Saturday, December 30, 2017

নিউ ইয়ারের ঠিক আগে


আর কিছুক্ষন, তারপরেই বছর শেষ।  যাহ এই বছরটাও শেষ হয়ে গেলো।  কিছুই তো করলাম না।  যা যা শুরু করেছিলাম বছর শুরু হওয়ার সময়, সবই অর্ধেক শেষ করে রেখেছি।  কোনোটাই এচিভ করা হয় নি।  ভুঁড়ি কমেনি, গার্লফ্রেন্ড হয়নি , রবীন্দ্র রচনাবলী শেষ হয়নি , মাইনে বাড়েনি , নলেজ যে কে সেই , সেভিংস যতটা টার্গেট ছিল তা হয়নি , দিল্লি এখনো ঘোরা  হয়নি , এখনো ট্রাই গ্লিসারাইড হাই , দিনে এখনো ছটা সিগারেট , বাড়ির লোন এখনো শোধ হয়নি , উইকেন্ড এলেই মদ টানি  , চাকরি পাল্টানো হয়নি , প্রথম শেয়ার কেনা তো ছাড় ডিম্যাট একাউন্ট এখনো খোলা হয়নি , ফ্যামিলি ফাইন্যান্স এখনো ঠিক করে উঠতে পারিনি , সব কিছু অগোছালো হয়ে আছে , স্প্যানিশটা এখনো শেখা হয়নি , রোজ চারপাঁচখানা ফেসবুক শেয়ার না করলে ভাত হজম হয়না।  সব মিলিয়ে কিছুই করে উঠতে পারিনি।  ধুর ধুর।  সবাই বলে গোল সেটিং ইস ইম্পরট্যান্ট। কিন্তু গোল সেট করে সেটা তো এচিভ করতে হবে।  এদিকে বছর শেষ হতে চললো।  কিছুক্ষনের মধ্যেই চালু হবে হ্যাপি নিউ ইয়ার।  কিজন্য হ্যাপি।  বছর শেষ হয়েছে তাই।  বছর শেষ মানেই তো আরো একটু বুড়ো হয়ে গেলাম।  গ্লাস হাফ এম্পটি না হাফ ফুল।  হাফ ফুল তারা বলবে যারা কিছু করেছে।  আমি তো শালা কিছুই করিনি।  হ্যাঁ হাজার হাজার ফেসবুক পোস্ট লাইক করেছি , টুইটারে রিটুইট করছি , চুটিয়ে ৩-৪ মিনিটের ভিডিও দেখেছি , অন্যের পোস্ট এ কমেন্ট করেছি , কমেন্টের আবার রিপ্লাই করেছি , উত্তেজিত হয়ে ঝগড়া করেছি তাও ফেসবুকে , রেপ - সাম্প্রদায়িকতা - জাতিবাদ-ফেমিনিজম  এসব নিয়ে ভ্যাজাল বকেছি , আমার মতো দেশেরও কিছু হবে না ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেটাই প্রমান করার চেষ্টা করেছি , ননভেজ প্রমোট করেছি ভেজেদের কাছে  , সূর্য যখন মধ্যগগনে তখন অফিস গেছি আর চাঁদ যখন মধ্যগগনে তখন অফিস থেকে ফিরেছি , ফ্রেশার্স দের জ্ঞান দিয়েছি ( যেগুলো নিজের জীবনে কখনও কাজে লাগাইনি ) , ম্যানেজার দের  গালাগাল খেয়েছি ,  দেশের কি হবে সেই ভেবে রাতের ঘুম শেষ করেছি।  কাজের কাজ কিন্তু কিচ্ছু করিনি।  কালকে যখন নতুন বছর শুরু হবে আমি কি করবো - লেবুজল আর ডিস্পিরিন খেয়ে নেশা তাড়াবো।  আজ সারা রাত নাচানাচি , কাল হ্যাংওভার।  এই হ্যাংওভার চলবে সারা বছর।  কিন্তু নাহ ,  কিছু একটা করতে হবে। জীবন কি আর এরকম চলবে।  বয়স তো বাড়ছে।  কিন্তু সব ভালো জিনিস একসাথে করবো কি করে।  শিফট চেঞ্জ হতে থাকে , কখনো মর্নিং কখনো ডে কখনো নাইট।  নিয়ম করে এক্সারসাইজ করাটাই তো অসম্ভব।  আর নিয়ম করে করলেই তো তবে এক্সারসাইজের উপকারিতা। জীবনে সকালে উঠিনি , সকালের ঘুমটা সবথেকে সলিড ঘুম হয়।  রাতে জেগে থাকাটা সহজ , ঝাঁকের কৈ হওয়া আর কি।  প্রোমোশনের জন্য প্রচুর খাটতে হবে সাথে গ্যালন গ্যালন তেল কিনতে হবে।  ওই তেল কিনতে নানা ক্লাবে মদের পেছনে প্রচুর পয়সার অপচয়।  তাহলে ফ্যামিলি ফাইন্যান্স ঠিক থাকবে কি করে , আর ফাইন্যান্স মেন্টেন করতে কারপুল করতে হবে।  কারপুল করলে সময়ে আসা সময়ে যাওয়া চাই।  অথচ সময়ে ফেরত আসা ম্যানেজারের পছন্দ নয়।  প্রমোশানে প্রব্লেম।  ভিসিয়াস সার্কেল।  ম্যানেজার ফোঁকে বলেই সিগরেটটা ছাড়তে পারছি না। ছুটিগুলো জমেই যায় আর পচে যায়।  কিন্তু কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা শুধু মাত্র কাজের চাপে।  জানি মানুষের তৃতীয় হাত অজুহাত।  কিন্তু নিজের দীর্ঘসূত্রী অকর্মণ্যতা কিছু ভাবে তো ঢাকতে হবে।  প্রতিবার এই নিউ ইয়ার রিসোলিউশন একটা প্রচন্ড পিয়ার প্রেসার।  কেউ কেউ আবার মোটিভেশনের জন্য হোয়াটস্যাপ গ্রূপ বানিয়েছে।  সারা বছর চুপচাপ ছিল , এখন টুং টাং করে আস্তে আরম্ভ করেছে , দুটো ছবি পাশা পাশি - পয়লা জানুয়ারী - একত্রিশ ডিসেম্বর - বিফোর আফটার - ভুঁড়িওয়ালা - শুঁটকি , ডবল কোটেড “রিচ্ড ফাইন্যান্স গোল” , সেভেন্টিন এচিভমেন্ট ইন টোয়েন্টি সেভেন্টিন, থ্রি সিক্সটি ফাইভ ডেস উইদাউট এলকোহল , ফাইনালি লেফট স্মোকিং ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।  সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়া সবাই অন্যের বৌ বা গার্লফ্রেন্ড কে ট্যাগ করছে।  আমিও গাঁতোন খাচ্ছি।  গাঁতোন খাচ্ছি আর উদ্বুদ্ধ হচ্ছি।  প্রত্যেকবারই হই।  ইন্টারনেট এ টপ ট্রেন্ডিং নিউ ইয়ার রিসোলিউশন খুঁজে বার করি আর নিজের খেরোর খাতায় লিখে রাখি।  নিজের সাথে না মানালেও চলবে , ট্রেন্ডিং ইম্পরট্যান্ট।  হ্যাশট্যাগ গাঁজা_ছাড়বো ইত্যাদি আর কি।  কিন্তু এবার উদ্বুদ্ধ হচ্ছি , কিছু রিসোলিউশন না করার।  এবার একেবারে জিহাদ এগেনস্ট দা সোসাইটি। সবার থেকে আলাদা কিছু না করলে কেউ পাত্তাই দেয়না।   শুধু নিজের জন্য একটাই গোল সেট করবো যা হবে স্মার্ট গোল।  এস ফর স্পেসিফিক , এম ফর মেসরেবল , এ ফর এচিভবল , আর ফর রেলিভেন্ট , আর টি ফর টাইম বাউন্ড। কিন্তু গোলটা কি হবে।  আমার জীবনে যে কিছু হবে না সেটা আমি ভালো করে জানি। সেই ধোঁয়া হয়েই উড়ে যাবো পাগলা যগাইয়ের মতো। গোল সেট করে খামোখা জীবনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার কোনো মানে হয় না ।  গোল মানেই তো উদ্যেশ্য স্থির, আর উদ্যেশ্যের পেছনে দৌড়ানো।  তার থেকে সারপ্রাইস ভালো না ? সেই গোল সেট করা উচিত যা জীবনকে সৌন্দর্যময় করে তোলে।  তাই আমার গোল হলো , “আমি সারা বছর রোজ রাতে ন ঘন্টা ঘুমাবো” এক্কেবারে স্মার্ট গোল।  সব কিছু আছে।  নেই শুধু লোক হাসানো প্রমিসের চক্কর।  আমি জানি লোকে এতে অনেক ধরণের টিপ্পনি কাটবে।  কিন্তু তবু আমি বেকার হবো এটাই আমার এম্বিশান।  হ্যাপি নিউ ইয়ার।       


ঠিক আগে সিরিজ

Tuesday, December 19, 2017

9) গল্পগাছা - একটা রেপ হয়েছে



বিকালে আমাদের পাড়ার ঠেকে বসে আছি, সঙ্গে লেবু চা আর কলেজ বিড়ি।  হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো অদ্রীশ।  গল গল করে ঘামছে।  মুখ চোখ থমথমে।  এসেই , “রবিনদা একটু লেবু চা । চিনি বেশি ।” আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু দম  নিয়ে বলে উঠলো , “পাড়ায় রেপ হয়েছে।” আমরা অবাক।  সবার হাতে চায়ের গ্লাস থেমে গেলো ঠোঁটের কাছে এসে।  সন্দীপদার গ্লাস থামে নি , চুমুক দেওয়ার আগে ঠোঁট নড়লো , “বলে যা।” অদ্রীশ বলে চললো , ‘পুলিশ স্টেশনের সামনের চায়ের দোকানে সিগারেট কিনছিলাম । হঠাৎ কানে এলো লোকে বলাবলি করছে পুলিশ স্টেশনে নাকি এই মাত্র একটা রেপ কেস ফাইল হয়েছে । আমাদের পাড়ার কেউ। পুলিশ এখনই বেরোবে নাকি ধরপাকড় করতে । আমাদের ঠেকটাই তো ফেমাস । মনে হয় প্রথমে আমাদের ঠেকেই আসবে।’ 

‘চল চল বাড়ি যাই, বসে থেকে লাভ নেই।  ফালতু কারণে জেল হাজত। বেকসুরদের আগে জেলে পোরে। ‘ অম্বরীশ উঠে দাঁড়ালো , ‘রবীনদা আমার খাতায় লিখে নিয়ো , আমি চললাম,’ বলেই হাঁটা লাগালো।  সন্দীপদা নির্বিকার।  শৈবালের হাতে উঠে এসেছে মোবাইল।  টাইপ করছে , “এখুনি খবর পেলাম সারা দেশের আগুন আমাদের ছোট শহরের ছোট্ট লোকালয়ে লেগেছে।কতদিন আর নারীজাতি এই  বিকৃতমনা পুরুষদের নির্যাতন সইবে। “আমরা কজন ক্লাব” তোমার পাশে , তোমার সাথে আছে  রোমিতা।” 

“তুই কি করে জানলি মেয়েটির নাম রোমিতা?” “তুই কি জানতিস নির্ভয়া নাম নয় দিল্লির মেয়েটির। আন্দোলনের জন্য নাম লাগে। ” “তা বলে রোমিতা? ” “ তাপসী মালিক নামটা কি কাজ করেছিল ? তার থেকে সুচিত্রা বা তসলিমা থেকে টুকলে দেখবি হু হু করে ছড়িয়ে পড়বে। দেখ বত্রিশটা শেয়ার।“ 

আমি দেখলাম শৈবালের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার হয়ে চলেছে।  নিচে কমেন্টের ঝড়।  অদ্রীশের খবর ভুল নয়।  অনেকেই জানে খবরটা।  কিন্তু নাম কেউ জানতো না।  নাম জানার পর ফ্রেন্ডলিস্টে একের পর এক প্রোফাইল ফটো পাল্টে কালো হয়ে যাচ্ছে ।  আমরা বসে আছি।  একবার অদ্রীশ জিজ্ঞেস করলো , ‘তোরা কি উঠবি না । শৈবালদা , তুমি কি বলো ।’ শৈবালদার চা প্রায় শেষ , “ভাবছি এই রেপ করে লোকে কি পায় ? যদি যৌনসুখই উদ্যেশ্য থাকে, তাহলে তো রমণীর আসল রূপ রমনের পরেই বেরোয়।  এর থেকে তো হাতই ভালো।” 

চয়নের গার্লফ্রেন্ড এসে দাঁড়িয়েছে , ‘শুনেছিস খবরটা ।  মেয়েটির বয়স পাঁচ । শিশুদের নিয়ে এসব আর কতদিন চলবে বলতো । ’ চয়ন মোবাইলের থেকে চোখ না সরিয়ে বললো , “হ্যাশট্যাগ রোমিতা । চালু হয়ে গেছে । ” আমি বেশ কয়েকটা লেখালেখির গ্রূপে আছি।  খুব ধীরে ধীরে হলেও আসতে আসতে লোকে হ্যাশট্যাগ চালু করে দিয়েছে।  হুটোপাটিতে সবাই নিজের পুরানো লেখা দিচ্ছে।  প্রতিবাদী লেখা হ্যাশট্যাগ রিপোস্ট।  চয়নের গার্লফ্রেন্ড পাত্তা পাওয়ার জন্য এবার সোজাসুজি কথাচার্জ , “তোমরা  কবে থামবে শুনি ।” চয়ন অপ্রস্তুত ভাবে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে এবার বললো , “আমরা রেপ করেছি ?” “না করোনি । তবে প্রতিবাদ না করাটাও দোষকে ঢাকা  দেওয়ার আরেক পন্থা । সেটাও দোষ ।” শৈবাল  বলে উঠলো , ‘করছি তো । ফেসবুকে ঝড় দেখ ।’ 

সায়নী , চয়নের গার্লফ্রেন্ড শৈবালকে দু চক্ষে দেখতে পায়না ওর গাঁজা টানার অভ্যেস থেকে।  ওর উত্তরেও স্বাভাবিক ভাবেই কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে ফোন তুলে কল করলো , ‘জয়িতা দি । খবর তো এতক্ষনে শুনেই ফেলেছো । আমাদের কিছু একটা করা উচিত । নারী জাগরণ আমরা নামেই করি । আজ একটা সুযোগ এসেছে । চলো পথে নামি।’  জয়িতা অম্বরীশের দিদি।  অম্বরীশ যেমন ভিজে বেড়াল জয়িতাদি তেমনি ডাকাবুকো।  বছর দুয়েক আগে পাড়ায় নারী জাগরণ কমিটি খুলেছে।  নাম দিয়েছে “ফেসলিফ্ট” । ছোটোখাটো কাজ করে বটে।  কিন্তু এখনোও পর্যন্ত বড় কিছু সাড়া জাগাতে পারেনি।  বেশিরভাগটাই ফেসবুকে।  

সন্দীপদা বলে উঠলো , ‘কি  প্ল্যান সায়নী? ’ ‘কোনো প্ল্যান নেই সন্দীপদা । দোষীকে শাস্তি দেওয়াই উদ্যেশ্য । আর উদ্যেশ্যে স্থির থাকলে পথ আপনি বেরোবে । তুমিই বলো সন্দীপদা । আমার  যখন পাঁচ তোমার তো তখন পনেরো ছিল । ইচ্ছা জাগতো আমাকে দেখে ?’ সন্দীপদা অপ্রস্তুত।  ‘সায়নী সব প্রশ্ন সবাইকে করা যায়না’, চয়ন বলে ওঠে। ‘অথচ অত্যাচারিতের  বয়স নেই।  যদি সে হয় মেয়ে, তাইতো। ‘  হোয়াটস্যাপ এ টিং টিং করে মেসেজ আসতে সায়নী উঠে দাঁড়ায় , ‘আমি চলি । সন্দীপদা , প্ল্যান হলো থানা ঘেরাও । ’  

সায়নী চলে যেতে চয়ন বলে উঠলো , ‘সন্দীপদা কিছু মনে করো না ।’ ‘আরে না না । প্লেবয় ইমেজ ছিল বলে আজও কথা শুনতে হয় । বয়স বেড়েছে ইতিহাস তো পাল্টায় নি । মেয়েটা বড় হওয়ার আগে এরকম ডাইরেক্ট চার্জ গুলো কমে গেলে ভালো । চল , এখানে  বসে লাভ নেই । যাবি থানার ওখানে? ’ শৈবাল তখনও ফোনে লেগে , ‘ টাইপেই থাক না । সামনে গিয়ে পুলিশের মার খাবো কেন? আর গিয়েই বা করবে কি ? লিঞ্চ মব হলে একটা কথা । কিন্তু দোষী কি ধরা পড়েছে । শুধুই তো কমপ্লেন্ট লেখা হয়েছে ।’  অদ্রীশ বললো , ‘সুপ্রিয় থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । এই মাত্র মেসেজ করলো । দোষীদের নাকি ধরা হয়েছে । গাড়িতে করে পেছন দিক থেকে থানার মধ্যে ঢুকিয়েছে । লোক জমা হচ্ছে থানার সামনে । ’ আমি অবাক , ‘তুই তো এই কিছুক্ষন আগে খবর নিয়ে এলি । এর মধ্যে এতো কিছু হয়ে গেলো ? ’ ‘আমিও তো উড়ো খবর শুনে এসেছিলাম । সুপ্রিয় বলছে কাল রাতে নাকি কেসটা হয়েছে । এই দেখ ।’ 

সুপ্রিয়র সাথে অদ্রীশের চ্যাটে এইটুকু বোঝা গেলো পুলিশ খুব গোপনীয়তা অবলম্বন করছে।  মেয়েটি কে ? আর ছেলে গুলো কে? সেটা জানা যাচ্ছে না।  তবে এটা গ্যাংরেপ।  কাল রাতে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে কোনো এক হসপিটালে নিয়ে গেছে।  এই এখন একটা পুলিশের গাড়ি ঢুকেছে পেছন দিয়ে।  সবাই মনে করছে ছেলেগুলো ধরা পড়েছে।  

চয়ন উঠে দাঁড়ালো , ‘আমি একটু বাড়ি থেকে ঘুরে থানায় যাচ্ছি । সায়নী মেসেজ করেছিল । বারোটায় ওরা থানা ঘেরাও করবে । তোরা যেতে হয় চল । আমায় তো যেতেই হবে । ’ সকলে মিলে ঠিক করলাম মেয়েদের সাথে যোগ দেওয়া উচিত।  আমরা কজন চড়ুই পাখি থেকে চুড়ুইভাতি সবেতে আছি।  আমাদের ছোট্ট শহরে কখনো এরকম নোংরামো ধরা পড়েনি।  প্রায় সকলেই ডিটারমাইন্ড, পারলে ছিঁড়ে ফেলবো মালগুলোকে।  এই ওয়ান পার্সেন্ট চোনা পুরো পুরুষ জাতির বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।  

সোয়া বারোটা নাগাদ থানার সামনে হাজির হয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য।  মিডিয়া থেকে শুরু করে লোকাল পলিটিশিয়ান সবাই রাস্তায়।  দু চার মিনিট আগেই মেয়র এসেছিলো কিন্তু জয়িতার দল ঢুকতে দেয়নি তার গাড়িটাকে। ওরা থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।  অপেক্ষা করছে সায়ন্তনী মৈত্রের।  সায়ন্তনী মৈত্র কলকাতার নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রথম সারির নেত্রী।  ওনার উপস্থিতি পরশ পাথরের কাজ করে।  জয়িতা তাই প্রথমেই ওনাকে ফোন করেছিল। উনি আসার আগে থানার আশপাশ ফেস্টুনে ছেয়ে যেতে হবে।  পুরুষ জাতির বাপ্ বাপান্ত করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে হবে।  খবরের কাগজের ওপর লাল আলতা দিয়ে লেখা ‘রোমিতা নিষ্পাপ “ “পুরুষজাতি নিপাত যাক” “দোষীদের শাস্তি চাই” “ ধর্ষণকারীর জন্য জঙ্গল আইন ” “ কারাগার নয় , আমাদের নরম হাত” চারপাশে ছেয়ে গেছে।  কিন্তু কেউ থানায় ঢুকছে না।  থানার দরজা থেকে পাঁচিলের মধ্যে যে দূরত্ব তাতে দশটা পেটমোটা পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে , যারা কোনোদিন এতো লোক একসাথে  দেখেনি।  

আমি সাইড কাটিয়ে সায়নীর কাছে পৌঁছে ওকে জিজ্ঞেস করলাম , ‘দাবীগুলো নিয়ে চিৎকার করছিস না কেন ? আর ভেতরেই বা ঢুকেছিস না কেন ? ওসি তো দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছে । ’ সায়নী আমাকে সাইডে নিয়ে গেলো , ‘দেখ, সায়ন্তনী ম্যাম না আসলে এরা ভুলভাল বুঝিয়ে ছেড়ে দেবে। আমরা নভিস , আর এটা পলিটিক্স। ’  ‘তোরা যে বললি প্রতিবাদ করছিস।  পলিটিক্স কোথা থেকে এলো। ‘ ‘ এখন বোঝানোর সময় নেই।  তবে এটুকু বুঝে রাখ এই পাবলিসিটি আমাদের খুব দরকার।  মেয়েদের  উত্থান ফ্রিতে হবে না।  আমাদের টাকা চাই।  আর টাকা আসবে ফেমাস হলে।  এটাই সুযোগ। ‘ ‘মিডিয়া কি বলছে ?’ ‘ওদের আটকে রেখেছি । ভেতরে যেতে দিইনি । আপাতত লোক জড়ো করা উদ্যেশ্য।’ 

এর মধ্যে এসে পড়েছেন সায়ন্তনী মৈত্র।  জয়িতার দল তাকে রাস্তা করে দিলো থানার ভেতরে যাওয়ার জন্য।  আর মিডিয়াকেও ছেড়ে দেওয়া হলো তাকে ফলো করার জন্য।  ক্ষেপা কুকুরের মতো ক্যামেরা নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করতে করতে হঠাৎ থেমে যাওয়া সায়ন্তনীর দিকে তাক করে থমকে দাঁড়ালো ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা ।  সায়ন্তনী ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত তুলে থামতে বললেন সবাইকে।  হাতে মাইক নিয়ে বজ্রকণ্ঠে বললেন , ‘ নারী খেলার পুতুল নয় । যে নারী শিশু এবোরশন এর ছুড়ি কাঁচির ধার পেরিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে সে সাধারণ হতে পারে না । এই ভ্রষ্ট , অত্যাচারী , বিকৃত মনস্ক পুরুষের দল তাদের নোংরা ক্ষুধার পরিতৃপ্তি করতে চেয়েছিলো । আমরা তাদের ছেড়ে দেব না । দিতে পারিনা।  রোমিতা একটা নাম । সেটা আপনাদের যে কারো মেয়ে হতে পারতো । আমরা এর বদলা নেবো ।  আইনও নারী । তাই তার প্রথম সুযোগ । আগে আইনি মতে লড়বো । নাহলে রক্তের বদলে রক্ত । ভারত মাতার জয় । ’ 

জয়ধ্বনি চলতে থাকলো।  মাইক ছুড়ে দিয়ে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সায়ন্তনী দেবী ঢুকে গেলেন থানার ভেতরে।  পেছন পেছন উগ্রমূর্তি জয়িতা ভীষণ এক মুখভঙ্গি নিয়ে থানার ভেতরে অদৃশ্য হলো।  এর পরের আধঘন্টায় জয়ধ্বনি ,  মুণ্ডুপাত , সমবেত গান , রণহুঙ্কার চলতে লাগলো।  কি ভীষণ রূপ ধারণ করল এক শান্ত শহরের ছিমছাম থানা চত্বর।  কখন বন্ধুরা পাশে চলে এসেছে জানিনা।  শৈবাল বললো , ‘খুব লজ্জা করছে মাইরি । পুরুষ হয়ে । ’  সন্দীপদা বললো , ‘ এই লজ্জাতেই তো ওদের পাশে আছি । যখন ওরা পেশী চাইবে , এগিয়ে যাবো । এখন বুদ্ধিতে লড়তে দে । এতে ওরা অনেক আগে।’ অদ্রীশ একটু অসহিষ্ণু , ‘আমরা কেন দাঁড়িয়ে আছি । ঢুকলেই তো হয় । মব মারলে তো খুনের দোষ হয়না । আর রেপের একটাই শাস্তি মৃত্যু ।’ আমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম নারীশক্তির প্রদর্শন।  চন্ডীপাঠ হচ্ছিলো কানের কাছে।  এই সম্মিলিত শক্তির প্রদর্শন আমি কখনো দেখিনি।  মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম কমনীয় দুর্গার মহিষমর্দিনী রূপ।  

থানার ভেতর থেকে এক এক করে বেরিয়ে আসছে মিডিয়া, পেছনে সায়ন্তনী সাথে জয়িতা।  কিন্তু একী।  ক্যামেরা সব নিচে , মাইক নিচে , তার গোটাতে গোটাতে আসছে।  সায়ন্তনীর মুখ থমথমে।  জয়িতার মুখ পাংশু।  যেন ভয়ঙ্কর ফ্লাডলাইট মুখে মারার পর ধাঁদিয়ে যাওয়া চোখ।  কারো মুখে কোনো কথা নেই। সায়ন্তনীকে ভীড় ঠেলে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে গেলো তার সাঙ্গপাঙ্গরা।  সবাই অবাক।  সবাই তার মুখ থেকে “আক্রমণ” শুনতে চেয়েছিলো।  কিন্তু তিনি মুখে কুলুপ এঁটে গাড়িতে গিয়ে বসলেন ও গাড়ি ছেড়ে দিলো।  থতমত জনরাশিতে গুঞ্জনও উঠলো না।  ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো নিথর এক জনসমুদ্রের মাঝে জয়িতা মাইক হাতে তুলে নিলো , “আইন তার কাজ করছে। তাদের আমরা সময় দিলাম । আপনারা ফিরে যান । ” 

এবার গুঞ্জন থেকে চিৎকার শুরু হলো।  সবাই জানতে চায় কি হলো ভেতরে।  কি এমন তারা দেখেছে বা শুনেছে যার জন্য তাদের নেত্রী পরাজিতের মতো ব্যবহার করছে।  ঘুঁষ খেয়ে এলো নাকি , হাই প্রোফাইল কেস নাকি , পুরোটাই কি স্পুফ , হচ্ছেটা কি ? সবাই জয়িতাকে ছেঁকে ধরলে জয়িতা শুধু বলে উঠলো , ‘খবরটা ভুল । ফিরে যান । পরে জানতে পারবেন ।’ আমি অবাক।  আরো অবাক থানার দরজায় দাঁড়ানো ওসির ঠোঁটে লেগে থাকা মুচকি অবজ্ঞাপূর্ণ হাসির দিকে তাকিয়ে।  ভিড় পাতলা হতে আরম্ভ করলো।  সন্দীপদা সেই ভিড় ঠেলে একটা মিডিয়ার গাড়ির দিকে দৌড়ে গেলো।  আরে, ওই তো অনির্বান।  সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে।  সন্দীপদা ধরেছে।  

‘ভেতরে কি হলো বলতো।  সব ধাঁধাঁর মতো লাগছে। ‘  অনির্বান সিগারেট ধরিয়ে বললো , ‘ওটা মেয়ে নয় । ছেলে । দশ না পনেরো বছর । গ্যাংরেপ বটে তবে কিটি পার্টিতে । আর কি শুনবি ?’ ‘কি বলছিস রে ? ’ ‘আর কি বলবো । ফালতু টাইম নষ্ট করলি । ছেলেটা কাজ করতো ম্যাডামের বাড়িতে । কিটি পার্টিতে মদটা বেশি হয়ে গেছিলো । ছেলেটাকে বেঁধে পেছনে বিয়ার বোতল ঢুকিয়ে খালি করছিলো । রক্তারক্তি কান্ড । সিগারেটের চ্যাঁকা দিয়েছে ঠোঁটে।  ঝাঁটে আগুনও ধরিয়েছে । গায়ে পেচ্ছাপ করেছে । মালটা প্রথমে এনজয় করছিলো । ভাবতে পারেনি এদিকে গড়াবে। পেছনে যখন বেলন ঢোকায় তখন ল্যাংটো অবস্থাতেই পালানোর চেষ্টা করে । ওদের সিকিউরিটি তখন ধরে নার্সিং হোমে ভর্তি করে দিয়ে আসে। ’ ‘কেস কে করেছে ?’ ‘ ছেলেটার দাদা।  শালা প্রচুর পয়সা কামিয়ে নিলো মাইরি। ‘ ‘কেস তুলে নিয়েছে ?’ ‘তুলবে না ? এসব কেস কি টেকে নাকি । সিমেনের ছাপ দেখলে তবেই আইন রেপ বলে মানে । এতে কি দেখাবে ? ভায়োলেন্স ? প্রুফ করবে কে ? পয়সা চেয়েছে , বুদ্ধিমানের কাজ করেছে । ’ ‘তোরা কভার করবিনা ।’ ‘ভাই আমরা লাফটার চ্যালেঞ্জ নই । এই খবর চ্যানেলে দিয়ে ক্যারিয়ার খোয়াবে কে । পুরুষে রেপ করে , নিজে হয় না । আর ফালতু ওর লাইফটাও তো দেখতে হবে।  লোকে খিল্লি করেই মেরে ফেলবে। ’  আমি বললাম , ‘তাই নারী জাগরণ কমিটি কিছু বললো না ।’ অনির্বান একটা থুতু ফেলে বললো , ‘ওসব মাগি অনেক দেখা আছে । সবাই ফুটেজ চায় । মেয়েদের রেপ হলে পুরুষে এসে পাশে দাঁড়ায় আর মনে নেই সেকশান ৩৭৫ এ রেপ শব্দের বদলে সেক্সুয়াল এসাল্ট ঢোকাতে কি প্রতিবাদ না করেছিল ফেমিনিস্টরা । ভাই ওসব ছাড় । জিম কর । আর মেয়েদের থেকে দূরে থাক । ওদের ধারণা পুরুষ শুধু সেক্স চায় , সে যেভাবেই হোক । আর রেপ শুধু মেয়েদেরই হয় । খুব স্বার্থপরের জাত ভাই। ভগবান মাথা দিয়েছে ওদের আর শক্তি আমাদের। নিজেকে আর ওদের প্রটেক্ট কর , যে জন্যে আসা পৃথিবীতে , কিন্তু নিজে কেস খাসনা। ‘ 

ফাঁকা থানা চত্বরে আমরা চারজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনির্বান চলে গেছিলো অনেক্ষন।  শুধু ফেলে গেছিলো এমন কিছু কথা যা গিলতে পারছিলাম না।  দাঁড়িয়ে ছিলাম চুপচাপ - উইকার সেক্স হয়ে।   


গল্পগুলো

Saturday, December 9, 2017

41) আধ্যানের ডায়েরী - স্টিম খাওয়া



সর্দি জিনিসটা বেশ ভোগাচ্ছে।  মাঝে মাঝেই কথা নেই বার্তা নেই এসে হাজির।  জিনিসটা কি জিনিস আগে বুঝতাম না।  এখন খেয়ে দেখে বুঝেছি মা যে নুনজল ভেতরে ঢোকায় সেটাই সর্দি হয়ে বেরিয়ে আসে নাক দিয়ে।  কিন্তু বেরোলে বেশ লাগে।  বেশ মাথা হালকা হয়ে যায়।  কিন্তু যখন বেরোয় না তখন আমার প্রাণ অষ্টাগত।  কে যে বার করেছে এই রোগটা কে জানে।  আমি অনেক বার ভুগে এইটুকু বার করেছি যে কিছুতেই একে আটকানো যাবে না।  এ আসবেই।  যেকোনো কারণে সে আসবে।  

আগে যখন এক নাগাড়ে সর্দি হতো তখন মা বাবার মধ্যে ঝগড়া হতো।  বাবা তো ডিয়ার ফ্রেন্ড তাই মাঝে মাঝেই তুলে নিয়ে বলতো চল তোকে বাইরে ঘুরিয়ে আনি।  বাইরে গেলেই কত জায়গা।  পার্কিং লটে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।  গাড়ি যায় , গাড়ি আসে।  কত রং তাদের আর তাদের চাকা গুলোর গন্ধ কি সুন্দর।  যে গাড়ি এসে দাঁড়ায় সে গাড়ির চাকায় দাঁত বসাতে খুব ইচ্ছা করে।  কিন্তু বাবা পার্কিং লটে কিছুতেই চোখহারা করে না। ইচ্ছা করে ছুটে যাই লুটে নিয়ে চলে আসি।  কিন্তু ছুটে যাই বটে , ধরিও বটে।  কিন্তু হাতে আসে শুধু ধুলো।  তাইই একটু চেটে নিই।  বাবা আমাদের গাড়ি থেকে জলের বোতল বার করে হাত ধুইয়ে দেয় , বেশির ভাগ সময় হাত ধোয়ানোর চক্করে জামাও যায় ভিজে আর মা পেয়ে যায় কারণ।  

মায়ের ধারণা আমাকে টেডি করে রাখলে নাকি আমার সর্দি লাগবে না।  করেও রাখতো কিন্তু আমি তো বলী, দুর্বলের যেমন ঘুম হয় আমার তেমন ঘাম।  ঘেমে নেয়ে  কাপড় ভিজে যায়।  তখন বাবা খুঁজে পায় সর্দি লাগার কারণ।  

ডে কেয়ারে আমাদের মাঝে মাঝেই ওয়াটার গেম হয়।  সবাইকে নিয়ে গিয়ে একটা জলের ফোয়ারার সামনে ছেড়ে আসে।  আর আমরা জল নিয়ে খেলতে থাকি।  কি মজা যে হয়, কি আর বলবো।  সবাই মিলে এ ওর গায়ে জল ছুঁড়ে মারি আর গা ভেজাই।  আমি আবার সবকিছুতেই একটু বেশি এক্সপেরিমেন্টাল।  আমার এক্সপেরিমেন্টের সাবজেক্টের অভাবের জন্য নিজেই নিজের গিনিপিগ।  আমি নিজেই নিজেকে ভেজাই।  মা সবসময় আগে থেকে এই ওয়াটার স্পোর্টস এর খবর জানতে পারেনা, ধরতে পারে যখন ভেজা জুতো নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরি।  সপসপে জুতো খুলিয়ে মা বাবা দুজনেই কারণ খুঁজে পায় সর্দি লাগার।  

বাবার লাগে গরম আর মায়ের লাগে ঠান্ডা।  বাবা ঠান্ডাতেও ফ্যান চালিয়ে শোবে আর মা আমাকে গরমের মধ্যেও লেপচাপা দেবে।  হিটার চালিয়ে ঘর আগুন করে রাখে মা।  আর বাবাও ফ্যান চালিয়ে কাঁপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।  মাঝখান থেকে আমি কাটা পড়ি।  আমি তো হট।  তাই আমি ঘামি খুব।  কিন্তু মা চায় আমি লেপের তলায় থাকি। কিছুক্ষন থাকি , ভিজে চুপচুপ হয়ে হাপুচুপু খেয়ে লেপ থেকে বেরিয়ে এসে ঠান্ডা ফ্যানের হাওয়ায় ভিজে গা এলিয়ে কনকনে ঠান্ডা হয়ে যাই কিছুক্ষনের মধ্যে।  ব্যাস পরের দিন আমার সর্দি আর বাড়ি কুরুক্ষেত্র।  

এরকম হাজার হাজার কারণ আছে আমার ঠান্ডা লাগার।  মাঝে মাঝে দুজনেই বলে ওঠে , “শেষমেশ ডাস্ট এলার্জি হলো নাকি .”  এই ডাস্ট এলার্জির চক্করে মা কার্পেট ঘষে ঘষে সুতো তুলে দিচ্ছে।  কিন্তু আমার সর্দি আর সারছে না। কিছুদিন অন্তর অন্তরই ডাক্তারের কাছে ছুটছি আর ডাক্তার বলছে , “নো মোর মাঙ্কি জাম্পিং অন দা বেড. ” আই মিন , আর জলে খেলা নয়।  শুধু নাকে জল দাও আর স্টিম খাওয়াও।  

এই স্টিম খাওয়ানোটা এক অদ্ভুত ব্যাপার।  প্রথম দিন বুঝতেই পারিনি ব্যাপারটা কি হচ্ছে।  আমরা সবাই মিলে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম।  আমার আবার বাথরুমটা বেশ খেলার জায়গা।  আগেই বলেছি কমোটে জিনিস ফেলতে আমার বেশ লাগে। ফ্লাশ করতে করতে তো আমার তুরীয় দশা চলে আসে।  ঘোর লেগে যায়।  কিন্তু প্রথম যে দিন স্টিম খেলাম কেসটা একদম অন্যরকম হলো। প্রথমেই মা বাথটবের শাওয়ারটা  চালিয়ে দিলো।  আর পর্দা দিলো টেনে।  ওদিকে বাবা আমায় কোলে নিয়েই দরজা দিলো বন্ধ করে।  আমি গুবলেট পাকিয়ে গেলাম।  শাওয়ার চলছে অথচ স্নান  করছি না।  দরজা বন্ধ করে হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে আছি।  একিরে বাবা।  তার থেকে ঘরে গিয়ে খেলা করি।  না , দেখি বাবা মা চুপ করে কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছে।  ইতিমধ্যে মা আবার বেসিনের কল দিলো চালিয়ে। গরম জল বেরোচ্ছে আর আমরা হাঁ করে দেখছি।  কিছুক্ষনের মধ্যে দেখি বাথটাবের ওখান থেকে ভোগলে ভোগলে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।  আর এদিকে বেসিনের থেকেও তাই।  আমি গেলাম ঘাবড়ে।  ধীরে ধীরে ধোঁয়ায় ঘর ভরে গেলো।  আগে একবার এরকম হয়েছিল।  মা রান্নাঘরে এরকম কিছু একটা করতে গিয়ে সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিয়েছিলো।  আর আমি অনেক্ষন ধরে কেসেছিলাম।  মনে আছে আমার নিঃস্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো।  এবারও তেমন কিছু হতে চলেছে ভেবে বাবাকে বেশ কিছুক্ষন ধরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বোঝাচ্ছিলাম।  

কিন্ত কিছুক্ষন পর দেখি কেসটা অন্য।  যত ধোঁয়া ভরতে লাগলো তত আমার নাক খুলতে লাগলো।  বেশ কিছুক্ষন পর দেখি দুটো নাক দিয়েই নিঃস্বাস নিতে পারছি।  আর যে সর্দিগুলো নাকে গুটলি মেরে ছিল সেটা নরম হয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। কিন্ত একি ? আয়নায় তো আর আমাকে দেখতে পারছি না।  কেমন একটা ফ্যাকাসে মতো রং হয়ে গেছে আয়নার।  ওদিকে আমি ঘেমে যেতে আরম্ভ করলাম।  বাবা হঠাৎ হাত দিয়ে আয়নার ওপর হাত বোলাতেই আমার কাঁচুমাচু মুখ আয়নার মধ্যে থেকে দেখা যেতে লাগলো। আমিও করবো , কিন্তু নিচেই গরম জল।  বাবা এবার আমায় নিয়ে বাথটবের পর্দা খুলে শাওয়ার বন্ধ করে ঢুকে পড়লো বাথটাবের মধ্যে।  কি স্বাগতিক গরম এই জায়গাটা।  আমার চামড়া লাল হয়ে গেলো।  নাক থেকে একটা ঘাম টপ করে মুখে এসে পড়লো।  মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম ছেড়ে দে মা এবার।  কিন্তু মাও তো “আমার লালু “ বলে গল্ টিপে দিলো।  গা জ্বলে গেলো আমার এই আদিখ্যেতা দেখে।  

ধীরে ধীরে সব ঠান্ডা হয়ে গেলো। আমি তততক্ষনে লাল ঘেমো বাঁদর। মাঝে মাঝেই হাই তুলছি।  যে বাবা এতক্ষন বলছিল হাঁ করে স্টিম খা।  সেই বাবাও ভিজে জবজবে।  ঘাম এক্সচেঞ্জ করছি আমি আর বাবা। একটা তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে আমায় বাইরে নিয়ে আসা হলো।  আমি  সেদিন প্রমিস করেছিলাম আর যাবোনা কোনোদিনও।  কিন্ত এই ঘটনা দিনের পর দিন ঘটতে থাকলো।  আর আমি একই ভাবে সহ্য করে যেতে লাগলাম।  কিন্ত আজও বুঝতে পারিনা কেন এই অত্যাচার।         


আধ্যানের ডায়েরি