অনেক
দিন পরে প্রতীক্ষিত অন্নপ্রাশন সমাধা হলো।
বয়সটা একটু required এজ থেকে বেশি হয়ে গেছে কিন্তু একেবারে প্রায়শ্চিত্ত টাইপ
হয়নি। সবই একসেপটেবল রেঞ্জ এ আছে। অনেক দিন ধরেই খুশুর পুশুর চলছে। কবে হবে , কোথায় হবে , কি করে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি অপেক্ষা করে যাচ্ছিলাম। কি যে ছাতার নিয়ম কানুন , আমার বিশেষ দেখে কাজ নেই। আমার শুধু একটাই উদ্যেশ্য এন্টারটেইনমেন্ট
, এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট। সবাই মিলে বেশ আলাদা করে পাত্তা দেবে। গিফট টিফট
পাবো। নতুন জায়গা ঘোরা হবে। আর কি চাই।
আগের
দিন রাতে গিয়ে মা একটা ঝোলা ভরে বেশ কিছু জিনিস কিনে নিয়ে এসেছিলো। আমি অনেকক্ষন ধরে টার্গেট করেছিলাম। উঁকি টুকি দিয়ে আঁচড়ে কামড়ে অনেক বার চেষ্টা করেছিলাম
প্যান্ডোরার বাক্স খুলতে। কিন্তু মা একেবারে
seasoned সেন্ট্রি হয়ে গেছে। আমি তো কোন ছাড়,
মশা পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি ওই প্লাস্টিকটার মধ্যে।
সকাল বেলা যখন খুললো, আমার মুখ তেতো হয়ে গেলো। এই জন্য আমি এতো পরিশ্রম করলাম? একটা থালা , পাঁচটা
ফল , একটা ধূপকাঠি আর দুটো কাপড় সাদা আর লাল।
মুখ শুকিয়ে গেলো আমার। শেষে লাল রঙের
ন্যাপি পড়াবে নাকি। প্রেস্টিজে পুরো গ্যামাক্সিন।
কিন্তু
না , থ্যাংক গড কোনোটাই আমার জন্য নয়। আমার
জন্য একটা সুন্দর প্যাক করা বাক্স দাদুর সুটকেস থেকে বেরোলো। ডালাটা খুলতে একটা ধুতি
পাঞ্জাবি বেরিয়ে এলো। কি সুন্দর। কিছুদিন আগেই বলতে শুনেছি যে অন্নপ্রাশন, পৈতে আর
বিয়ে নিয়মকানুন উনিশ বিশ। তার মানে সাড়ে উনিশ
অ্যাভারেজ করে বাবার বিয়ের সাজ আমাকে এবার পড়ানো হবে। ঠিই -ক আছে , প্র্যাকটিস করে নিতে কি অসুবিধা। ধুতি
পাঞ্জাবি। ধুতিতে আবার নাকি হাওয়া খেলে। সব ছেলেই ধুতি লুঙ্গিতে খুশি , কিন্তু আমাকে তো
সেই ডাইপার বন্দি করে নিয়ে যাবে। হা হতোস্মি। কোথায় হাওয়া কোথায় কি। যাই হোক লুকটা বেটার হবে। হতভাগ্যের প্লেটে কদমাও রসগোল্লা।
ও
ব্বাবা এতো সেই জড়ানো ধুতি না। এতো প্যান্ট
ধুতি, ইলাস্টিক দেওয়া । এই প্রত্যেক দিন
আন্ডারএস্টিমেট
আর ভালো লাগে না। পাঞ্জাবি টা বেশ সুন্দর। আমি দাদুকে দেখেছি পাঞ্জাবির নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি
পরে। সেমী ট্রান্সপারেন্ট পাঞ্জাবির ভেতর থেকে
সাদা গেঞ্জি ভালোই লাগে। আর আমার মাসল ও আছে। তাই বেশ মাচো স্যান্ডো ইত্যাদি লাগবে। কিন্তু সে ইচ্ছাতেও জল। আমার একটা ওয়ানসি আছে সাদা রঙের। সেটার ওপরেই দেখি ধপাস করে পরিয়ে দিলো। নরমালি অতিরিক্ত পরিচ্ছদ আমার বিশেষ ভালো লাগে না।
তাই উগ্র প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু "আজ কুছ হাটকে
করতে হ্যায়" ভেবে শান্ত ভাবেই পরে নিলাম। ধুতিটা না পরালে আয়নার সামনে নিয়ে যাবে না। তাই বুঝতে পারবো না কতটা হ্যানডু লাগছে। চুপ করে পা টা ছড়িয়ে বসে থাকলাম। প্রসেসটা এক্সপেডাইট
করানোর জন্য। কিন্তু একি। ধুতি তো হাঁটুর ওপর উঠে গেলো। উফফ এইটুকু সেন্স নেই। গ্রোথ ইস নট অলওয়েস গুড। এসো সব এম বিয়ের দল। দেখে যাও
আমার অবস্থা। এইটা হলো তোমাদের ইউস
কেস। আমার স্পেশাল দিনের ইউনিক এটায়ারের টোটাল ডিভাস্টেশন। কি হচ্ছে টা কি ? আমি বিরক্ত
মা আর দাদুর ওপর। মা বিরক্ত দাদুর ওপর। দাদু কাঁচুমাচু। কারণ নিজের ওপর বিরক্ত। শেষে , ' কি করে বুঝবো এতোটা লম্বা ছেলে হবে ?
' হাও ফানি। তাকধিরিঙে মেয়ে আর দশাসই জামাই মিলে কি মনোহর আইচ
বানাবে ? দাদুর কেমিস্ট্রি অনার্সের কোয়েশ্চেন পেপারটা নিয়ে বেশ প্রশ্ন আছে। আয়নার সামনে দাঁড় করতে সেই প্রশ্ন পুরো সন্দেহে দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি
ভেবেছিলাম , প্ল্যান বি ইউস হবে। কিন্তু হলো
না। মা সেই বিরক্ত অবস্থাতেই বাবা কে ফোন করলো
সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে। আর বাবা , যার কোনো
দিন কোনো কাজ থাকে না সে ফোনই তুললো না কাজের ফিকির দেখিয়ে। ব্যাস দো - দো - মা , একবার ওপরে ফাটল, একবার নিচে। মানে দাদুর ওপর চেঁচিয়ে, আমায় কোলে তুলে নিলো। আমার তখন কাঁচুমাচু অবস্থা। ফার্স্ট কোনো একটা নেমড সেলিব্রেশন। ইম্পরট্যান্ট রিচুয়াল। সারাজীবন যার ছবি থাকবে। সেটাকে এই ভাবে নষ্ট করতে
চলছে। পেট থেকে কষ্ট প্রথমে বুকে মুচড়ে উঠলো। ' মা তুমি আমার সাথে এমনি করতে পারলে ?' মুখ নিয়ে
তাকাতে , পাত্তাই দিলো না। ততক্ষনে বুক ছেড়ে
দুঃখ আইগ্লান্ড এ ধাক্কা মেরে জল টল বার করে 'ভ্যা' বেরিয়ে এলো। আর মা , ' যেমন বাপ্ তার তেমন ছেলে' বলে দাদুর হাতে
ট্রান্সফার। আমি থেমে গেলাম। মায়ের দেওয়া ছোট কাপড় মাথায় তুলে না রে ভাই , ইমপোর্টেড
ড্রেস যে আমার এক্সচেঞ্জ করার সাধ্য নাই।
ইটস
ওকে। সব কিছু অপমান গিলে নিলাম যখন সুন্দর
মন্দিরে গিয়ে হাজির হলাম। কি সুন্দর ঝকঝকে তকতকে মন্দির। এ দেশের মন্দির অল ইন ওয়ান। তাই বিশেষ সমস্যা নেহি। সব কিছু এক জায়গায় হয়। সত্যনারায়ণ ইন সেন্টারপ্লেস। কারণ সব কিছুই তার মাধ্যমে শুরু হয়। কিন্তু ও মা! একি! এ তো কালো সত্যনারায়ণ। সত্যনারায়ণ
তো জানতাম সাদা হয়। কালী ছাড়া কাউকে
তো কালো দেখিনি ? তবে এ কে? বাই দা ওয়ে , আমার অন্নপ্রাশন কিন্তু বাকিদের মতো এক গাদা
লোক ডেকে প্যান্ডেল খাটিয়ে হচ্ছে না। বাড়ির
সবাই বিদেশে। ইভেন বাবাও। তাই আমার ভাগ্যে মন্দিরের অন্নপ্রাশন। মা সমস্ত কিছু বাঙালি মতেই নিয়ে এসেছে। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে বুঝতে পারলাম নর্থ ইন্ডিয়ান
পুরোহিতের দ্বারা সাউথ ইন্ডিয়ান সত্যনারায়ণের সামনে আমার অন্নপ্রাশন সমাধা হবে। হু কেয়ার , আনটিল এন্ড আনলেস ব্যাপারটা হিন্দু আর
ইন্ডিয়ান। ওই বর্মার হিন্দুদের মালয়েশিয়ান
বীভৎস হিন্দুইজম ঠিক ডাইজেস্টেবলে হয় না আমার কাছে।
আমাদের
বাড়ি টা বেশ বড়। অনেকটা জায়গা। আমি সারা বাড়ি হামা দিয়ে বেড়াই, কিন্তু এই মন্দিরটা
যেন বিশাল। মা আমাকে যেখানে যেখানে নিয়ে গেছে , মানে বড়ো বড় জায়গায়। যেখানে অনেক কিছু পাওয়া যায় ব্র্যাকেটে মা কিছুই
কিনে দেয় না। সেখানে আমাকে একটা গাড়িতে চড়িয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। তাও আবার কি , সেই গাড়িতেই
সব জিনিস চাপিয়ে আমার মুভমেন্ট ন্যারো করে দেয়।
কিন্তু এটা গড়ের মাঠ , সাথে গাড়িও নেই , সাথে পরিষ্কার , সাথে চটিও পড়তে পারে
না লোকে। তাই টোটাল ফ্রিডম। কত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কত ভগবান বসে আছে। আমায় কোল থেকে নামিয়ে দিতে আমি একে একে সবার সাথে
কথা বলে আসলাম। প্রথমে কাপল দের রাধাকৃষ্ণ , শিব দূর্গা , রাম সীতা। তারপর আয়াপ্পা , হনুমান , লক্ষণ , পেরুমন , মুরগ্গা
সবাই কে হাই বলে আমি সবার সাথে কিছুক্ষন করে সময় কাটাছিলাম। শেষে নবগ্রহর সামনে এসে
কনফিউসড হয়ে বসেছিলাম। তখন সবাই হাও কিউট
, হাউ কিউট বলে যা এম্বাররাসিং সিচুয়েশন তৈরী করলো আমি আবার মায়ের কাছে ব্যাক করলাম।
এবার
আসল পুজো শুরু। ওই কালো সত্যনারায়নের সামনে
বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে সব কিছু সাজিয়ে বসেছিল ওই নর্থ ইন্ডিয়ান পুরুতটা। প্রচুর কিছু দুর্বোধ্য ভাষায় বলে চলেছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। মাঝে মাঝে এটা দাও, ওটা করো, মা আর দাদুকে কিছু
না কিছু বলে চলেছে আর ওরাও অদ্ভত অদ্ভত অঙ্গভঙ্গি করে চলেছে। আমি একবার বোঝানোর চেষ্টা
করলাম হাততালি দিতে হলে হাত দুটো দু দিকে ছড়িয়ে সোজা কন্টাক্ট করতে হয়। আর কন্টাক্ট এর সাথে সাথে সরিয়ে নিলে তবে আওয়াজ
হয়। তা না করে। দুটো হাত জুড়ে বসে আছে তো বসেই আছে। আই ওয়াস ফিলিং পিটি ফর দেম। মিস্টার সত্যনারায়ণ প্লিজ গিভ দেম সাম বুদ্ধি। তা সেই পুরুতটা বকে চলেছে আর আমিও টার্গেট করেছি
একটা মূর্তি কে। বেশ কিউট, আমার একটা শুঁড়ওয়ালা আপপু আছে। ঠিক তার মতো মাথা আর আমার মতো ভুঁড়ি। আর আমার থেকে
বেশ ছোটো। আমার যে কি ইচ্ছা করছিলো না ওর সাথে
খেলতে। কিন্তু মা একেবারে সাপের মতো জড়িয়ে
ধরে বসে আছে। কিচ্ছু করার জো নেই।
বেশ
কিছুক্ষন পরে সব কিছু শেষ হলে পুরুতটা কিছু একটা ইশারা করলে মা দাদুকে বললো পায়েসটা
খাওয়াতে। পায়েস ঠিক কি জিনিস জানিনা। তবে সব কিছুর শুরুই নাকি পায়েস দিয়ে। দাদু আমায় কোলে নিয়ে বাটির ঢাকা খুলতে একটু স্বস্তি
পেলাম। দুধভাত টাইপ কিছু একটা। কিন্তু কিরকম যেন একটা গন্ধ। মন যদিও আমার তখনও ওই আপপুর দিকে। দাদুর কাছেই আপপু। একটা ঝাঁপালেই পাবো। কিন্ত দাদু কি আর আমার মনোস্কামনা পূর্ণ করবে। বাতি থেকে ততক্ষনে এক চামচ মুখের কাছে চলে এসেছে। আমি মুখ খুলতেই চালান হয়ে গেলো। এ মা , কি মিষ্টি রে বাবা। আমি এখনো উত্তেজক খাওয়া পছন্দ করিনা। এতো খুব মিষ্টি , সাথে আবার কি সব গন্ধ। গা ঘুলিয়ে উঠে গা ঝাড়া দিতে গিয়ে দেখি দাদু বাঁধন
আলগা করেছে। আমি দিলাম এক লাফ। ব্যাস , আমি আর আপপু। দুজনে বেশ কিছুক্ষন কোলাকুলি করে তারপর মা আর দাদু
মাইল দুজনকে ছাড়িয়ে নিলো।
তার
পর আর বেশিক্ষন থাকিনি। সবাইকে বাই বলে আমরা
ব্যাক করলাম। আর আমি এখন লিখতে বসেছি আমার
অভিজ্ঞতা। যাইহোক, আজকের লেখার সাথে আমার অন্নপ্রাশনের
ছবিও দিলাম। তোমরা হাসতে পারো আমার খাটো ধুতি
নিয়ে। কিন্তু হ্যা ইনসাল্টিং ব্যাঁকা হাসি
হাসলে আমি ছবি ডিলিট করে দেব। জাস্ট একটু কসাস
করে দিলাম।
No comments:
Post a Comment