Saturday, May 13, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - আমার ঘুম


প্লিস মা আমি আর একটু ঘুমাব । সেই সকাল থেকে খেলেছি যে মেলা । এখন আমি তো
মার পাশে শুয়ে, করব শুধু ঘুম ঘুম খেলা। তুমি কেন মা উঠে পড় আগে । আমার সাথে একটু খানি শোও । একটু খানি জিরিয়ে নিলে পরে , তোমায় বকবেনাকো কেউ। তুমি শুধু চিন্তা কর মা। ভাবো শুধু বাবা কেন আসছে না । আমি জানি বাবা ওখানে চেষ্টা করছে খুব , আমার কাছে দৌড়ে আসবে চলে। তখন তুমি বকে দিও খুব , দিও গাঁটটা , দিও কান মুলে । আপাতত আমার পাশে শুয়ে , সুরসুরি দাও আমার বুকে পিঠে, যেমন করে বাবার পাশে শুয়ে , আঙ্গুল চালাতে বাবার বিশাল পিঠে । ঘুমটা আমার তোমার থেকে পাওয়া , ঘুমের মধ্যে হাসি বাবার ঝাড়া , এইটুকু তো শান্তি তোমার পাওয়া, তাও কেন মা আমায় দাও পাহারা।  আমি তখন বুঁদ হয়ে যাই স্বপ্নে, খিলখিলিয়ে মিত্তি মিত্তি হাসি । তুমি জানো মা বাবাও স্বপ্নে আসে, বলে আধ্যান তোকেই ভালবাসি । আমি জানো মা উড়তেও পারি ভালো, ঠিক যেন ওই প্যাঁক প্যাঁকটার মত, উড়তে উড়তে ডিম পেড়ে দিই আমি, তখন তুমি ডাইপার নিয়ে ছোট। 

প্রথম প্রথম বেশ মজাদার লাগত, যখন ঠাম্মি বালিস বানিয়ে দিল, খোলের মধ্যে শর্ষে পুরে পুরে, নরম মাথা শক্ত করে দিল। তখন আবার বাবাও ছিল সাথে, কোলবালিশ ছিল বাবার হাতটা, এখন দুটো তুলোর বালিশ দিয়ে, বেঁধে দিয়েছ আমার খেলার মাঠটা । জানি আমি ঘুমের মাঝে , একটু নরি চরি , একটু অসাবধান হলেই , ধপাস করে খাটের থেকে পড়ি। বাবা যখন বলে ওখান থেকে , একটু আধটু পরলে কি হবে, তুমি তখন খেঁকিয়ে উঠে বল , “এখানে এসে সামলাও তবে।” কিন্তু মাগো, আমিই বা কি করি, বাবার মধ্যে লুকিয়ে ঢুকে থাকতাম, বাবার হাতের গণ্ডী ছিল আমার , আমার দৌড় তো ওখানে সীমিত রাখতাম । তোমারও একটা গণ্ডী আছে বটে, তবু বাবার মত জাপটাতে কি পারো, তুমিই বা কি ভুলতে পেরেছ সেটা , আমার কথা আপাতত ছাড় । 

মনে আছে মা, দুধ খাওয়াতে গেলে, আগে আমায় ঘুম পাড়াতে হত, গান গেয়ে গেয়ে ঘুম পাড়ালে পরে, তখন মুখে নিপল দেওয়া যেত। ভাবতে পারো আপদ ছিলাম তখন, এখন তবে কি হয়েছি আমি, এখন তোমার হিসেব গেছে পালটে , টিভি এখন ঘুমের থেকে দামি। এখন আমায় খাওয়াতে গেলে পরে, টিভির সামনে রোজ বসাতেই হবে, চললে টিভি তবেই চামচ ঢুকবে, একটি  বাটি খিচুরি খাবো তবে  । থাক সে কথা, কোথায় আমি ঘুমের কথা বলতে, খাওয়ার কথা, টিভির কথা কোথা থেকে এল যে পথ চলতে । 

তোমার যে সেই বিশাল জন্ত্র, নড়িয়ে সাফ করো, যেটা বাবাকে পাগল করে , বাবা বলে , “মাফ করো।” সেই শব্দের যন্ত্রণাতেও  আমার ঘুম ভাঙত না, বাবা বেচারা কাঁচুমাচু মুখ, আমার ট্রিক্স জানত না । আমি তখন মাঝমাঠেতে , গোলের দিকে লক্ষ্য স্থির, জনতা চ্যাঁচাক, ভিড় জমে যাক , আমার মাথা শান্ত নীর । বাবাকে যখন শেখাতে গেলাম, জড়িয়ে ধরে গাইল গান, অন্য রকম গলার গানে , জুরিয়ে গেল আমার প্রাণ। এলিয়ে শরীর বুকে মাথা রেখে ঝুলিয়ে দিলাম মুঠো, কি অবসাদ আসল নেমে, জুড়িয়ে এল আমার এ চোখ দুটো । 

আগে আমি খুব ঘুমতাম, নাকও হয়ত ডাকতাম, আসলে আমি বাড়ছিলাম না , মাঝে মাঝে তাই জাগতাম। এখন আমার ঘুমটা কম । এখন শুধুই খেলা । সকাল বিকাল দুপুর রাত্রি গোধূলি সন্ধ্যাবেলা । ঘুমনো এখন পাপের মত, হাতে সময় খুব কম , সুজ্যিমামা উঠবোস করে,  আমার যে তাই নেই দম । আমার হালুম , আমার আপপূ  , আমার খুন্তি, হাতা, দরজাগুলো , গ্যাসের বোতাম আর আমার ন্যাতা । গোলগুলোকে ঘুরিয়ে দিয়ে , চৌকো সোজা করে, ত্রিকোণ গুলো বেঁকিয়ে ধরে , লাইন ধরে ধরে। সারাদিনটা যায় যে কেটে শিখতে শিখতে জীবনটা, সাথে সবার আহাম্মকামি বার করে দেয় এ প্রাণটা । 

সবার শেষে তাই তো মা গো শরীরটা এখন ক্লান্ত খুব , এস না মা একসাথেতে ঘুমপুকুরে দিই যে ডুব । আমি জানি মা, রোজ রাতেতে আমায় ঘুম পারিয়ে তারপরে , ঘুমাতে যাও কিছুক্ষনের জন্য , পরের দিনের জোগাড় সেরে। সকাল বেলা অফিস তাড়া, আমার খাওয়া প্যাক করে, আজকে না হয় যেওনা অফিস , আমায় দাদুর কাছে ছেড়ে । তার থেকে আজকে আমি শান্ত হয়ে ঘুম মারি, আমার সাথে চল গো মা , ঘুম পারাবার দিই পারি। দুজন মিলে নাক ডাকি আর নাল ফেলে যাই বুঁদ হয়ে , কি হবে খেটে খেটে সব কাজেতে ফার্স্ট হয়ে। জানলা গুলো বন্ধ করে, ব্লাইন্ডগুলো দাও টেনে, হাল্কা করে জ্যাজ চালাও গুনগুনাও আপন মনে। ল্যাভেন্ডার মোমবাতিটা নিভু নিভু জ্বলতে থাক, আজকে উপোষ , ঘুমই খাবার , প্লেট পর প্লেট চলতে থাক। আয়রে মা রে , আমি তোকে গান গাইয়ে ঘুম পাড়াই, ক্লান্ত শরীর শান্ত হোক , কাজের এবার ভুত ঝাড়াই । ফুরফুরে এই মিষ্টি সকাল ঘাম ঝড়ানোর জন্য নয়, ঢুলতে ঢুলতে কফির ঠ্যাঙায় কাজ করাটাও কাম্য নয় । কাজের জন্য বাবা আছে , তুই আমি আয় করি আরাম , ঘুমের সময় বাকি কাজগুলি সব কন্সিডার আস হারাম। 
            

No comments:

Post a Comment