Friday, November 4, 2016

মা বকেছে

মা বকেছে।  খুব বকেছে।  এখন বুঝতে পারছি কোথায় এসে পড়েছি। মা কে কি বিচ্ছিরি দেখতে লাগছিলো যখন বকছিল। আমিও যখন চ্যাচাই তখন মনে হয় আমাকেও ওরকম দেখতে লাগে। ব্যাপারটা খুব সাধারণ। মানে অতি সাধারণ। সকালের পর থেকে আর দুধ খাইনি।  এতে খোঁচে যাবার কি যে আছে জানিনা বাবা।  একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।  আমার হামাগুড়ি দেবার দিন এগিয়ে আসছে তো তাই চেকলিস্ট বানাচ্ছিলাম।  সকাল থেকে দিদার কোল ছাড়িনি আর ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম।  কারণ আর কিছুই না ঘুরে ঘুরে আমার এলাকা দেখে নিচ্ছিলাম।  কোনটা ভাঙবো কোনটা ছুঁড়ে ফেলে দেবো , কোথায় ফেলে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি।  প্ল্যান না করে এগোলে বেশি ড্যামেজ করা সম্ভব নয়।  দু চার দিন ধরে যেখানে বসিয়ে দিচ্ছে সেখানের চার পাশ ছকে ফেলছি।  কিন্তু এখনো শর্ট টার্ম মেমোরি নিয়ে চলছি তাই বেশি ঘন্টা হয়ে গেলে ভুলে যাই।  তার ওপর এখনো লিখতে বা টাইপ করতে পারছি না।  তাই মনে রাখতে বার বার দেখতে হয়।  একটু একটু করে পোক্ত করতে হয় ডিটেলস গুলো।  চোখের মাপে বুঝতে হয় যে কোনটা আমার নাগালে আসবে কোনটা নয়।  কোনটা  হামাগুড়ির জন্যকোনটা হাঁটার জন্য সেই লিস্ট বানাতে হয়। কিছু লোক দেখে শেখে আর কিছু ঠেকে।  আমি ঠেকে শিখে সময় নষ্ট করার মতো উজবুক নই।  তাই বেশি কন্সেন্ট্রেশন লাগে এই হিসেব গুলো করতে।  সেটাই করছিলাম। যেই বসিয়ে দিচ্ছিলো আমি ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম আর কখনো মা কখনো দিদা তুলে নিয়ে ঘুরে আসছিলো।  আর আমি গম্ভীর হয়ে আমার চেকলিস্ট বানাচ্ছিলাম।  হঠাৎ জানিনা কি হলো মা খ্যাপা বাঘের মতো তেড়ে এলো।  ঘপাৎ করে বোতলটা মুখে চেপে ধরলো।  আমি তখন গভীর চিন্তায় মগ্ন এই ভেবে যে ল্যাপটপের ওপর শুয়ে পড়বো না নাল ফেলবো কারণ দুটোতেই মা আমায় আটকায় অথচ ল্যাপটপ আমার নাগালের বাইরে থাকে নাস্পেশালি যখন আমি হামাগুড়ি দেব।  এই গভীর চিন্তায় ছেদ দিয়ে মা হালুম করে তেড়ে এলো।  আমার সমস্ত যোগ বিয়োগ গুন্ ভাগ সমীকরণ বিশ্লেষনে জল ঢেলে কেঁচিয়ে দিলো।  ইনটলারবলে ক্রূয়েল্টি।  আমি দু বার নিপল টা জিভ দিয়ে দু গালে ঠেসে দিলাম। দেখলাম মা কিছুতেই ব্যাকফুটে যাচ্ছে না।  আমার ঘ্যান ঘ্যানও কাজ করছে না।  শেষমেশ পরিত্রাহি করে চিৎকার সবে শুরু করেছি কিনা মা ফেটে গেলো।  ওরে বাপরে।  আমি রীতিমতো ভেবড়ে গেলাম।   আবার কেমন ধারা রূপ। ছুটে বেড়াচ্ছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর চেয়েচিয়ে চলেছে।  দু তিনবার আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে অনেক কিছু আবোল তাবোল বকে গেলো। কিছুক্ষন থেমে দেখলো আমি ভোঁদার মতো তাকিয়ে আছি।  নো এক্সপ্রেশন।  বুঝলো ট্রান্সলেশন ঠিক হচ্ছে না।  তাই ঝাঁপিয়ে পড়লো দিদার ওপর।  ক্ষতবিক্ষত দিদা বেশ কিছুক্ষন লড়ে গেলো কিন্তু শেষমেশ হাল ছেড়ে , "তোর ছেলে তুই বোঝবলে হাত পা ছেড়ে আমায় নিয়ে বসে পড়লো।  এর মধ্যে বাবা মাঝখান থেকে ফোন করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতে সবথেকে বেশি ঝাড় খেয়ে গেলো।  বেচারা বাবাঝাড় খাওয়ার জন্যই মনে হয় জন্ম হয়েছে।  আমার থেকেও বেশি বোকা বোকা এবং অসহায় কিছু আওয়াজ বার করার পর বাবা যখন আসল ঘটনাটা জানতে পারলোতখন নিভু আগুনে ঘিয়ের মতো ফ্যাক করে হেসে ফেললো।  ব্যাস বাকিটা ইতিহাস।   

No comments:

Post a Comment