Friday, September 9, 2016

আধ্যানের ডায়েরী (4) - শোনো বাবা ও মা !!



"আমি নারী , তোমাদের অস্তিত্ব এক নিমিষে ধসিয়ে দিতে পারি" উগ্রচন্ডি মায়ের বক্ত্যব্যের উত্তরে বাবা বললো , "উঃ কবিতা আওড়াচ্ছ যে। ওই ছিপকলিটা দেখলে পরে তো ফ্লাট।" মোক্ষম জবাব। নিজ লিঙ্গ কি মাঝে মাঝে সাপোর্ট করে দিতে হয়।  কিন্তু মা তো মা,   "তোমাদের ওই মাসল কাজে কখন লাগবে? যত্তসব অশিক্ষিত মজুর শ্রেণী।"  বাবা আমার দিকে ঝুঁকে বললো, "কমরেড পিছু হোটো না।  এই নারী জাতি , নরকের দ্বার , স্বয়ং অর্জুন না ভীষ্ম বলে গেছে। " "উঃ কে বলেছে সেটাই জানে না আবার ফুটানি। খবরদার কিছু শুনবি না খোকন।  তুই আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হবি।  এই মাতাল দুশ্চরিত্র থেকে কিছু শিখবি না।" "আমি মাতাল হইনা, মদ্যপ মানেই মাতাল নয়।  আর তুমি যে বেতালের মতো আমার ঘাড়ে এতো বছর বসে আছো , তার থেকেই প্রফ হয় , সত্যে রাম আর কলিতে আমি।" "ওরে আমার রামচন্দ্র এলো রে। বলো এবার গ্যাস জ্বালিয়ে ওর মধ্যে ঢুকে যাই।"  "গ্যাস ছাড়া জীবনে কিছু বুঝলে। ওই তো দু চারটে খুন্তি নাড়া বিদ্যা, তাই নিয়ে এতো ডায়ালগ কোথা থেকে আসে।" "খুন্তি নাড়া বিদ্যা?? শোনো এখনো তোমার থেকে বেশি মাইনে পাই।" "ওরে আমার অভিমানের জয়াপ্রদা, আসলে তো পুরো ভোঁদা।" "ওটা প্রদা নয় , ভাদুড়ী।" "ওই হোলো। পয়সা তো দাউদ ইব্রাহিমও বেশি কামায়।" "তাও তো কামায়, তোমার মতো , ভুল শুধু ভুল বলে হেমন্তের রেকর্ড চালায় না। " "হেমন্তের হোক আর শরতের হোক।  ফেলিওর ইস দা পিলার অফ সাকসেস, বুঝলে।" "তাই বুঝি। ফেল করলে ইঞ্জিনীরিং পড়তে পড়তে পারতে।" "পারতাম না।  কি হতো তাতে।  এখন আমি সিনিয়র ভাইস চ্যান্সেলর অফ ড্যাশ ড্যাশ  হতে পারতাম।" "ড্যাশ ড্যাশ। .. বাব্বা, বালিশ চাপা দিয়ে ফিস ফিস করে বোলো। দেখবে খাট পর্যন্ত হাসতে হাসতে তোমায় উল্টে ফেলে দেবে। একটা প্রমোশন পাঁচ বছর ধরে পেন্ডিং আছে।  আর ভাইস চ্যান্সেলর হবেন।" "শোনো তোমার জন্য আটকে আছি।  বুঝলে। এই যে ডিম পেড়েছো তার জন্য কত কিছু সাক্রিফাইস করতে হয়েছে আমাকে।""

এইটা বাবা বলেই গিলোটিন এ মাথা ঢুকিয়ে ফেললো। পুরুষ জাতি সত্যি মাথামোটা। দাবার চালে যারা মন্ত্রী আর ঘোড়া নিয়ে খেলে তারা তো  এই সব সুযোগের  অপেক্ষা তাই থাকে। মায়ের চোখে জল।  যুদ্ধ জিতে নিতো  যদি একটু ধৈর্য্য ধরতো।  কিন্তু মা হলেও মেয়ে তো।  যেটা বাজি হারিয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন , "বাচ্চাটা কি শুধু আমার জন্য।" বাবা অপেক্ষা করছিলো মায়ের ব্যাকফুটে যাওয়ার জন্য , "তোমাদের মেয়েদেরই তো খেলনা প্রয়োজন। আমাদের খেলনা বাটির জীবন নয়।  রক্ত, মাংস , ঘাম পিন্ডি চটকে তবে রোজগার করতে হয়।  তোমাদের মতো মুখ দেখে মাইনে দেয় না।" ও এম জি , বাবা একি বলে।  আগুনে ঘি হয় , পুরো পেট্রল।

"কি মনে করো কি তোমরা পুরুষরা। দুটো অফিস করে উদ্ধার করে দিচ্ছ।  আমিও অফিস করি।  বাড়িতে এসে রান্না করি।  তোমার মতো ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাং তুলে টিভি দেখিনা।" "ওটা টিভি নয়।  বিবিসি আর সিএনএন মাঝে মাঝে ডিসকভারি। তোমার মতো প্যানপ্যান সিরিয়াল দেখে দুনিয়ার রাজ্যের প্যাঁচ শিখিনা।"  "আহা রে। বিবিসি আর সিএনএন এ তোমার প্রোডাকশন এর কোড শেখায় তো। " "আর তোমার সিরিয়াল এ রান্না।" "শোনো একদিন যখন আমি চলে যাবো তখন বুঝবে। পুরুষ মানুষ কখনো এক থাকতে পারে না।" "গিয়েই তো দেখেছিলে বাপের বাড়িতে,  কেমন বিন্দাস ছিলাম আমি। নারী মাত্রই ঝামেলার উৎস।  শুধু উৎস কেন মোহনাও বটে।" "ওটা থাকা বলে , রানিং কমেন্টারি শুনতে শুনতে পাগল হয়ে গেছিলাম , "ডানদিকে যাচ্ছি চার পা , তারপর বাঁদিকে তিন পা, কৈ চটি নেই তো। " "নুনের চামচ ভেঙে গেছে বাকি তিন সাইজের চামচ আছে , তার মধ্যে একটা হাতা , কোনটা দিয়ে ডাল তুলবো।" এগুলো তোমার প্রশ্ন ছিল।" "থাকবেই তো।  রান্নাঘর কখনো আমার ডিপার্টমেন্ট ছিল না।  তোমার কোনো কিছুর পাসওয়ার্ড মনে আছে? আমি কেটে পড়লে তো না খেতে পেয়ে মরবে।" "এখনও আমার বাবা বেঁচে আছে।" "যাও তাহলে বাবাকেই বিয়ে করো। যত্তসব মেয়েলি সেন্টিমেন্ট।"

"শোনো , এতো যে ফটফট করছ।  মেয়ে না থাকলে তো তোমাদের হাল বেহাল হতো। ব্যাটা তোমার মতো হয়েছে বলে গ্যাস খেয়ো না।  হয়েছে আমার পেটেই , মুরোদ থাকলে করে দেখিয়ো নিজের পেটে।" "তুমিও আমাকে ছাড়া করে দেখিয়ো "নি-জে-র পে-টে"" "আরেকটা বিয়ে করলেই হবে।" "আমারও উত্তর তাই। তোমরা বাচ্চা তৈরী করতে পারো বলে ভাবো তোমরা বিশাল কিছু।  তোমরা যত না কষ্ট শরীরে নাও তার থেকে বেশি কষ্ট আমরা মাথায় নিই। " "ছাই নাও।  ওসব টেনশন দেখিয়ে সিগারেট খাবার ছুঁতো। এই আমাদের পাওয়ার জন্যই তো এতো ল্যাং ল্যাং করে পেছনে ঘুরতে থাকো। " "ল্যাং ল্যাং কথাটা উইথ্ড্র করো। আমি তোমার পেছনে ঘুরিনি।" "আচ্ছা তাই নাকি।  সেই কনকনে ঠান্ডা , গনগনে গরম , ঝমঝমে বৃষ্টি তে কে দাঁড়িয়ে থাকতো। " "তার মানে তুমি কি আমাকে প্রেম করে দয়া করেছো। " "আলবাত করেছি।" "হ্যা তা করেছো , যেমন আমি তোমার মতো বুড়িকে বিয়ে করে তোমার কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে মুক্তি দিয়েছি।" "শোনো ঘ্যান ঘ্যান টা তোমার বাড়ি থেকে ছিল।  আমার বাবা এখনও আমাকে পুষতে পারবে।" "ঠিক ঠিক , তোমাকে পোষারই তো দরকার। ওয়াইল্ড এনিম্যাল। "

"শোনো জোর করে সামাজিকতার জন্য পদবি পরিবর্তন করিয়েছো বটে।  কিন্তু আমি তোমার ওপর নির্ভর নই।" "হ্যাঁ হ্যাঁ  জানা আছে। বলো দেখি ওয়ান প্লাস ওয়ান কত হয়।" "জানতাম এবার তোমার সোফায় বসে বসে তেলেভাজার জ্ঞান আমার ওপর পরীক্ষা করবে।" "আহা বলই , না।" "আমি তোমার ধান্দা জানিনা আর , দুই বললে বলবে দশ , দশ বললে বলবে দুই।" "তুমি তাহলে কি দুটোই বলছো।" "হ্যা বলছি তো। " "এইজন্যই মেয়েদের কাজে নিয়ে কোনো লাভ নেই।  মাথামোটাগুলো জানেই না প্লাস একটা কনক্যাটিনেশন অপারেটরও বটে।  তাই উত্তর হলো এগারো।" "দেখলে তো।  জোচ্চোরি তোমাদের রক্তে রক্তে। " "তোমাদের জন্যই তো আমরা জোচ্চোর। সাইড করে সুরুৎ করে টিকিট কেটে এনে এথিক্স এর গ্যাংরেপ কে করে।" "তোমরাই তো এগিয়ে দাও।"

আমি দেখলাম ঝগড়া বেড়েই চলেছে।  ট্যাকটিক্যাল বাবা আর বদরাগী মা।  দুটোই ভয়ানক, পলিটিশিয়ান আর আর্মির লড়াই।  কিন্তু দুজনের ঝগড়া শধু ফুটানি ছাড়া কিছু নয়।  আমি ছেলে , আমি মেয়ে এই চিৎকার করে চলেছে।  আমি দেখলাম মাহখানে না ঢুকলে এরা থামবে না। আমি আমার মনোলগ আরম্ভ করলাম , "শোনো মা , শোনো বাবা।  তোমরা পুরুষ বা মহিলা হতে পারো।  কিন্তু তোমরা কেউই শিশুর থেকে শক্তিশালী নও।  আমার অস্তিত্ব তোমাদের পূর্ণ করে।  তোমরা সফলতার ভিন্ন মাপকাঠিতে বিচার করলেও মানুষ হিসেবে তোমরা সফল আমার আগমনে। তোমরাই আমাকে বানিয়েছো , ঠিক যেমন কুমোরে মূর্তি গড়ে।  মূর্তি কিন্তু জাগ্রত হয় অধিষ্ঠানে , স্থানে। এক টানে চোখ যে আঁকে তাকে কিন্তু কেউ মনে রাখে না।  আমার কীর্তি তোমাদের সাফল্য দেবে। আমার পরাজয় তোমাদের মুখ থুবড়ে ফেলবে।  আমি ভবিষ্যৎ তোমরা কিন্তু ভূত।  যাদের লোকে মামদো , ব্রম্ভদোত্তি , মেছো ইত্যাদি নাম ঘৃণাসূচক আখ্যা দেবে।  তুমি পুরুষ বলে শক্তির গর্ব করো , তুমি নারী বলে শক্তি হিসেবে পূজিত হও।  কিন্ত আমি শুধু আমি বলে ভালোবাসা পাই।  আমি না আসলে তোমাদের অস্তিত্ব তোমরা নিজেরাই শেষ করতে।  আমি না থাকলেও তাই করবে।  তোমরা বিয়ে করেছো। কিন্তু আমি সংসার বানিয়েছি তোমাদের। তোমাদের পৌরুষ আর নারীত্বের আস্ফালন আমার অস্তিত্বের অবদানের জন্য।  জন্মমুহূর্তে কোটি কোটি জীবাণু , কীটাণুর সাথে লড়াই করে আমি তোমাদের দিয়েছি পিতৃত্ব মাতৃত্ব।  আমি হেরে গেলে , তোমরাও হেরে যেতে, হয়তো কিছুদিনের জন্য , হয়তো সারাজীবনের জন্য।  তোমরা খেলতে খেলতে আমায় সৃষ্টি করেছো , আর আমি যুদ্ধ করে তোমাদের নতুন পরিচয় সৃষ্টি করেছি। আমি তোমাদের এগিয়ে নিয়ে চলেছি।  মা তুমি বাবাকে , বাবা তুমি মা কে এগিয়ে নিয়ে যাও নি।  সাথে থেকেছো।  মানুষ হিসেবে আমি তোমাদের এগিয়ে দিয়েছি।  তোমরা মনে করো না তোমরা আমার জন্য, আমি তোমাদের জন্য।  আজ আমার আগমন তোমাদের অথর্ব ভবিষ্যতের জন্য, আর তোমাদের বেঁচে থাকা আমার সুঠাম ভবিষ্যতের জন্য।  তাই পুরুষ হওয়ার জন্য বা নারী হওয়ার জন্য গর্ব কোরো না।  বাবা বা মা হওয়ার জন্য করো। তোমরা একে অপরের পরিপূরক আর আমি yin আর yang এর পাত্র।  আমি সদ্য এসেছি অসীমের থেকে , তোমরা অসীমের অনেক কাছে এগিয়ে গেছো। তাই বৃথা তোমাদের এই আস্ফালন। .. বৃথা তোমাদের এই ঝগড়া।  তোমরা তুমি নও , তোমরা আমি। "

এক নিঃস্বাসে বলেই চলেছি বলেই চলেছি , খেয়ালই নেই কখন বাবা , মা চুপ করে গেছে। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।  বাবার মুখে প্রসন্ন হাসি , মায়ের মুখে আদুরে।  মা এসে কোলে তুলে নিয়ে চটকে দিলো আর বাবা বললো , "আরে দেখেছো ও ভাওয়েল এর সাথে কনসোনেন্ট বলেও শুরু করেছে।  আমি পরিষ্কার "ব" আর "ম" শুনলাম।" আমি দেখলাম মূর্খদের বোঝানো দায় তাই ফ্যাক করে হেসে মায়ের কোলে সেধিয়ে গেলাম। যা ইচ্ছা করুক, আমি তো জেনে গেছি আমি কি।















No comments:

Post a Comment