Tuesday, August 30, 2016

ছাড়তে হবে


সামনে পরীক্ষা, এবার সারাদিন ঘুরে বেড়ানো ছাড়তে হবে।  সামনে কলেজ ক্যাম্পাসিং , রাত জেগে পড়তে হবে, বিকেলের আড্ডাটা ছাড়তে হবে।    কলেজে ভুল ভাল কোম্পানি এসেছে , বাইরেই চেষ্টা করতে হবে।  কলেজের ওপর ভরসা করা ছাড়তে হবে।  কলেজ শেষ এবার চাকরি না পেলেই নয়।    পশ্চিমবঙ্গে তো চাকরি নেই, বেরোতে হবে।  রাজ্যের ওপর ভরসা করা ছাড়তে হবে।  চাকরি পেলাম শেষ মেশ।  এবার ট্রেনিং। এ তো আর কলেজের মতো টুকে পাশ নয়।  নাঃ এবার আর শেষ মুহূর্তের পড়াশোনা করা ছাড়তে হবে।  শহরটা মুম্বাই অফিসের কাছে বাড়ি পাওয়ার আশা ছাড়তে হবে।  ম্যানেজার রাট পর্যন্ত অফিসে বসে থাকে , রেটিং পেতে হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা ছাড়তে হবে।  reactive নয় proactive হলে তবেই লোকে চিনবে , একমনে এক পাশে বসে কাজ করা ছাড়তে হবে।  বিয়ে করতে হবে একা একা থাকা ছাড়তে হবে।  বিয়ের পয়সা কৈ, হয় অনসাইট নয় কোম্পানি ছাড়তে হবে।  বিয়ের আগেই অনসাইট , বিয়ের পরে বৌকে কিছুদিন ছাড়তে হবে।  বিয়ে হয়ে গেছে নিজের ইচ্ছাগুলো ছাড়তে হবে।  ক্লায়েন্ট এর সাথে ইংরেজি ছাড়া চলে না, আনন্দবাজার আর দেশ ছাড়তে হবে।  আমেরিকায় গাড়ি ছাড়া চলে না। সাইকেল চালানো স্কিল নিয়ে স্টিয়ারিং ধরে ভয় পাওয়া ছাড়তে হবে।  তিন তিন ড্রাইভিং টেস্ট এ ফেল , এবার না হলে বৌ ই শিখবে আমার গাড়ি চালানোর শখ ছাড়তে হবে।  শিক্ষিতা বৌ বাড়িতে বসে রান্না করবে , পাগল বৌ এর থেকে অফিস বৌ ভালো, বৌ কে কাজ করতে ছাড়তে হবে। প্রজেক্ট শেষ এবার এই শহর ছাড়তে হবে।  গিন্নি দেশে ঘুরতে যাবে , আমার যাওয়া হবে না, নতুন প্রজেক্ট , গিন্নিকে একই ছাড়তে হবে।  গিন্নির  অন্য শহরে অফিস এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছা ছাড়তে হবে।  প্রতি উইকেন্ড এ গিন্নির কাছে যেতে হবে , তাই উইকেন্ড এ বন্ধুদের পার্টি ছাড়তে হবে।  একা থেকেও খুশি থাকতে হবে রিলাক্স করা ছাড়তে হবে।  কাজে ডুবে থাকতে হবে।  বাড়ি থেকে ফোন করে নিত্য ঘ্যান ঘ্যান ফোন করাটাই ছাড়তে হবে।  এক কোম্পানি তে অনেক দিন হলো এবার অন্য কোম্পানি চাই , পুরানো কোম্পানি ছাড়তে হবে।  দু বছর চেষ্টা করেও যখন অন্য ভিসা হলো না তখন ভিসার আসা ছাড়তে হবে।  বয়স তো অনেক হলো সংসার বাড়াতে হবে দুজনা দু জায়গায় থাকা ছাড়তে হবে।  গিন্নির ট্রান্সফার সম্ভব নয় তাই আমাকেই আমার কমফোর্ট zone ছাড়তে হবে।  এবার বাবা হয়ে গেছি এবার আমার শখ আহ্লাদ ছাড়তে হবে। আমার ভিসা শেষ এবার তো এই দেশ ছাড়তে হবে।  গিন্নি বলে দিয়েছে আমি এখানেই থাকবো তাহলে বৌ বাচ্চা ছাড়তে হবে।  যাওয়ার দিন কচি হাত গুলো এগিয়ে এলো , কিন্তু এই ভয়ঙ্কর মায়া  ছাড়তে হবে। দেশে ফিরে কালচারাল শক।  যে কমফোর্ট এ ছিলাম তার আহ্লাদ ছাড়তে হবে।  লোকে জামা পাল্টানোর মতো কোম্পানি পাল্টাচ্ছে , আমি পাল্টালে ফিরতে পারবো না , তাই নতুন ভাবে ওপরে ওঠার ইচ্ছা ছাড়তে হবে।  মদ সিগারেটে ভুলে ছিলাম সব কিছু হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার এসে গায়ে লাফিয়ে পড়লো।  এবার দেখছি ওগুলোও ছাড়তে হবে।  নাহলে বাকি সব কিছু ছেড়ে কেটে পড়তে হবে।  ....

Saturday, August 27, 2016

অর্ণব ও অদিতি

এয়ারপোর্ট এ বসে আছে অর্ণব।
অদিতির লেট প্লেন এর অপেক্ষায়।
সকালের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে,
কফির কাপে সিপ দিতে দিতে,
এক মনে সে দেখে চলেছে যাত্রীদের।
নানা রং, নানা ভাষা, নানা পরিচ্ছদ।
কেউ সুন্দর, কেউ অতি সুন্দর।
বিচ্ছেদ, মিলনের এক রাগ বেজে চলেছে ,
সারা এয়ারপোর্ট ধরে।
যেদিন অদিতি গেছিল চলে তাকে ছেড়ে,
এই এয়ারপোর্ট এই তখন কি বিষাদের রাগ বেজেছিল,
মনে পরছে না অর্ণবের।
সামনের মহিলাটি তার পুরুষকে,
আলিঙ্গনচ্যুত করছে না অনেকক্ষণ।
অদিতির আলিঙ্গন পরছে না মনে অর্ণবের।
ব্লাক কফির তিক্ততা, জড়িয়ে ধরছে তাকে,
সে কি আনন্দ করবে, নাকি দেরী হচ্ছে হোক।
দুরত্ব যেন আরো দূর করে দেয় ইচ্ছাগুলোকে।
দায়িত্ব বয়ে নিয়ে যায় জীবন কে।
অদিতি ফিরে তাকায়নি চেক-ইন এ ঢোকার আগে।
অর্ণব কি তাকিয়ে থাকবে তার আসার পথের দিকে?
যে যায় তার সম্মুখ পানে গতি,
যে রয় পরে, তার সাথে শুধু স্মৃতি।
আর সে স্মৃতি যদি তিক্ত হয়।
অর্ণব শুধু তাকিয়ে থাকে লাল নিল সবুজের দিকে,
ভুলে যাওয়া হাসির , মিলিয়ে যাওয়ার দিকে,
নানা ভঙ্গিমার অভিব্যক্তি আর অব্যক্ত যন্ত্রণার দিকে।
এই সব, সময়ে সময়ে দিয়েছে অদিতি তাকে।
অর্ণব বসে থাকে, তাকিয়ে অদিতির রাস্তার দিকে। 

Saturday, August 20, 2016

ইরা ও সুশান্ত


গাড়ির ধোয়া মিলিয়ে গেল, শান্ত গোধুলির রাস্তায়,
কোমর  থেকে হাত নেমে গেল সুশান্তর, ভারী লাগছে কাঁধটা।
নিজের বিচারের নিস্পত্তি, বিনা প্রতিদ্বন্দিতায়,
অসহায়ের মত সহ্য করে নিল সুশান্তর ক্লান্ত শরীর।
জিতে গেল ইরা,
জিতে নিল স্বাধীনতা, আর জিতে নিল দুরত্ব।
ইরা সময় নিল না ভাবতে, আধা প্রমান, আধা কল্পিত অপমান,
এই ছিল সান্নিধ্যের উত্তাপের ক্রম নিস্পেষণ।
সুশান্ত বদলে যেতে পারে, কিন্তু পারে না বদলাতে,
এই তার অপরাধ, পরাজয়ের পেট্রল পোড়া ধোয়ায়,
হাঁটু গেড়ে বসে, ভাবনাকে বিদায় দেয় সুশান্ত।
প্রচেষ্টায় ঘাটতি ছিলো  না তার,
শুধু প্রচ্ছন্নতা ছিল না ইরার কাছে।
তাই পরাজয় কে আঁকড়ে ধরল সন্দেহর রশি।
এতদিন সুশান্ত একহাতে ধরেছিল তার শ্রষ্ঠা কে,
অন্য হাতে সাজাচ্ছিল তার বিস্তার কে,
শুধু পারেনি মেলাতে দুজনকে।
দুপাশের তীব্র আকর্ষণে যখন সে খোয়াতে বসেছে,
তার দুই হাত - ভবিষ্যত ও ভূত ,
সে বেছে নিয়েছে বর্তমানের হাসি খুশি অবস্থানকে।
নুয়ে পড়া কাঁধ থেকে ঝুলে পরা মাথা তুলে একবার আবার,
সামনের দিকে তাকায়  সুশান্ত,
তারপর শ্রান্তি ভেঙ্গে উঠে পরে, খোলে বন্ধ দরজা,
আরামে এলিয়ে দিয়ে শরীর, নিঃশব্দ নিঃশ্বাসে প্রস্রাব করে মুক্তির,
হালকা হাসি ঠোঁটের কনে ঠেলে বিস্তার করে বাঁধভাঙ্গা মনের।

Friday, August 12, 2016

নীল ও পারিজাত



দুটো হাসি মুখ , তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে,
নিস্পলক চোখে নীল, পারিজাত নীলের দিকে।
নিস্তব্ধ বেডরুম, নিস্তব্ধ নিঃশ্বাসে,
কালকের বিচ্ছেদের মিষ্টি ইতিহাসে।
নীলের মন ভরে আছে পারিজাতের পটু গৃহিনীর স্বাদ,
পারিজাতের সারা অঙ্গে, নীলের অনিমেষ আহ্লাদ।
একত্রে যুদ্ধ জয়, গড়ে তোলা বাড়ি থেকে সংসার,
কালকের ফাঁকা নীড়, একাকিত্ব নিঃস্ব আঁধার।
ছেড়ে যাবে পারিজাত, নিয়ে যাবে সকালের সুবাস,
ফিরে আসবার তাগিদে, ভুলবে ক্লান্তির নিঃশ্বাস।
পরে রবে নীল, গোছানো সংসারে,
অপেক্ষার তুলি হাতে, ইচ্ছার ক্যানভাসের ধারে।
ইচ্ছা কারো নেই, তবু আলাদা হতেই হবে ক্ষণেকের তরে,
উজ্জল আলোকবৃত্ত গড়িতে এ ঘরে।
ভবিষ্যত কালকেও আসবে, যার তরে প্রেমের আহুতি,
একত্র সঙ্গম পরে কালের ভ্রুকুটি।
পারিজাতের নরম স্পর্শ , সুবাসের ঘ্রাণে,
নীল নিরব অভিনন্দন দেয় বিজয় অভিযানে।
অনির্দিষ্ট ভবিষ্যত তবু বিজয়ের হাসি,
হোক না দূর তবু "শুধু তোমায় ভালোবাসি"
আবার আসবে নিরব নিরবিচ্ছিন্ন সময় একসাথে,
পারিজাত মিশবে নীল পাথারের  হাতে। 

Monday, August 8, 2016

পার্থ ও চিত্রা


চাবি খুলে ঘরে ঢুকলো পার্থ,
সোফায় বসে থাকা চিত্রা তাকালো মুখ তুলে ।
হাতের মোবাইলটা পাশে রেখে উঠে দাড়ালো সে,
"আজ তাড়াতাড়ি চলে এলে?"
যান্ত্রিক অভিব্যক্তি পার্থর মুখে।
দুখের সামনে হাসতে নেই,
দুখীর সামনে নেই কাঁদতে।
পার্থ অনেক দিন পর সাফল্যের মুখ দেখেছে।
চিঠিটা পাওয়ার পরই ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে।
ইচ্ছা ছিল , জড়িয়ে ধরবে চিত্রাকে,
বলবে , "জিতেছি - জিতেছি - জিতেছি শেষমেষ।"
কিন্তু দরজা খুলতেই এক বিষন্ন দমকা হাওয়া,
মুছে দিল খুশির হাসি।
এক অসফল প্রচেষ্টা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল তার উচ্ছাসের উদ্ভাস।
চিত্রার মুখে সেই অবাক যান্ত্রিক হাসি।
দুপুরের রান্নার গন্ধ এখনো যায়নি,
প্রাত্যহিকি প্রতিবর্ত ক্রিয়ার প্রতিফলন চিত্রার মুখে।
তারা দুজনাই করছে লড়াই,
জীবনের উপকরণ সংগ্রহের।
আজ অনেকদিন হলো, চিত্রার প্রচেষ্টার,
শুধু হার, শুধু পরাজয়, শুধু অপমানের চিত্রকল্প।
তবু থামেনি তার চেষ্টা।
একই কাহিনী পার্থর, তবু আজ সে বিজয়ী।
আজ সে প্রাণ ভরে চায় উৎসবে মাততে,
উল্লাসে ফেটে পড়তে, একই সাথে কাদতে ও হাসতে।
চিত্রা এগিয়ে আসছে,
কয়েক ক্ষণ ব্যবধান - শান্ত হবে চিত্রা পার্থর আলিঙ্গনে।
অসহায় হয়ে অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চিত্রার দিকে।
যদি স্পর্শে অনুভব করে ফেলে তার অন্তরের আনন্দের প্লাবন?
ভালবাসার সাফল্য সফলদের পরিধান।
বিফলের ভালবাসা শুধুই পরিচ্ছেদ।
এত খুশিতেও আত্মগ্লানি হয় পার্থর।
জড়িয়ে ধরে চিত্রাকে, বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস,
ছলছলে চোখে চিত্রার কালো চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে,
"তুমিও একদিন জিতবে।"

Wednesday, August 3, 2016

অনিক ও শ্রী

ফুটন্ত তেলের এক বিন্দু ছিটকে এসে পরে অনিকের হাতে,
আনমনে বলে ওঠে , "হলুদটা আগে দিলে আর ছিটকাতো না। "
থেমে যায় ক্ষণেকের জন্যে,
মনে পরে শ্রী এর হাত টা - গোলগাল সাদা নরম হাতটা।
নতুন রান্না শেখা হাত দুটি , তখন মাঝে মাঝেই
রং বেরঙের ফোসকায় ভরে থাকত।
অনিক শিখিয়েছিল আগে তেল এ হলুদ দিলে তেল ছিটকোয় না।
শুনত না সে, বলত "পিসিমা হওয়া ছাড়ো তো."
বার্নল আর বরফ জল নিয়ে ছুটোছুটি করত অনিক।
আঁকড়ে ধরা এক অসহায় যন্ত্রনায় ছটফট করত অনিক।
আর শ্রী তাকিয়ে থাকত মিষ্টি হাসি নিয়ে।
তার কাছে ফোস্কার যন্ত্রণা থেকে ,
অনিকের শিশুসুলভ প্রেম তার কাছে অনেক মধুর ছিল।
অনিক চাইতো না , শ্রী ছাড়তো না।
অনিক বলে উঠত , "সেদ্ধ ভাত খেয়ে থাকি বরং।"
শ্রী বলত, "সাধের স্বাদে প্রেমের বিষ মাখাতে নেই।"
শ্রী এর হাতের ফোস্কাগুলো মনে পরে অনিকের,
নিজের হাতের দিকে তাকায় ,
অভ্যাস হারিয়ে দক্ষতার ভুলচুকের চাপ চাপ দাগ,
সে দাগ যেন ছেড়ে যেতে চায় না অনিক কে,
সে যেন তার উচ্চাকাঙ্খার এক এক বেত্রাঘাত।
অনুপস্থিত শ্রী র অপ্রাসঙ্গিক অভিব্যক্তির ইচ্ছায় স্মৃতি বিস্মৃতির দোলাচলে ,
উল্টে দেয় মাছটিকে ওপিঠ করে.
ইচ্ছা তার এই ভাবেই বর্তমানকে বিকৃত করে ,
সুস্বাদু করে তুলবে ভবিষ্যতের কোনো এক অমোঘ দিনের ব্যঞ্জন,
গ্রাস হবে সে নিয়তির।