Friday, April 7, 2017

আধ্যানের ডায়েরি - কি জ্বালাতন



ব্যাপারটা কি ? বলি হচ্ছে টা কি ? তোমরা ঝগড়া করছো করো , আমাকে বলি দেওয়া কেন ? এই মা আর বাবা দিন রাত কুকুর কেত্তন করবে আর মাঝখান থেকে আমায় নিয়ে টানাটানি। আমি সেই বুড়ো গরুটার মতো আর মা - বাবা হিন্দু মুসলমান।  কি যাতা অবস্থা।  এটা আজকের ব্যাপার না।  সেই কবে থেকে যখন থেকে আমি বেরিয়েছি তখন থেকে ব্যাপারটা ঘটে চলেছে।  মা বাবা তো দুই দেশে।  সাথে থাকলে এ ওকে কেটে ফেলতো, ও ওকে খেয়ে ফেলতো। কিন্তু এখন যেই ঝগড়া সেই ফোন বন্ধ।  হঠাৎ করে ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ তারপর ব্যাস শ্মশানের নীরবতা।  একদিন যায় , দু দিন যায় , ফোন আর বাজে না।  আর বাজলেও মা ওই লাল বোতামটা টিপতে থাকে। এইতো সেদিন।  কি একটা জিনিস নিয়ে বাবা কিছু বললো , আর মা প্রথমে একটু মুখ হাড়ি করলো।  তারপর আমি ওখানে বসে বসে খাচ্ছি আর ডিজনির ষ্টার ডার্লিং দেখছি।  মা সেদিন গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি করে দিয়েছিলো , সাথে মায়ের হাতে বানানো ঘি, আরো কিছু একটা সবজি দিয়ে একেবারে উত্তাল খিচুড়ি ছিল।  দাদু বসে বসে খাওয়াচ্ছিল আর আমি আয়েস করে খাচ্ছিলাম।  মা ওদিকে টেবিলে বসে খেতে খেতে বাবার সাথে কথা বলছিলো।  হঠাৎ করে কি হলে।  দেখলাম ড্রাম করে আওয়াজ।  ফোনটা টেবিলেই শুয়ে পড়েছে।  আর মা মুখ লাল করে বসে আছে।  আমার খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর আমার হজমি হলো বাবার সাথে একটু ফেসটাইম। বাবা ফেসটাইমে ঘোতলা  ঘোতলা  করবে আর আমি ঝাঁপিয়ে পরে ফোনটা কেড়ে লাল বোতামটা টিপে দিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে দেব।  এটা মোটামুটি দু চার বার হলেই আমার খাবার মোটামুটি হজম হয়ে যায় আর আমার ঘুমের টাইম আরম্ভ হয়ে যায়।  কিন্তু সেদিন দেখলাম ব্যাপারটা অন্য।  আমারও খাওয়া হয়ে গেলো।  দাদুরও খাওয়া হয়ে গেলো।  মা আমাকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন হাট্টিমা টিম টিম আর ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড গাইলো , বেশ শুড়শুড়ি কাতুকুত চুল টানাটানি ইত্যাদি চললো তার পর ধপাস করে আলো বন্ধ করে আমাকে নিয়ে শুয়ে পড়লো।  কতবার , ডাকলাম , বললাম , বোঝালাম , হাজার হোক বাঙালি তো।  বদহজম , গলা বুক জ্বলা , অ্যাসিড , গ্যাস এসব তো রক্তে।  এখানে তো আর অম্লজীন চূর্ণ পাওয়া যায় না এটলিস্ট বাবা হজমি তো পাওয়া উচিত।  কিন্তু না।  মা তখন গম্ভীর।  দুচারবার ঘ্যান ঘ্যান করতে ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে আমাকে আদর করতে থাকলো।  বুঝলাম বেশ সেনসিটিভ ইসু।  তাই চুপ করে গেলাম বটে।  কিন্তু খিচুড়ি খেয়ে কি কেউ ঘুমায় , এসিডিটি বাধ্যতামূলক।  সকালে উঠে দুধ খেতে গিয়ে সব তুলে দিলাম।  ব্যাস মা ফায়ার।  বাহ্ , বেশ।  চোরের মায়ের বড় গলা।  নিজে ঝগড়া করে হজমি খেতে দিলে না , আর এখন তড়পাচ্ছ।  কিন্তু কি আর বলবো , যেদিন বলবো সেদিন বলব ভালো করে।  তা ব্যাপারটা কিন্তু থামলো না।  দিনের পর দিন চলতে লাগলো মা আর ফোন তোলে না।  বাবার মোটামুটি দুটো সময় বলয় আছে।  সকাল আর রাট ৯ টা সাড়ে নটা।  আমি এখনো ঘড়ি দেখতে শিখি নি।  দরকার বেশি পরে না।  আমার এখন অফিস যাওয়ার তাড়া নেই।  ঘরে বসে এন্টারটেইনমেন্ট সেল করি।  তাতেই মোটামুটি ভাতকাপড় জুটে যায়। তা , বাবা কিন্তু ঠিক ওই সময় দুটোতেই ঠিক পাঁচটা করে কল করে, আর মা একের পর এক পাঁচটা কল কেটে দেয়।  ক্রিং ক্রিং করে বাজার পর , তারপর একটা টুং করে শব্দ আসে।  মানে কিছু একটা মেসেজ আসে , মা দেখে ইগনোর মেরে মোবাইল টা পাশে শান্ত ভাবে রেখে আমার সাথে খেলতে থাকে।  কি ইনহিউম্যান রে বাবা।  এই ছোটোলোকমিটা আমার সাথে না করলেই নয়।  দে না , একটু দেখতে দে না।  সারাদিন তো মা তোর সাথেই থাকি।  বাবা কি আর আমাকে ছুঁতে পারে, বা আমি কি আর বাবা কে ছুঁতে পারি।  এই তো একটা মাধ্যম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।  কিন্তু মেটে তো।  মাঝখান থেকে আমি কেন লসে রান করি বলতো। 

মাঝে মাঝে বাবাও দেখি ফোন করে না।  একদম চুপ।  তখন আবার অন্য রূপ মায়ের।  বার বার ফোন তুলে দেখতে থাকে সময় হলে।  কিন্তু না , বাবা ফোন করে না।  মনে হয় বাবারও আঁত আছে।  মাঝে মাঝে ঘা লেগে যায়।  তখন ব্যাকফায়ার করে।  কিন্তু সে যৎসামান্য।  কল বন্ধ হয় বটে কিন্তু টুং টাং মেসেজ চলতে থাকে।  তার মানে দুজনে বেশ কথা বলছে। ঝগড়াই নাহয় করছে , কিন্তু কম্যুনিকেট তো করছে।  আমার তো ব্ল্যাকবক্স সিচুয়েশন।  নিজেরা দিব্যি আছো আর আমাকে সাইড।  একি  ঠিক। আমি যখন বড় হবো , এখনো বড় , তবে যখন অনেক বড় হবো তখন শিশুস্বার্থরক্ষা  কমিটি বানাবো। এই মাইনর দের ভোট না দিতে দিয়ে আমাদের সত্যি ডিপ্রাইভড করে রেখেছে সবাই।

 শুধু ফোন বন্ধ করে রাখলে এক কথা।  একবার ঝগড়া হলেই হলো।  সব কিছু গন্ডোগোল করে ফেলে মা।  এতো রাগ।  কি মরতে পড়াশুনা করেছে কে জানে।  মায়ের মতো এম বিয়ে তো করছি না এটুকু শিওর।  ওখানে মনে হয় শুধু রাগ করতে শেখায়।  তাই তো ম্যানেজার হলেই রাজি হয়ে যায় সবাই।  আমি বাবার মতো কুল।  মাথায় দশ কেজির বরফ চাপানো।  যেই বাবার সাথে ঝগড়া হলো কিনা , মায়ের মানসিক প্রভাব পরে আমার খিচুড়ির ওপর।  খিচুড়ির স্বাদ থেকেই বোঝা যায় মা আজ খুশি না বোমা।  সেদিন খিচুড়িতে পুরো পাদের মতো গন্ধ বেরোচ্ছিল।  পরে জানলাম নুনের জায়গায় বিটনুন দিয়ে দিয়েছে।  এই রকম বিটকেল এক্সপেরিমেন্ট না করলেই নয়। তারপর খাবারে জলের এমাউন্ট ভুল ভাল করে ফেলে। ভুলেই যায় খিচুড়ি আর দুধ এক নয়।  মন তো তখন খ্যাঁক খ্যাঁক করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।  শুধু বাবার ওপর নয়।  গুষ্টি শুদ্ধ পাড়া প্রতিবেশী , যাকে পায় তার ওপর রাগ ঝেড়ে দেয়।  আবার আজকাল মা দেখছি বেশ লেখালেখি করছে।  অনেক বড় বড় , আবার ইঞ্জিরি তে।  কিন্তু আমার মতো প্রপার পসিটিভ লেখা লিখতে পারে না।  রাগ হলেই খিস্তিগুলো লিখে পোস্ট করে দে ফেসবুকে।  আসলে পসিটিভ লেখা কঠিন।  গালি তো যে কেউ দিতে পারে।  তবে হ্যা রাগটা কাগজ কলম বা কিবোর্ডের ওপরই ঝড়ুক বাবা , আমায় খ্যান্ত দাও। 

তা কি আর হয়।  আমিও মায়ের কুড়াল দৃষ্টি থেকে ছাড়া পাইনা। যখন রেগে থাকে , তখন এক চুল এদিক থেকে ওদিক করেছি মায়ের দুটো  ক্যানাইন যেন ড্রাকুলার মতো বেরিয়ে আসে। একদিন লাইট ফেলে দিয়েছিলাম গায়ের ওপর। আমার লেগেছিলো বটে।  কিন্তু আমি কাঁদিনি, নিজের দোষ ঢাকার জন্য।  কিন্তু না , মা এতে খুশি হলো না।  চলে আসলো আমায় জ্ঞান দিতে।  আমিও তেড়ে ঝগড়া করলাম।  কিন্তু আমার ঝগড়াটা রেকর্ড হয়ে গেলো আর বাবার কাছে চলে গেলো।  আর মা হেঁসে ফেললো।  তবে কি আমায় এবার থেকে বাবা মার্ ঝগড়ার মাঝখানে ঢুকতে হবে ? আমি বিশেষ মা বাবার মাঝে বিশেষ ঢুকতে পছন্দ করিনা। টেক কন্ট্রোল অফ ইওর ওন লাইফ।  আমি তোমাদের বাবা মা করে দিয়েছি , দ্যাট ডসন্ট মিন কি আমি তোমাদের ঝগড়া থামিয়ে , মানুষ করে দেব। নাঃ , আমি এসবের মধ্যে নেই। 



বাবা আবার ঝগড়ার খুব ফরে।  বলে মা বাবার মধ্যে ঝগড়া না হলে নাকি আমি মানুষ হবো না ভালো করে।  কোন যে আহাম্মক এই কথাটা বাবাকে শিখিয়েছে কে জানে।  ও হ্যা , মনে পড়েছে।  দাদুই তো বলতো, বৌ প্রকৃতির মতো , যেমন আমরা প্রকৃতির মধ্যে বাঁচি , ঠিক তেমনি প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বাঁচি।  প্লিস, আমি কোনো ক্যাটাগরিতে পড়িনা , ফার্স্ট আমার বৌ নেই , তাও আমি বাঁচছি।  আর আমি মোটেও লড়াই করে বাঁচবো না।  তাহলে পড়াশুনা করে কি হবে , যদি না ট্যাক্টিকালি হ্যান্ডেল করতে পারি। নো ফাইট , জাস্ট নেগোশিয়েশন।  আমি যেমন তোমাদের জ্বালায় ডাইপারে সাথে আপোষ করে নিয়েছি।  থাক, তোমাদের মাথায় ঢুকবে না।  কিন্তু ফারদার। বলছি  কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ।  তোমাদের ঝগড়া তোমাদের মধ্যে রাখো , আর ফোকাস অন মি।  আমি কিন্তু ছাড়বো না , যদি আমার কিছু সমস্যা হয়ে।  এখন আমার পাইওনিয়ারের খাতার প্রথম কয়েক পাতাই লেখা হয়েছে।  ওখানে যদি এই ঝগড়া পার্মানেন্ট হয়ে যায় তখন কিন্তু তোমাদের কপালে দুঃখ আছে।  যা করো কর , আমায় ইনভল্ভ কোরো না।  এই বলে দিলাম।  


ডায়েরির আগের পাতা গুলো -----


No comments:

Post a Comment