নানা রঙের,
নানা আকারের, কোনটা অনেক লম্বা, কোনটা ছোট,
কোনটা মোটা কোনটা রোগা। সারা বাড়িতে
আমার জন্য বাবা রেখে গেছে এক গাদা তার। ব্যাপারটা
আমার কাছে বেশ লোভনীয়। কেন হবে
না। বাকি কোনো কিছুই আমার হাতে ঠিক সেট হয় না। সেই ছোট্ট বেলা থেকে মা নানা জিনিস দেওয়ার চেষ্টা
করে গেছে। নানা রঙের , নানা শেপের খেলনা। কোনটা গোল , কোনটা চৌকো, কোনটা যেন সবকিছু মিশিয়ে। কিন্তু কোনোটাই আমি ঠিক মতো ম্যানেজ করতে পারিনা।
যখন একদিক ধরি তখন আরেক দিক ঝুলে পরে। যখন
এমনি ভাবে ধরি তখন মনে হয় ওমনি ভাবে ধরলে ঠিক ছিল। ভীষণ জ্বালাতন।
জন্মের আগে
থেকে আমি একটা জিনিস নিয়ে খেলা করতাম সেটা যে আশপাশে এতো ছড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারিনি। অনেক দিন তো শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমার
ছেড়ে আসা বন্ধুদের মিস করতাম। কিন্তু যখন একে
একে তারাও চলে আসলো আর কানেকশন বন্ধ হয়ে গেলো তখন আমি উঠে বসলাম। আর চারপাশ দেখতে থাকলাম। সেই সময় থেকে আমি বুঝতে পারলাম আমার পেটের মধ্যে
সেই লম্বা জিনিসটা যেটা ধরে আমি ঝুলে থাকতাম , আমার একমাত্র খেলার জিনিস, সেটাতেই ঘর
বোঝাই। আর বাবাও সেই একই খেলা খেলতে ভালোবাসে। তাই যখন বাবা চলে গেলো তখন আমাকে এক গাদা এই লম্বা
লম্বা জিনিস দিয়ে গেলো , যাকে বলে তার বা কৰ্ড।
বাবা না থাকার
জন্য আমি আর মা দিনরাত বাবা কে গালাগালি করি
বটে। কিন্তু যখন তার নিয়ে খেলা করি তখন বুঝতে
পারি বাবা কতটা দূরদর্শী। আমার জন্মের কত আগে
থেকে বস্তা বস্তা আমার খেলনা জোগাড় করেছে।
আর সারা বাড়িতে ছড়িয়ে রেখেছে। যখন থেকে
বসতে শিখেছি তখন থেকে দেখছি মা একটা বাক্সের
সামনে বসে থাকে। পরে জেনেছি সেটা ল্যাপটপ। আমার থেকে বেশি ওজন। একবার তো আমি দুধও উল্টে দিয়েছি ওর ওপর আর ল্যাপটপ
গেছে বারোটা বেজে। কিন্তু ল্যাপটপের থেকে বেশি
ইন্টারেস্ট আমার ছিল ওর সাথে জুড়ে থাকা লম্বা একটা তার। কারণ ওটাই আমি একমাত্র ধরতে পারতাম আর আমাকে সুন্দর
ভাবে রেসপন্স করে ওই বাক্সের থেকে খুলে আমার হাতে চলে আসতো।
এই তার গুলোর
দুটো দিক বেশ মজাদার। সবার আলাদা। আমি, মা , বাবা , দাদু , ঠাম্মা, দিদা , কাকা ,
জ্যাঠা সবাই যেমন আলাদা। ঠিক তেমনি তারগুলোর
মাঝখান এক হলেও তারের দু দিক কিন্তু সবসময় আলাদা।
কোনটা লম্বা, সামনে চকচকে , কোনটা ভোঁতা সামনে কালো, কোনটা দুটো দাঁড় , কোনটা
তিনটে আবার কোনোটাতে দাঁড়ই নেই, শুধু দুটো বা তিনটে ফুটো। আমার দারুন লাগে ওই দাঁড় গুলো চুষতে। কেমন একটা স্বাদ। বলে বোঝানোর ভোকাবুলারি এখনো তৈরি হয়নি। কিন্তু দেখেছি তারের এক দিক দেওয়ালে লাগানো থাকলে
মা যেন রে রে করে তেড়ে আসে। বুঝতেই পারিনা
ব্যাপারটা কি হয়।
শুধু দেওয়ালে
লেগে থাকে না , অনেক জায়গাতেই লেগে থাকে তার গুলো। দিন গেছে , আমি এক এক করে সবার নাম জানতে পেরেছি,
টিভি , ডিভিডি প্লেয়ার , লাইট , ভ্যাকুয়াম ক্লিনার আরো কত কি। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এর তারটা যে কত বড় সে আর না দেখলে
বলা যায় না। এই এত্ত বড়। বিশাল।
আমার থেকেও বড়। বাকিদের গুলো ছোট কিন্তু ঐযে স্পিকার এর তারটা আছে সেটা যে কোথায়
জড়িয়ে জড়িয়ে ওঠে আর বসে সে আমি জানিনা। ওটা
লিকলিকে। তবে ওর শেষ আমি দেখেছি। একটা বিশাল বড় কালো মোটা চৌকো একটা বাক্সের মধ্যে
সেটা শেষ হয়েছে। একদিন মা খুলেছিলো , সেটার
সামনেও দুটো দাঁড়। সেটা আবার দেওয়ালের একটা
বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো।
এই যে দেওয়াল
দেওয়াল করছি। আসলে কিন্ত দেওয়ালের ফুটো। অনেক গুলো ফুটো আছে দেওয়ালে আমাদের। আমি যখন হামা দিতে শুরু করি তখন ওই ফুটো গুলো যেন
ডাকতো আমায়। যখনই ওগুলোর পাশ দিয়ে যেতাম তখনই
কেমন যেন শরীর আনচান করে উঠতো। ছুটে যেতাম
ধরতে। তখন আমার আঙ্গুলগুলো ওই দাঁড়ের মতোই
সরু সরু। বিশেষ করে তিনটে ফুটোর সেট এর ওপরেরটা। বেশ ইচ্ছা হতো ঢুকিয়ে দিতে আঙ্গুল। কিন্তু আজ পর্যন্ত পারিনি , মায়ের এই সাংঘাতিক দারোয়ানগিরির
জন্য। কয়েকদিন আগে দেখলাম সব ফুটো গুলো বন্ধ
করে দিয়েছে মা। কিছু একটা লাগিয়ে দিয়েছে। তবুও সেগুলোর মধ্যে থেকেও একটা না একটাতে একটা তার
লাগানো থেকেই , সেটা আমি দেখেছি। আর তার আমার
বন্ধু টানলেই আমার কাছে চলে আসে। তারপর দেখা
যায় ফুটোগুলো। দেখা যাক কবে আমার কার্যসিদ্ধি
হয়।
একদিন তো সে
এক কান্ড। অনেকদিন ধরেই দেখছি লাইট টা জ্বলে
আর নেভে। দাদু ওই ওপরের কিছু একটা লাঠি আছে
সেটা ঘুরিয়ে দিয়ে বন্ধ করে আর জ্বালায়। কিন্তু
মা দেখি লাইটের তারটা দেওয়াল থেকে খোলে আর লাগে আর তাতেই ওটা জ্বলে আর নেভে। সেদিন লাইট জ্বালানো ছিল, আমারও সুযোগ ছিল। গিয়ে মেরেছি এক টান। ব্যাস লাইট গেলো ঘাড়ের ওপর পরে। লেগেছিলো একটু
, কিন্তু নিজের দোষে হয়েছে তাই কাঁদাটা শোভন কাকু নয়। কিন্তু মা এসে চ্যাঁচাতে লাগলো , আমিও ছেড়ে দিইনি। মা তো ছাই বোঝেও না। কিন্তু তাও লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করে বাঁচতে
চাই।
ওই ডিভিডি
প্লেয়ারটা আছে না , ওর তার সবথেকে মজাদার।
লম্বায় বেশি বড় নয়। কিন্তু দু দিক বেশ
মজাদার। তিনটে তিনটে করে মুখ। যেদিন আমি একটানে ওটাকে নিচে নামালাম দেখলাম টিভিটাও
নেচে উঠলো। মা দেখলাম তখন ওটাকে খুলে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে দিলো। আর তখনি বুঝলাম সব তার দেওয়ালে লাগে না। এই তারের দুদিকেই লাল , হলুদ , সাদা তিনটে তিনটে
তার আছে। মা আমায় তারটা দিয়ে বললো ,
"না এবার খেল" কি মজাদার সেটা। নড়ালেই
তিনটে একসাথে নড়তে থাকে। আমার হাতে তখন একটা
নয় একটা, দুটো , তিনটে ,চারটে , পাঁচটা , ছটা তার একসাথে। খুব মজা লেগেছিলো।
সেদিন মা যখন
টিভির পেছন থেকে তার খুলছিল তখন উঁকি মেরে দেখেছিলাম টিভির পেছনে। ওরে বাবা ওটা তো আমার খেলার জায়গা। কত তার।
কি মজা। কিন্তু মা আমার অভিসন্ধি টের
পেয়ে গেছিলো। তাই দুদিক আটকে রেখে দিলো। অনেক দিন ধরে ট্র্যাক করেছি কি করে পেছনে ঢোকা যায়। কিন্তু মা মহা সাংঘাতিক। দুটো চেয়ার আর আমার ক্রিব দিয়ে আটকে রেখে দিলো। মাদার্স ডের দিন সুযোগ পেয়েও মেক খুশি রাখার জন্য
হাতছাড়া করেছিলাম কিন্তু সেদিন আরেক অদভূত জিনিস আবিষ্কার করলাম। এতদিন ভেবেছিলাম তারগুলো এতো শক্ত যে ছেঁড়া যাবে
না। কিন্তু সেদিন মা ল্যাপটপে কাজ করছিল। আর তারটা টিভির পেছনে লাগানো ছিল। লম্বা তার। আমি বলেছি টিভির পেছনে যাবো না। কিন্তু তার নিয়ে খেলতে তো আপত্তি নেই। কিন্তু সেদিন মাথায় একটা নতুন জিনিস চাগলো। এই তারের মাঝখানটা বেশ মোটা। চৌকো মতো।
আমি চৌকোর দুদিকের দুটো তার ধরে হেইশা বলে টান দিতেই দুটো খুলে দুদিকে চলে এলো। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকলাম। হয় আমি বড় হয়ে গেছি। নয় তারটা খারাপ হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত এর সমাধান করতে পারলাম না।
সব শেষে আমার
এই সেরা খেলনা যে কেন সেরা সেটা বলি। বন্ধু
সেই হয় যে অসময়ে সাথ দেয়। যখন আমার দাঁত বেরোনোর
জন্য সাংঘাতিক সমস্যা চলছিল যা ইচ্ছা পাচ্ছিলাম চিবাচ্ছিলাম। তখন কোনো কিছুই আমাকে সঙ্গ দেয়নি, এক্সসেপ্ট এই
তারগুলো। ধরতে সুবিধে , চিবোতে সুবিধে আর স্বাদে
গন্ধে অতুলনীয়। কি সুন্দর মুখের মধ্যে ঢুকে
যেত আর আমার উৎপীড়িত মাড়িগুলোর সেবা করতো।
তাই সবশেষে বাবাকে আবার এবং বার বার বাবাকে থ্যাংকু থ্যাংকু এন্ড থ্যাংকু বলে এখানেই শেষ করছি আমার আজকের ডায়রী
।
No comments:
Post a Comment