"You have successfully completed PMP exam" দেখে কি আনন্দই না হলো। চার ঘন্টার বিনা জল আর বিনা বাথরুমে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ধস্তাধস্তির পর যখন বিজয়ী বীর হয়ে বেরিয়ে এলাম তখন মনে হলো যেন "কি আমি হনু।" দাড়িয়ে দাড়িয়ে ল্যাজ দোলাচ্ছি , আর সবাই কে খবর দিচ্ছি। মানে অফিসের লোকজন। সবাই খুব খুশি। মানে আমি খুশি তাদের বলে কারণ আমার "দ্যাখ কেমন লাগে" ফোনের উত্তরে তাদের মেকি খুশির অভিব্যক্তি বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। "তুই ছেড়ে দে ভাই। .. তুম সে না হো পায়েগা" লোকগুলো গলা ফুলিয়ে "আমি জানতাম, তুই পারবি।" উফ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। just ধরে রাখতে পারছিলাম না।
অফিসের খোরাক শেষ করে আয়েশে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এবার পালা বাড়ির লোকেদের। শেষ ন মাস ধরে এই পরীক্ষার জন্য আমি গর্ভবতী। সবাই কে জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছি। যখন ইচ্ছা ফোন করেছি যখন ইচ্ছা ফোন রেখেছি। কেউ খুব একটা জিগ্গেস করেনি কি করছিস। শুধু কিছু একটা করছি এই আশায় কেউ বেশি খোচায়নি। মা মাঝে মাঝে বলে উঠত , "বাবু , ডিপ্রেশন এ যেন চলে যাস না।" একটা পরীক্ষা ফেল করলে কেউ ডিপ্রেশন - এ যায় ? এখন রেসাল্ট হাতে নিয়ে লিখতে বসে প্রচুর কপচাচ্ছি বটে তবে ফেল করলে সত্যি চলে যেতাম ডিপ্রেসন - এ। মা খুব ভালো করে জানে, কারণ আগের সমস্ত যুদ্ধের আগের ও পরের ঘ্যানঘ্যানানি মা ছাড়া আর বেশি কাকে সহ্য করতে হয়েছে।
ঘুম জড়ানো গলায় ফোন তুলে মা হ্যালো বলতে আমি প্রচন্ড উত্তেজিত খুশিতে "মা পাশ করেছি" বলে উঠলাম। লং ডিসটেন্স কল আর সাথে দুর্বল মেলিয়াস, ইনকাস , স্টেপিস কি বুঝলো জানিনা উত্তর এলো , "একটু ধর। আমি এখনো উঠিনি বিছানা ছেড়ে।" বেলুনটা চুপসে গেল। তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছু ঠাকুর দেবতা স্মরণ টরণ করে এবার উত্তর এলো, "হ্যা বল.." আমি চেষ্টা করলাম আবার উত্তেজনা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। পুরো হলো না। তবু বুকে স্বাস টেনে আবার বলতে যাব হঠাত টিং টং। "একটু ধর, কে এসছে।" আবার গ্যাদগ্যাদে হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কাজের লোকের আগমন। "বাবু একটু পরে ফোন কর। চা বানিয়ে তোর সাথে কথা বলছি।"
ফোন রেখে একটু ডাউন হয়ে গেলাম। মায়ের খেয়ালই নেই যে আমার আজকে পরীক্ষা ছিল। তারপর নিজেরই মনে পরে গেল , আমারই খেয়াল ছিল না মাকে বলার বা পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ নেওয়ার। শোধ বোধ। whattsapp খুলে বন্ধুদের গ্রুপ এ পোস্ট করলাম। উত্তর এলো , "এটা করে কি এমন বড় ইয়ে হলি।" কথাটা সত্যি। কাঁধের কাছে হাত দিয়ে দেখলাম ডানাটা নেই। পরের জন , "CONGRATULATION.... " দু তিনটে smiley. মনে হলো কেউ তো বুঝলো। কিন্তু তার পরের লাইনে লিখলো , "কিন্তু ও তো গু ঘাঁটা। ... ওপর থেকেও খিস্তি নিচের থেকেও খিস্তি।" ম্যানেজার হলে সত্যি দুপক্ষ থেকে খিস্তি খেতে হয় বটে। কিন্তু তা বলে কি। ..... আরেকজন দেখলাম facebook messenger এ পিং করলো ,"হ্যা রে, ডাম্প কোথায় পেলি।" সেই আবার whatsapp মেসেজ করলো , "ইঞ্জিনিয়ারিং পরে শেষমেষ ম্যানেজমেন্ট।" রাগ হলেও মজা লাগলো। ভাবলাম উত্তর দিই কিন্তু আরেকটা মেসেজ এলো , "ভাই পার্টি কবে দিচ্ছিস। .. স্কচ কিন্তু। " তারপরেই ঝর উঠলো , "না না। . ভদকা।" "ধুর ভদকা তো মেয়েরা খায়।" "ভাই PMP পাস করলে লোকে ছেলেবেলার Old Monk ভুলে যায়।" "এরকম খুশির খবরে বাংলা চাই ভাই .. বাংলা।" "ব্যাটা গন্ধকুমার তুই খা বাংলা। আমাদের জন্য তুই ভাই স্কচ নিয়ে আসিস।" "শুধু নেশা আর নেশা।.. যারা নেশা করে না তাদের জন্য কি?" "ভাই হারুর জন্য বিয়ার আনিস।" সব অন্য দিকে চলে গেল। আমি ভোদার মত দেখে গেলাম। ঝগড়া চলতে লাগলো কিছক্ষনের মধ্যে সবাই ভুলে গেল আসল তর্কের কারণটা কি।
মা মিস কল দিচ্ছে। গর্বে ফোলা বুক ততক্ষণে ঝুলে গেছে। মা কে ফোন করতে। " হ্যা বল এবার। .. এই কাজের লোকেদের জ্বালায় আর পারছি না। একটু চোখ সরালেই সব গন্ডগোল।" এরপর কিছুক্ষণ পিন্ডি চটকানো হলো। তারপর এখান ওখানের খবর। আমিও ভুলে গেলাম যে আমি কিছু বলতে চাইছি। দিব্যি খোশমেজাজে হাবিজাবি গল্প করতে করতে কিছুক্ষণ পর হঠাত মায়ের খেয়াল হলো , "তুই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলিস।" আমি বললাম, "ওই পরীক্ষা নিয়ে আর কি। " ততক্ষণে সব এনার্জি শেষ। ঘাম ঝরিয়ে পরীক্ষা পাশ করে যে ঘ্যাম হয়েছিল তার বিন্দু মাত্র অবশিষ্ট নেই। মা বলল , "হ্যা তোর ওই পরীক্ষা আর পড়া আর tension. অনেক তো হলো। এবার একটু বাচ্চা কাচ্চা নিয়েও তো চিন্তা করতে হবে না কি। বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে। এত পড়ে কি করবি? " "মা এটা চাকরিতে আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।" "আর তোর এই উন্নতির লোভ। আরে যা লেখা আছে ভাগ্যে তাই হবে। অত ambition থাকলে জীবন নষ্ট হয়। একটু ভালো করে সংসার কর আগে।"
হ্যা হু গা গু করে এখানেও কথা ঘুরে গেল।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম। তারপর নিজের গোপন ব্লগ খুলে লিখলাম, "আজ আমি PMP পাস করেছি। খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিশাল কিছু একটা হয়ে গেছি। খুব কঠিন ছিল পরীক্ষা। ভেবেছিলাম সবাই খুব ভালো বলবে। বলেওছে। কিন্তু নিজের লোকেদের কাছে এর মূল্য অত্যন্ত সাধারণ। ভুল আমারই। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল এ ঘুলিয়ে ফেলেছিলাম । চাকরিতে আমি ভেবেছিলাম একটা কিছু করে হয়ত কেয়াবাত কেয়াবাত পাব। কিন্তু তারা তো আমায় আমার উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে দেখে না। তাদের কাছে রোজগার চালু থাকলেই হলো। তাদের কাছে আমার সৌন্দর্য্য আমার সঙ্গ। আমি খুশি হলে, না বুঝেই তারা খুশি। কিন্তু খুশি আমার সাফল্য বা দুক্ষ আমার পরাজয়ে নয়। তাদের কাছে আমার জন্য কোনো মাপকাঠি নেই। তাই তাদের কিছু যায় আসে না। আর সত্যি তো আমি একটা ইঁট গেথে ভাবছি আমি বিশাল। কিন্তু আমার প্রিয়জনরা সেই ইঁট দেখে বুঝতেও পারবে না যে বাড়ি হয়ত সুন্দরও হতে পারে। তাদের কাছে "আমি" আমার সাফল্য নই। মোদ্দা কথা , নিজের লোকেদের কাছে বেশি ভাও খেলে এরকমই চুপসে যেতে হয়। "
অফিসের খোরাক শেষ করে আয়েশে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এবার পালা বাড়ির লোকেদের। শেষ ন মাস ধরে এই পরীক্ষার জন্য আমি গর্ভবতী। সবাই কে জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছি। যখন ইচ্ছা ফোন করেছি যখন ইচ্ছা ফোন রেখেছি। কেউ খুব একটা জিগ্গেস করেনি কি করছিস। শুধু কিছু একটা করছি এই আশায় কেউ বেশি খোচায়নি। মা মাঝে মাঝে বলে উঠত , "বাবু , ডিপ্রেশন এ যেন চলে যাস না।" একটা পরীক্ষা ফেল করলে কেউ ডিপ্রেশন - এ যায় ? এখন রেসাল্ট হাতে নিয়ে লিখতে বসে প্রচুর কপচাচ্ছি বটে তবে ফেল করলে সত্যি চলে যেতাম ডিপ্রেসন - এ। মা খুব ভালো করে জানে, কারণ আগের সমস্ত যুদ্ধের আগের ও পরের ঘ্যানঘ্যানানি মা ছাড়া আর বেশি কাকে সহ্য করতে হয়েছে।
ঘুম জড়ানো গলায় ফোন তুলে মা হ্যালো বলতে আমি প্রচন্ড উত্তেজিত খুশিতে "মা পাশ করেছি" বলে উঠলাম। লং ডিসটেন্স কল আর সাথে দুর্বল মেলিয়াস, ইনকাস , স্টেপিস কি বুঝলো জানিনা উত্তর এলো , "একটু ধর। আমি এখনো উঠিনি বিছানা ছেড়ে।" বেলুনটা চুপসে গেল। তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছু ঠাকুর দেবতা স্মরণ টরণ করে এবার উত্তর এলো, "হ্যা বল.." আমি চেষ্টা করলাম আবার উত্তেজনা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। পুরো হলো না। তবু বুকে স্বাস টেনে আবার বলতে যাব হঠাত টিং টং। "একটু ধর, কে এসছে।" আবার গ্যাদগ্যাদে হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কাজের লোকের আগমন। "বাবু একটু পরে ফোন কর। চা বানিয়ে তোর সাথে কথা বলছি।"
ফোন রেখে একটু ডাউন হয়ে গেলাম। মায়ের খেয়ালই নেই যে আমার আজকে পরীক্ষা ছিল। তারপর নিজেরই মনে পরে গেল , আমারই খেয়াল ছিল না মাকে বলার বা পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ নেওয়ার। শোধ বোধ। whattsapp খুলে বন্ধুদের গ্রুপ এ পোস্ট করলাম। উত্তর এলো , "এটা করে কি এমন বড় ইয়ে হলি।" কথাটা সত্যি। কাঁধের কাছে হাত দিয়ে দেখলাম ডানাটা নেই। পরের জন , "CONGRATULATION.... " দু তিনটে smiley. মনে হলো কেউ তো বুঝলো। কিন্তু তার পরের লাইনে লিখলো , "কিন্তু ও তো গু ঘাঁটা। ... ওপর থেকেও খিস্তি নিচের থেকেও খিস্তি।" ম্যানেজার হলে সত্যি দুপক্ষ থেকে খিস্তি খেতে হয় বটে। কিন্তু তা বলে কি। ..... আরেকজন দেখলাম facebook messenger এ পিং করলো ,"হ্যা রে, ডাম্প কোথায় পেলি।" সেই আবার whatsapp মেসেজ করলো , "ইঞ্জিনিয়ারিং পরে শেষমেষ ম্যানেজমেন্ট।" রাগ হলেও মজা লাগলো। ভাবলাম উত্তর দিই কিন্তু আরেকটা মেসেজ এলো , "ভাই পার্টি কবে দিচ্ছিস। .. স্কচ কিন্তু। " তারপরেই ঝর উঠলো , "না না। . ভদকা।" "ধুর ভদকা তো মেয়েরা খায়।" "ভাই PMP পাস করলে লোকে ছেলেবেলার Old Monk ভুলে যায়।" "এরকম খুশির খবরে বাংলা চাই ভাই .. বাংলা।" "ব্যাটা গন্ধকুমার তুই খা বাংলা। আমাদের জন্য তুই ভাই স্কচ নিয়ে আসিস।" "শুধু নেশা আর নেশা।.. যারা নেশা করে না তাদের জন্য কি?" "ভাই হারুর জন্য বিয়ার আনিস।" সব অন্য দিকে চলে গেল। আমি ভোদার মত দেখে গেলাম। ঝগড়া চলতে লাগলো কিছক্ষনের মধ্যে সবাই ভুলে গেল আসল তর্কের কারণটা কি।
মা মিস কল দিচ্ছে। গর্বে ফোলা বুক ততক্ষণে ঝুলে গেছে। মা কে ফোন করতে। " হ্যা বল এবার। .. এই কাজের লোকেদের জ্বালায় আর পারছি না। একটু চোখ সরালেই সব গন্ডগোল।" এরপর কিছুক্ষণ পিন্ডি চটকানো হলো। তারপর এখান ওখানের খবর। আমিও ভুলে গেলাম যে আমি কিছু বলতে চাইছি। দিব্যি খোশমেজাজে হাবিজাবি গল্প করতে করতে কিছুক্ষণ পর হঠাত মায়ের খেয়াল হলো , "তুই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলিস।" আমি বললাম, "ওই পরীক্ষা নিয়ে আর কি। " ততক্ষণে সব এনার্জি শেষ। ঘাম ঝরিয়ে পরীক্ষা পাশ করে যে ঘ্যাম হয়েছিল তার বিন্দু মাত্র অবশিষ্ট নেই। মা বলল , "হ্যা তোর ওই পরীক্ষা আর পড়া আর tension. অনেক তো হলো। এবার একটু বাচ্চা কাচ্চা নিয়েও তো চিন্তা করতে হবে না কি। বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে। এত পড়ে কি করবি? " "মা এটা চাকরিতে আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।" "আর তোর এই উন্নতির লোভ। আরে যা লেখা আছে ভাগ্যে তাই হবে। অত ambition থাকলে জীবন নষ্ট হয়। একটু ভালো করে সংসার কর আগে।"
হ্যা হু গা গু করে এখানেও কথা ঘুরে গেল।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম। তারপর নিজের গোপন ব্লগ খুলে লিখলাম, "আজ আমি PMP পাস করেছি। খুব খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিশাল কিছু একটা হয়ে গেছি। খুব কঠিন ছিল পরীক্ষা। ভেবেছিলাম সবাই খুব ভালো বলবে। বলেওছে। কিন্তু নিজের লোকেদের কাছে এর মূল্য অত্যন্ত সাধারণ। ভুল আমারই। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল এ ঘুলিয়ে ফেলেছিলাম । চাকরিতে আমি ভেবেছিলাম একটা কিছু করে হয়ত কেয়াবাত কেয়াবাত পাব। কিন্তু তারা তো আমায় আমার উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে দেখে না। তাদের কাছে রোজগার চালু থাকলেই হলো। তাদের কাছে আমার সৌন্দর্য্য আমার সঙ্গ। আমি খুশি হলে, না বুঝেই তারা খুশি। কিন্তু খুশি আমার সাফল্য বা দুক্ষ আমার পরাজয়ে নয়। তাদের কাছে আমার জন্য কোনো মাপকাঠি নেই। তাই তাদের কিছু যায় আসে না। আর সত্যি তো আমি একটা ইঁট গেথে ভাবছি আমি বিশাল। কিন্তু আমার প্রিয়জনরা সেই ইঁট দেখে বুঝতেও পারবে না যে বাড়ি হয়ত সুন্দরও হতে পারে। তাদের কাছে "আমি" আমার সাফল্য নই। মোদ্দা কথা , নিজের লোকেদের কাছে বেশি ভাও খেলে এরকমই চুপসে যেতে হয়। "
No comments:
Post a Comment