দুজনে মিলে ঝগড়া করছিলো, আমি শুনছিলাম।
আমার কাজ শোনা। রোজগেরে নই তাই মাঝখানে বলার অধিকারও নেই। যেহেতু ব্যাপারটা আমাকে নিয়ে তাই কান পেতে শুনছিলাম।
দুজনের মধ্যে এই ঝগড়া প্রথম দিন থেকে - কাপড়ের ন্যাপি না প্লাস্টিকের ডাইপার। ব্যাপারটা হাইজিন নিয়ে তাই মায়ের গলার জোর বেশি। বাথরুমের দখল তো মায়ের হাতেই। বাবা চিৎকার করে বলে
, "খুলে রাখো। হাওয়া না লাগলে বাড়বে না।" মায়ের উত্তর আর লিখলাম না। মায়ের থিসিস আমাকে পরিষ্কার রাখার থেকে ঘর পরিষ্কার
রাখার ওপর বেশি। তাই কানের কাছে ভ্যাঁ ভ্যাঁ
করে রোজ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার চালায়। ডাইপারই
ভালো মায়ের কাছে। কোন অ্যাঙ্গেলে আমি কি ছুঁড়ে
মারবো , কোথাও হলদে কোথাও হলদেটে দাগ লাগিয়ে দেব তাই নিয়ে বিশাল সমস্যা মায়ের। বাবার
ওসব হাইজিন টাইজিন ডাইজিন খেয়ে হজম করে ফেলেছে।
পারলে আমার ফোঁটায় আমাকেই টিপ্ পরিয়ে
দেয়। সেদিন ওয়ালমার্ট এ আমার মতোই একজন চিৎকার
করে বলছিলো বাবাগুলো "স্মেলি" আর "গ্রাম্পি" হয়। মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়েছিলাম। বাবা যে কিছুতেই আমাকে পরিষ্কার থাকতে দেবে না তা
প্রথম কয়েকদিনেই বুঝেছিলাম। নোনা হাত আমার নরম চামড়ার ওপর দিয়ে বুলিয়েই চলেছে , বুলিয়েই
চলেছে , যেন আমি ম্যাওছানা। কিন্তু এই ব্যাপারে
বাবাকে সায় না দিয়ে পারছি না। এই সারাদিন থলে
নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে। মায়ের মাঝে মাঝে খেয়াল হয় , "ওই দেখো নীল হয়ে গেছে , পাল্টাতে
হবে। " এতক্ষন পরে দেখলে? আমার ডাইপারে আবার ইনিডিকেটর আছে। শুনেছি নাকি পাবলিক সুইমিং পুলে এই কেমিক্যাল ব্যবহার
হয়। হিসি করলেই ফাঁসি। কিন্তু আমার তো তৃতীয়বারের পরে তবে আমার এই ব্যাগ
থেকে নিস্তার। তার আগে পর্যন্ত থপাক আর থপাক। না চ্যাঁচালে কেউ কোনও খেয়ালই করে না।
আমি যখন বেরিয়েছিলাম তখন ঠাম্মা
ছোটো ছোটো কাপরের ন্যাপি বানিয়ে এনেছিল। উক্তি ছিল , ‘ তোর বাবাকেও এই পরিয়ে বড় করেছিলাম’
। মানে , মানুষ মঙ্গল গ্রহে জমি কিনুক , ন্যাপি কিন্তু নিয়াডারথালের হিসেবেই পরতে হবে
। সেই ন্যাপি পরে, এ সি র ঠাণ্ডায় হেঁচে কেঁদে যাতা অবস্থা হয়ে শেষে বাতিল করতে হয়েছে
দেশি ন্যাপি। আর আগমন হয়েছে এই আপদের। কি জ্বালাতন । সত্যি বাপু রকেট বানানো ছাড় ,
আর আমার রকেটের দম বন্ধ পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর কিছু ব্যাবস্থা কর । আর ভালো লাগে
না ।
এর মধ্যে হঠাৎ করে বেড়ে গেলাম।
আমার সম্পত্তিও বেড়ে গেল। কিন্তু ডাইপার নতুন কেনার নাম গন্ধ নেই। আমার আর কি আমি দিব্যি
ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বার করে জেতে লাগলাম। পরিস্কার করা তো বাবা মার কাজ। আমার অপরিষ্কার
থাকতে বিশেষ ভালো লাগে না । তাই পুছে টুছে ঠিক ঠাক করে দিলে বিনিময়ে ভুবন ভোলানো হাসি
দিয়ে দিই । আমার আবার ডাইপারের আলাদা ডাস্টবিন আছে । সেটাতে আবার ঠেলে ঠূলে ঢোকাতে
হয়। এখন বড় হয়ে গেছি তাই নিজের ইয়ের গন্ধে নিজেই টিকতে পারিনা। তাই ওই বস্তু যত তাড়াতাড়ি
বিদেয় হয় তত ভালো।
ওই ডাস্টবিন খালি করার দায়িত্ব
ছিল বাবার। কিন্তু বাবা যখন চলে গেল। তারপর থেকে ডাইপার নিয়ে আসার দায়িত্বও মায়ের,
পরানোর দায়িত্বও মায়ের, আর এই ডাস্টবিন খালি করার দাওিত্বও মায়ের। নতুন ডাইপারের বোঝা
আবার বিশাল । একসাথে নাকি একশ ডাইপার কিনলে সস্তা পরে । তার ওপরে আবার আমাদের ঘর দোতালায়
। লিফট নেই । মায়ের একদম হালত টাইট । আমি একবার বলেছিলাম যে লেটস হ্যাভ এন এগ্রিমেন্ট
। আই উইল নট ইট আন্টিল আই ইট। ব্যবস্থাটা কিছুদিন চললেও অচিরে বন্ধ করতে বাধ্য
হলাম। প্রকৃতি , "আয় তো -ও-ও , আয় তো আধ্যান" বলে এমন আদর করে ডাকতো যে ফ্যাক
করে হেসে দিয়ে চলে যেতাম। আর কি করবো।
এখন ব্যাপারটা যখন অনেক এডজাস্ট
হয়ে গেছে। তখন মাঝখান থেকে এলো গরম। হ্যা বাপু তোমরা যতই বলো না কেন, আমেরিকাতেও গরম
পরে। একদম চরম গরম। সাথে আছে জিভে জল পড়া মায়ের রান্না। আর সেই রান্নার
চাপে ঘর হয়ে ওঠে মায়ের মতো গরম। এই গরমে সবথেকে
বড় সমস্যা কাপড়। আরে বাবা, হাজার হোক পুরুষ মানুষ তো। এ ম্যান ডোন্ট হ্যাভ টু হাইড। বাবা তো জন্মের পরেই আমার দেহতত্ব ফাঁস করে দিয়েছে। আর টেকনিক্যালি তো "ল্যাংটার নাই বাটপারের
ভয় " সো বি কুল। লেট্ মি টাচ সাম হাওয়া। মা হাফ বুঝলো , হাফ খুললো কিন্তু এই মহা আপদ ডাইপার
, "মেরা সায়া , মেরা সায়া , সাথ হো - ও - ও - গা " বলে চিপকে রইলো। কি জ্বালাতন।
আরে ব্যাপারটা তো বোঝো সব প্রসেসিং এর পর আউটপুট তো ফাস্ট এন্ড ফ্রি ফর্ম হতে
হবে। তা নয় লেয়ারের পর লেয়ার তার ওপর লেয়ার
তার ওপর লেয়ার চাপিয়ে চাপিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত
করে দিলো। বেরিয়ে গেলো র্যাশ। কি জ্বালা করছিলো। কিন্তু কিছুই করার নেই। ক্লিনলিনেস ইস ইম্পরট্যান্ট দ্যান হিউম্যানিটি। পাউডারের বোমা ফাটতে লাগলো। কতসব ক্রীম ট্রিম আসতে লাগলো। কিন্তু আমার পরিস্থিতি ঠিক হতে বেশ কয়েকটা সুন্দর
দিন শেষ হয়ে গেলো।
প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে শেষমেশ সেই দিনটা এসে গেলো। মা তখন বসে বসে ল্যাপটপ
নিয়ে কাজ করছে। আমিও তখন খেলা করছি এদিক ওদিকে।
মাথায় তীব্র প্রতিহিংসা। ঘরের এক কোণে
একটা টেবিল আছে। টেবিলে বেশ কয়েকটা ছবি আছে
, কার কে জানে। কোনটা আমার মতো নয়। শুধু একটা আপ্পুর মতো। মা রোজ সকালে ওর সামনে বসে
হাততালি দেয়। শুধু আওয়াজ করতে পারেনা। আমি ওটা লন্ডভন্ড করে দেওয়ার তাল করলাম। কিন্তু দাদু চোখে চোখে রেখেছে আমায়। মাও মাঝে মাঝে দেখে নিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে এসে গেলো সুযোগ। দাদুর নাক ডেকে উঠলো , মা ফোন তুলে ডায়াল করছে। আর আমি তীব্র গতিতে ছুটে চললাম। কিন্তু হঠাৎ।
হঠাৎ কোথা থেকে কানের কাছে প্রকৃতি , "আয় তো , আয় তো আধ্যান " বলে
এতো মিষ্টি করে ডাকলো। যে ছুট থামিয়ে ভরাৎ
করে শব্দ বার করলাম। আর সব গেলো ঘুলিয়ে। মাও সজাগ।
আমি আবার পরাজিত। চুপচাপ থতমত খেয়ে
বেশ কিছক্ষন বসে থাকলাম হালুম কে নিয়ে।
মা তখনও ফোনে , তবুও উঠে এসে আমায় তুলে
নিয়ে শুইয়ে দিলো ল্যাপটপের পাশে। ভেতরের লাভা
বেরিয়ে এলে , মন শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু মনের
আগুন আমি নেভাতে দিই নি। এই সুযোগ। ভাবিনি নাকের বদলে নরুন পাবো। মা কানে ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে আমার ডাইপার খুলে
দিলো। আমার হাতে একটা ভাঙা ফোন দিয়ে ভাবলো
আমি রোজকারের মতো ওটা নিয়েই খেলবো। কিন্তু
আমি তখন অন্য ধান্দায়। মা অন্য ডাইপার বার
করতে করতে আমি সর্বশক্তি প্রয়োগ করলাম পেটে।
আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখর বাদল দিনে। আঙ্গেল
যেমনটি চেয়েছিলাম তেমনটি। সোজা ল্যাপটপে। ওদিকে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মা , "গেল গেল
গেল গেল গেল " করে দৌড়ে আসতে আসতে সব
অন্ধকার হয়ে গেলো। শুধু আমার বিজয়ী কানে নিদ্রাদেবীর
আওয়াজ বেজে চললো , "আয় তো , আয় তো আধ্যান
, আয় তো ".
No comments:
Post a Comment