আমি শুধু শুনে যাচ্ছি। কোনো এক্সপ্রেশন না দিয়ে , Poker ফেস করে শুনে যাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে , বড় যত হচ্ছি তত ব্যাপারটা বেড়ে যাচ্ছে। যে পারছে, যা পারছে, যেমন ভাবে পারছে আমাকে তাদের মতো বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। চেষ্টা কিছু করছে না। শুধু মুখেন মারিতং জগৎ। আমি নাকি তাদের মতো। কানাকে কানা বলতে নেই খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই, তবু বলছি এই সমস্ত ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টওয়ালা হ্যাংলা মূর্খ গুলো আমাকে যখন তাদের মতো বলে তখন মনে হয় এক দিই কানের গোড়ায়। নেহাত এখন দিলে ওদের সুড়সুড়ি লাগবে , আর আহা বলে "সুড়সুড়িও যেন দিদির মতো দেয়। " বলে আমার মাথা গরম করবে তাই দিচ্ছি না।
সবথেকে এগিয়ে আছে বাবা আর মা। যবে থেকে
পৃথিবী ভেজাচ্ছি তবে থেকে একবার ' আধ্যান ঠিক আমার মতো ' বলে বলে আমার এফোর্ট গুলো
সব মাঠে মেরে দিচ্ছে। বাবা তো সেই দু মাস পর
থেকে বেপাত্তা। ফোনে ডায়লগ , 'খাঁচাটা কিন্তু
আমার মতো পুরো।' হাইলি পলিটিকাল কমেন্ট। মানে
যে জন্তুই ভেতরে থাকুক না কেন, সার্কাস কিন্তু 'ফেমাস' . মাও রায়বাঘিনী , 'উঃ রংটা
দেখেছো। তোমার ওই কালো সোনা , এ সোনায় খাদ মেশেনা ডায়লগ ছাড়ো। আমার ছেলে আমার মতো।'
রঙে কি এসে যায়। চূড়ান্ত রেসিস্ট কমেন্ট। বাবা আবার সেক্সিস্ট উত্তর , ' ছেলেদের রং আবার
কি?' অথচ মাঝে মাঝেই বলে ওঠে , 'রোদে দিয়ে দিয়ে কালো করে ফেলেছ।' দুজনেই হিপোক্রিট। বাবা তো আইফোনের ওপর থেকে দেখে তাই সব কিছুই আননেসেসারি
কিউট লাগে। কোথা থেকে আবার মাঝে মাঝে নিজের
ছোটবেলাকার ছবি তুলে এনে কম্পেয়ার করে। পাশাপাশি
রেখে আবার বিচার। বাবা মা দুজনারই হাতির মতো গড়ন আর হাতির মতো চোখ। ভুরু ওঠেনি যবে থেকে তবে থেকে শুরু করেছে 'চোখ দুটো
আমাদের মতো'। কয়েকদিন আগে শুনলাম বিশাল চিন্তিত , ' আমাদের থেকে চোখ গুলো এটলিস্ট বড়ো
হবে' . আরে গাধা গুলো গরুর মতো চোখ বড় করে কি হবে। গড়ন ও মোটেও তোমাদের মতো আমি করতে
দেবো না।
কয়েকদিন আগে আবার বিশাল ঝগড়া চলছিল। উত্তাল।
এ ওকে শব্দের বোমা ছুঁড়ছে , তো ওদিক থেকে পেটো। মাঝে একটা কথা কানে এলো , 'সেই জন্যই আধ্যান কে
মাঝে মাঝে সম্বিতের মতো লাগে।' সম্বিৎ আমার পাড়ার কাকু। মায়ের সাথে কাজ করে , বেঁটে , মোটা কালো। একদম পারফেক্ট কদাকার। মায়ের ওপর রাগ ঝাড়তে শেষে
এই কমেন্ট। জাস্ট ডিসগাস্টিং।
শুধু ইন্ডিভিজুয়াল আইডেন্টিটি নয়, বসে
বসে দুজনে প্যাটার্ন ম্যাচিং করে। সাথে আবার
আমার সো কল্ড গ্রেটার ফ্যামিলি 'এতে গন্ধে পুষ্পে ' করে। 'আমাদের বাড়ির মতো ' . বাবার দিক থেকে , 'মাথা ভরা
ঘন চুল , ঠিক আমাদের বাড়ির মতো। ' আমার বাবার দিকে সব পেটমোটা আর মায়ের দিকে সব খ্যাংরাকাঠি। কিন্তু সবার মাথায় তারকাঠির মতো কালো চুল। শুধু দাদুর মাথায় বিশাল টাক, সাথে সিল্কি চুল। ব্যাস আমি মায়ের বাড়ির মতো। আমার মাথা ভরা সিল্কি কালো চুল। দাদুর দাদার ঘন কালো চুল। পুরো টাগ অফ ওয়ার। কয়েকদিন চলার পর দু বাড়ি ছেড়ে দিলো। মা আবার কয়েকদিন
পর খুঁচিয়ে শুরু করলো। না না না না না। এতো আমার বাড়ির মতো। আঙ্গুল গুলো লম্বা লম্বা। বাবাও বললো না না না না এতো আমার বাড়ির মতো মাথাটা
কত বড় দেখেছো , অর্ডার দিয়ে হেলমেট বানাতে হবে।
শুধু ফিজিক্যাল এপেয়ারেন্স নয় আমার প্রতি
অঙ্গসঞ্চালন কারোর নামে লাগিয়ে দেয়। বসে বসে
বিশ্লেষণ করছি সিংহের ল্যাজটা ভাঙবো না সিংহটা টিভির দিকে ছুঁড়ে মেরে টিভি ভাঙবো। কমেন্টস এল , ' দেখেছো দাদুর মতো গম্ভীর ' . ঘুম
থেকে উঠে আমার এলাকা দেখে নিচ্ছি ঘুরে ঘুরে আর মা সমানে চেষ্টা করে যাচ্ছে এক জায়গায়
বসে খাওয়ানোর , বলে উঠলো , ' মাসির মতো ছটফটে' . মাও চেষ্টা করছে গান গেয়ে ঘুম পাড়ানোর
আমিও সুর সাধছি , বাবা বলে উঠলো , ' কাকা জ্যাঠার মতো গলা ' . পরে গিয়ে চিৎকার করছি
বাবার আওয়াজ , ' চ্যাঁচায় পুরো মায়ের মতো
' কোনো কমপ্লেক্স কাজে ভুল করছি , মানে ধরো বন্ধ দরজা খোলার চেষ্টা, মার সুযোগ , 'পুরো
বাবার মতো গাধা।' ডিম কলা মিক্সিতে পেস্ট করে
অখ্যাদ্য গোবর বানিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে , প্রচন্ড প্রতিবাদ করছি , ' কাকার মতো
খাওয়াতে এলার্জি ' বাবা ওদিক থেকে হাততালি দিচ্ছে , কয়েকদিন কপি করে আমি বোর হয়ে গেলাম
বাবা হলো না। বলে বসলো , ' পিসির মতো মুডি
' . আর পারছি না। কোনদিন হয়তো বলে বসবে ,
' কাকুর মতো হাগছি আর জেঠুর মতো মুতছি।' কোনো
ভরসা নেই এই আহাম্মকদের। কারণ কয়েকদিন আগেই বলেছে , 'মামার মতো বমি করি ' উফফ. আর পারিনা
এদের নিয়ে।
আসলে
কিছু না। বিরিয়ানি ভালো হলে সবাই বলে আমি তেল
এনেছি , আমি জায়ফল দিয়েছি , আমি ভাত সেদ্ধ করেছি , আমি মাংস মেরিনেট করেছি , কেউ কেউ
গ্যাস জ্বালানোর বাহবাও নেয়। আমি এখন টল ,
ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম , উইথ ভুবনভোলানো হাসি।
যে চায় তাকে প্রসাদ দিয়ে দি। তাই লাইন
দিতে হবে। দখল নিলে চলবে না। আমি মুক্ত এক
মুক্তো। গলায় পরে সুন্দর হতে পারো , বানাতে
পারবে না। এই রে , এই কমেন্টে আবার বাবা মা
বার খেয়ে বসো না। মানছি তোমরা প্রচুর এফোর্ট
দিয়েছো। কিন্তু সরি। আমি আমার মতো।
একটু প্রাক্টিক্যালি চিন্তা করো। অনেক
তো বড়ো হয়েছো। একটু বুঝমানও হও। চিনি তোমাদের , জল তোমাদের , লেবু তোমাদের , গ্লাস
তোমাদের , এমন কি চামচটা পর্যন্ত তোমাদের কিন্তু যা পরিবেশন হচ্ছে সেটার নাম শরবৎ। তাই বেশি বার খেয়ো না। ভালো বানিয়েছো বলে নাম কিনতে পারো। কিন্তু শরবত চিনির মতো হয় না , বা জলের মতো হয় না।
আমি আমার মতো। সেরা এবং বেস্ট।
আহা, বেশ, বেশ !!
ReplyDelete
ReplyDeleteসকলেই নিজের মতো নিজস্ব। বেশ ভালো লাগলো পড়ে। :)
Osadharon....
Delete