঢাকা তারার অরিজিনাল মেল এ প্রথমে কপি পেস্ট করে দিলাম সদ্য রচিত ব্যথা সম্বলিত কবিতাটাআর শেষে অনেক ভেবে গুঁজে দিলাম কিছু লাইন, 
"এটা তার জন্য লিখেছি যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমাকে সন্দেহ করে। কিন্তু আমি চাই সে ফিরে আসুক। হয়ত তুমিই সেই কারণ তাই এই কবিতা টা পরে বুঝো, কেন আমি তোমাকে আমার প্রোফাইল থেকে ডিলিট করেছি। " 

মেল টা করে ফেইসবুক থেকে ডিলিট করে দিলাম "মেঘে ঢাকা তারা" কে।  আর কিছু করার নেই। অপেক্ষা। মিটি মিটি হাসতে হাসতে বিজয়ীর মত একটা বাদাম খোলা ছাড়িয়ে শুন্যে দিলাম চুরে খোলা মুখের ওপর পরার আগেই ফোন এসে গেল, "ওগো আমার ভুল হয়েছে। আমি সরি। কাল একটা জার্দৌসী সারি কিনে দেবে?" অ্যাট লাস্ট সত্যমেব জয়তে।    


গিন্নী ও প্রবাস আগের গল্পগুলি