চার
মাস হয়ে গেলো। চা - আ - র মাস। একশো কুড়ি দিন। কত ঘন্টা কত মিনিট সেটাও শুনতে চাইলে অপেক্ষা কর
অপেক্ষা করতে হবে। বাবা বলেছে তাড়াতাড়ি না
বড় হতে। আমি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি। কচ্ছপের
মতো। অনেক দিন টিকতে হবে তো। খরগোশের মতো হাপিয়ে পড়লে চলবে। তাই আপাতত আমি হা
করে গিলছি আমার চারপাশে যা হচ্ছে সেইসব। অর্ধেক বুঝতে পারছি না, কিন্তু গিলছি। অনেক
কিছু নাকি অভ্যেস করতে হবে। আপাতত তাই আমি কন্সান্ট্রেট করছি আমার পায়ের আঙ্গুলগুলোর
ওপর। পা দুটো ধরে সামনের দিকে টেনে হাতের মতো আঙ্গুল গুলো ধরলেই কিরকম একটা সুড়সুড়ি
লাগে। বেশ মজা লাগে। ও হ্যা আমার এই এক নতুন ব্যামো আরম্ভ হয়েছে। সুড়সুড়ি আর কাতুকুতু।
কি জানি জামাটা টেনে যেই মা খুলে দেয় সারা শরীর হ্যা হ্যা হি হি হো হো করে ওঠে। আমি মুখ দিয়ে তারই প্রকাশ করলেই বাকি সবাই হেসে
ওঠে। আর লাফিয়ে পড়ে কাতুকুতু দেওয়ার জন্য। কেন বাপু , নিজেকে দাও না। নিজেকে কাতুকুতু দেওয়া যায়না কিন্তু সুড়সুড়ি তো
দেওয়া যায়। কিন্তু না। আমাকেই দিতে হবে। ভালো গিনিপিগ পেয়েছে একটা। বি টি ডাবলু গিনিপিগ ঠিক কিরকম দেখতে জানিনা। ওই শুনি , তাই উগলে দিই। বুঝতে পারি ট্রান্সলেশন ঠিক ঠাক করতে পারিনা। শুধু চিৎকারটা বেরোয়। ডিকশনারি যে কবে বেরোবে। জানিনা।
এই যত বড়ো বড়ো গর্ধব গুলো কাজের বদলে শুধু একরাশ ছাইপাশ লেখালেখি করে। একটা ডিকশনারি লেখ, বেবি ডিক্সনারি। আমার বাবাটাও একই জাতের। বসে বসে লেখে।
মাঝে মাঝে আমার কথা লেখে বটে কিন্তু তাও ফ্রেঞ্চ ট্রান্সলেশন হিব্রুতে করে। খুব একটা কাজের নয়। আমি শুনি, মা শোনায় , আমিও একটা ফোকলা দাঁতে হাসি
দিই। ব্যাস আমার কাজ কমপ্লিট। ও হ্যা, আমার মনে হয় দাঁত বেরোচ্ছে। বাবার উক্তি
তাই নাকি নাল পড়ছে। এই নালটা বেশ ইরিটেটিং। একটু সামনের দিকে ঝুঁকলেই টপ করে পরে যাচ্ছে। এইতো কালকেই মায়ের ল্যাপটপের ওপর টপ করে ফেলে দিয়েছি
নাল। ব্যাস মা কোথা থেকে বাদুড়ের মতো উড়ে এসে
চাইনিসে কি সব বলে উঠলো। বুঝলাম বকছে। পান
খাইনা , গুটখা খাইনা তাহলে এতো যে কেন নাল বেরোচ্ছে জানিনা। না খেয়েই যখন থুতু ফেলার বদনাম তাহলে এবার থেকে
ভাবছি ওসব খাওয়াই শুরু করবো। তাহলে এটলিস্ট
লাল বা অন্য রঙের থুতু বেরোবে। এই ট্রান্সপারেন্ট
নাল টা কিরকম এক ঘেঁয়ে। বাবা হয়তো হয়তো ঠিকই
বলছে। দাঁত মনে হয় সত্যি বেরোচ্ছে। নাহলে মাড়িগুলো
এতো সুরসুর করে কেন। সব সময় কিছু একটা চিবোনোর
জন্য মন আকুলি বিকুলি করছে। আর মোটে দু মাস। তারপরেই সলিড খাবার। আর এই ভেজাল দুধ খেতে হবে না। উফ ভাবলেই শিহরণ। আর শিহরণ মানেই কাতুকুতু , আর কাতুকুতু মানেই আমি
জোকার আর গিনিপিগ। থাক , আর ভাবব না। আর না
ভেবেই বা যাই কোথায়। কত কিছু ভাবনা আমার । বাবাকে কি করে যে মায়ের মোবাইল থেকে বার করবো কিছুতেই
তার কুলকিনারা পাচ্ছি না। এই মেয়েজাতটাই এরকম। কিছু হলেই বাবাদের মোবাইলে ঢুকিয়ে বন্দি করে দেয়। বাবার জেলখানাটা সবুজ তাতে সাদা আলো পরে পুরো গ্রিন
রেভোলুশন হয়ে যায়। ওই সবুজ আলোয় বাবাকে হাল্ক
এর মতো দেখতে লাগে। তাই হা করে দেখতে থাকি।
মা মোবাইল লুকোনোর জন্যে প্রচুর চেষ্টা করে বটে কিন্তু আমিও আমি, ওসব খেলো চালাকি
আমার মতো মর্ডার্ন মানুষের কাছে চলবে না। আমার
রাডার এ সব ধরা পরে যায়। দেখাটা আমার ফেবরেট টাইমপাস্। আগে শুধু শুয়ে শুয়ে দেখতাম। যে আমার ওপর ঝুঁকে পড়তো তাকেই দেখতাম। এখন অনেক বেটার। সোজা দাঁড়িয়ে পড়ি। আমার হরাইজন একটু বেড়ে যায়। অনেক কিছু ভুলভাল জিনিস দেখতে থাকি। দাড়াও দাড়াও একটু বেশি ভেবে ফেলনা যেন। দাঁড়াচ্ছি মানে দুদিন বাদে হাঁটবো তা নয়। অতো সহজে হামা দেওয়ার গ্ল্যামারটা ছাড়তে পারছি না। আর অতো তাড়াতাড়ি বড়ও হচ্ছি না। এই একটু নাকের সামনে গাজর দোলাচ্ছি আর কি। সেই নিয়ে আবার মায়ের চিন্তা। আমি নাকি ওল্টাচ্ছিনা। এর পুরো দোষ বাবার। কেন ওল্টাবো।
বাবাই তো বলেছে , আস্তে বড়ো হ , আমিও কচ্ছপকে ফলো করছি। আস্তে আস্তে ওল্টাবো। সেই তো দুদিন বাদে লোকে বলবে , পড়তে বস। তার থেকে একটু দেরি করে না হয় বসি। যাইহোক অনেক ভাট মেরেছি। মোদ্দা কথা হলো। চার মাস ডান।
পাঁচ মাসের কাজ শুরু। আপাতত এটুকু থাক।
No comments:
Post a Comment