Saturday, April 22, 2017

আমার প্রিয় চরিত্র



#আমার_প্রিয়_চরিত্র নিয়ে লেখা খুব কঠিন। কারণ প্রিয় তখনি হয়,  যখন তার প্রতিফলন নিজের জীবনে দেখা যায়।  আমার জীবনের মহাভারতে কোনো এক জনের প্রতিচ্ছবি নেই। ছায়াছবি বা গল্প আমার জীবনের  ডিসিশনকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে বহুবার।  কিন্তু সবথেকে বেশি যা করেছে তা অনুপ্রেরণা  দিয়েছে।  আমি সিরিজ অফ আনফর্চুনেট ইভেন্ট এর ভায়োলেট , ক্লাউস আর সানির মতো বার বার কাউন্ট ওলাফের থেকে পালাতে চেয়েছি কিন্তু সব সময় আমি কোনো না কোনো সমস্যায় ফেঁসে গেছি।  বার বার ভেঙে পড়েছি , হেরে গেছি , হারতে হারতে এমন হয়েছে যে কোনো কিছু এখন যখন করতে যাই, প্রথমবার আমি হেরেই যাবো এই জেনেই লড়তে যাই।  এই হার সহ্য করা যে কঠিন তা হয়তো সবাই জানে। কিন্তু এই হার সহ্য করে পরের লড়াইয়ে নামতে আমাকে তিন চরিত্র সবসময় সাহায্য করে এসেছে।  সৌরভ গাঙ্গুলি , স্টিভ জবস আর গুরুকান্ত দেশাই। আমার ব্রম্ভা , বিষ্ণু , মহেশ্বর।  তাদের নিয়েই আজ আমার এই লেখা। 

সারা জীবন যাকে শুধু পরিত্যাজ্য হতে হয়েছে সেই স্টিভ জবস আমার প্রথম  চরিত্র। অবিবাহিত মা তাকে মিশনে ছেড়ে গেছিলো।  মেকানিকের ঘরে পালিত স্টিভ একসময় বুঝতে পারে যে তথাগত শিক্ষা তার দ্বারা হবে না।  কলেজ ছেড়ে  যখন সে আরেক স্টিভের সাথে জুড়ে machintosh বার করে । তখনও সে আমার মনে প্রাণে জুড়ে জায়নি । কিন্তু যখন সেই  Apple কম্পানি তাকে বার করে দেয় আর সাথে সাথে এক এক করে সবাই তাকে ছেড়ে দেয়, আর তখন তার প্রচেষ্টা শুরু হয় তার বিশ্বাস , তার চিন্তাশীলতার প্রয়োজনীয়তার  প্রমান সংগ্রহের,  তখন আমি ধীরে মুগ্ধ হতে থাকি ।  প্যাশন যার জীবনীশক্তি , সাহস যার তরবারি , আর সৌন্দর্য্যের জন্য যার যুদ্ধ তাকে কে আটকাতে পারে। পিক্সার যখন ডিজনির রাতের ঘুম তাড়িয়ে দিলো , আপেল যখন ধসে পড়লো, নেক্সট যখন আগামীর বার্তা নিয়ে এলো তখন সবাই বুঝতে পারলো , "সৃজনশীলতাই একমাত্র সংগ্রহের বিষয়" . যে সৃষ্টি করতে পারে তাকে ধ্বংস করা যায় না।  সে ফিনিক্সের মতো তার নিজের ছাই থেকে জীবিত হয় আবার।  স্টিভ ফিরে আসে আপেলে।  নিয়ে আসে সেই সৃজনশীলতা। ফিরিয়ে আনে তার দৃঢ় বিশ্বাস , "A  পিপল ক্যান অনলি ওয়ার্ক উইথ A  পিপল "  সৃষ্টির উত্তাল প্রবাহে  টাচ স্ক্রিনের প্রসার হয়, মোবিলিটির চূড়ান্ত গতি আসে , মিউসিক এক নতুন রঙে শ্রোতার কানে বাজতে থাকে।  এক সৃষ্টি আরেক সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।  সেই সৃষ্টির প্রবাহে দশ আঙুলের বৈচিত্র মিশিয়ে এগিয়ে আসে হাজার নতুনত্ব। হিংসায় পরে যায় ভগবানও , শেষ অস্ত্র ক্যান্সার। শুকিয়ে যেতে থাকা সেই লোকটা তখনও বলে , "স্টে হাঙরি , স্টে ফুলিশ।" জীবনের শেষ বছরে জীবনীকারকে ডেকে পাঠায় আর নির্লজ্জ ভাবে সমস্ত সত্যি উগরে দিয়ে "নো রিগ্রেট" বাণী বিতরণ করে আমার ব্রম্ভা বিদায় নেয় এই পৃথিবীর বুক থেকে। 


"মুঝে  ভুলে তো নেহি?" কেউ ভুলে যাননি তো ? সেই কেহ কে লেঙ্গের শুরু এই বিজ্ঞাপন থেকে।  সব কিছু যখন শেষ।  সারা দেশ যখন সৌরভ গাঙ্গুলির নামে ছি ছিক্কার করছে। যাদের হাতে করে ধরে খেলা শিখিয়েছিলো সেই তারাই যখন তার বিরুদ্ধে , সেই সময় এই বিজ্ঞাপনটি আসে।  আমি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।  লজ্জা লেগেছিলো , যে এরকম ন্যাকা ন্যাকা ভিডিও কেউ করতে পারে।  বছর ঘুরতে না ঘুরতে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা পাঞ্চজন্যের যুদ্ধনাদ ছিল।  কোনো হার যে হার নয়।  সেটা আসলে হার , জয়মাল্য সেটা বোঝানোর ক্ষমতা সৌরভ গাঙ্গুলী দিয়ে গেছে।  জিতের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী , পরাজয়ের গ্লানি দীর্ঘস্থায়ী।  কিন্ত সেই গ্লানি আসলে  প্রস্তুতির রসদ।  সৌরভের টিশার্ট ওড়ানোর ছবি তখন খিল্লির পর্যায়ে চলে গেছিলো , 'ক্রিকেট ফুটবল এক না'. যা নিন্দুকেরা পরে মেনে নিয়েছিল যে খেলা আসলে খেলা।  আর সৌরভ সেই খেলার  মহারাজা। নাঃ আমি তার খেলার বিশ্লেষণ করতে বসিনি।  আমি শুধু সেই ক্রীড়াচরিত্র , যা খেলায় আপোষহীন  কৃষ্টির অভিনব প্রদর্শন ছিল তার কথা বলছি।  যে গোল মাঠের কৃষ্ণ হয়ে অর্জুনরুপী ভারতীয় দলকে বলেছিলো , "সর্বধর্ম্যাং পরিত্যাজ্য মামেকং শরনং ব্রজ , অহম ত্বম  সর্ব পাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যমি মা শুচঃ". সেই সেরা দল , যখন তার অস্তিত্ব কে দলের সংকট বলে মনে  করলো, এবং দল থেকে  বাদ দিলো , কতজন ভেবেছিলো যে ভুলে যাওয়া সেই আনফিট সৌরভ আবার ফিরে এসে সর্বসম্মতিক্রমে সেই বি সি সি আই এর চেয়ারম্যান হবে।  সৃষ্টি নয় , যা আছে তার উৎকৃষ্টতার প্রবর্তন যার প্রধান মাপকাঠি সেই সৌরভ গাঙ্গুলি আজ আমার বিষ্ণু। 


"যাহা লাথ মার সকতে থে ওহা লাথ মারি , জাহা আপনে বোলা সালাম দো , ওহা ম্যায়নে বলা সালাম লো " .. মনে আছে গুরু ভাই যখন শেষ হিয়ারিং এ বলল "পাবলিক সে কেয়া ডরনা, হাম খুদ পাবলিক হ্যায় " আর শেষ মেশ "তিশ সেকন্ড প্রফিট" . মানিরত্নমের অভাবনীয় ধীরুভাই আম্বানির
বায়োপিক আমার প্রতি লড়াইয়ের অঙ্গ।  বীররসে মজে গিয়ে সুইসাইডাল এটাক নয় , কাপুরুষের মতো পিছনে হটে , প্রস্তুতির সঙ্গে পুনঃআক্রমণ এবং বিজয় এই ছিল গুরুভাই এর  চরিত্র। অন্ধকারে ঝাঁপ , কিন্তু হাতে টর্চ নিয়ে।  উদ্যেশ্যে স্থির , ইনভেস্টর এর দরকার, তাই বিয়ে করতেও রাজি।  মানুষকে ঠকানো নয় , মানুষকে পাইয়ে দিতে সংগঠনের বিরুদ্ধে সমস্ত কিছু করতে প্রস্তুত এই চরিত্র।  কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই যতক্ষণ পর্যন্ত "মুনাফা" আছে।  অন্তত দশবার এই সিনেমা আমি দেখেছি।  আর প্রতিবার একটাই কথা ভেবেছি , ছলে বলে কৌশলে যেমন করে হোক আগে এগোতে হবে।  "এক" বাড়লে "দশ" বাড়বে সাথে।  শক্তির সাথে মৈত্রী কর , দুর্বল কে সঙ্গে নিয়ে চলো আর সময়ের অপেক্ষা করো।  "ম্যায় ভাগ রাহা হু , অর তুঝে ভি গোদি মে লেকে ভাগ রাহা হু , কষকে পাকারনা নেহিতো গির জায়েগা" । সময় এলে প্রতিপক্ষ যদি তোমার গুরুও হয় তাহলেও ছেড়ে কথা বোলো না।  দ্রোণাচার্যের মৃত্যুও অর্জুনের হাতে, উদ্যেশ্য, "সমষ্টির মুনাফা"। নটরাজের মতো প্রীতিবহুল , বীরভদ্রের মতো প্রচন্ড , শিবের মতো তাণ্ডববহুল আর শঙ্করের মতো মনুষত্ব সম্পন্ন এই চরিত্র আমার মহাদেব। 

এই ব্রম্ভা, বিষ্ণু মহেশ্বর ছাড়াও দুই চরিত্র আমার জীবনসঙ্গী।  এক নেসক্যাফির ঋষি রাওয়াত আর আইরন লেডির মার্গারেট থ্যাচার।  কিছুদিন আগে নেসক্যাফির এই অ্যাড বেরিয়েছিল এক সকালের রেডিও জকিকে  নিয়ে।  কেউ তাকে কল করে না।  একদিন সে বার করলো যে যেহেতু কেউ তাকে কল করে না , কারণ কেউ তাকে শোনে না এই ভোরবেলা।  যখন কেউ তাকে শোনে না, তাহলে কলার দের কথাও কেউ শুনবে না।  তাই "হো যাও শুরু , দিল হালকা করলো গুরু। কিঁউকি কোয়ি হমে শুনে নেহি রাহা হায়।" তখনি ফোন বেজে ওঠে আর সবাই নিজের সমস্ত ফ্রাস্ট্রেশন  ঝেড়ে দেয়  ফোনে।  সত্যি তো।  আমরা সবাই সেই "ঢিট RJ র " মতো কেন হতে পারিনা। যে হাতে পাওয়া ছুঁচ নিয়েও লড়াই করে যায় হাতির সাথে।  আর চোখে বিঁধিয়ে জিতে যায়।  একেই তো বলে আসল attitude.

আর এই চরিত্রের সাবলীলতা আসে তার চিন্তা থেকে , চিন্তাশক্তি বা চিন্তাশীলতা থেকে। সেই নিয়েই আইরন লেডী সিনেমায় মার্গারেট থ্যাচারকে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল , "হাউ ইউ আর ফিলিং" উত্তরে তিনি বলেছিলেন " “What? What am I ‘bound to be feeling?’ People don’t think anymore. They feel. ‘How are you feeling? No, I don’t feel comfortable. I’m sorry, we as a
group we’re feeling….’ One of the great problems of our age is that we are governed by people who care more about feelings than they do about thoughts and ideas. Thoughts and ideas. That interests me. Ask me what I’m thinking.” ডাক্তার বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করেছিল , "হোয়াট ইউ আর থিংকিং?" উত্তরে তিনি বলেছিলেন , ""Watch your thoughts, for they become words. Watch your words, for they become actions. Watch your actions, for they become...habits. Watch your habits, for they become your character. And watch your character, for it becomes your destiny! What we think we become. My father always said that, and I think I am fine."

এই সমস্ত চরিত্রের জন্য শেষ লাইন ইকবাল সিনেমা থেকে , "কুছ এয়সা করকে দিখা , খুদ খুশ হো জায়ে খুদা" .......


Links for the article
Iron lady Speech
https://www.youtube.com/watch?v=GSXYHqs0KPo
Gurukant Desai speech
https://www.youtube.com/watch?v=RvVcF9FHauo
Rishi Rawat ad
https://www.youtube.com/watch?v=0tBqrioLag4
Sourabh ganguly ad
https://www.youtube.com/watch?v=xFkJNlvtqYs
Steve Jobs biography
http://www.amazon.in/Steve-Jobs-Walter-Isaacson/dp/034914043X


No comments:

Post a Comment